নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

বাড়ির বিদ্যুতে রাস্তায় আলো জ্বালান তারা!

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আমবাড়িয়া গ্রাম। পদ্মার তীরের পিছিয়ে পড়া বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎসহ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করেছে সরকার। তবে এই এলাকায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ইচ্ছা’। বিদ্যুৎ থাকলেও রাস্তার অন্ধকার দূর করতে গ্রামটির প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গ্রামীণ সড়কে বাতি লাগিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।

২০০৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা এলাকার উন্নয়নে ‘ইচ্ছা’ নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা সহায়ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন, গ্রামের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে নিয়ে কাজ করছেন তারা। প্রায় ১৬ বছর ধরে সামাজিক আন্দোলনে অবদান রেখে চলেছেন বলে দাবি করেন সংগঠনের কর্ণধার আসলাম বিশ্বাস।

জানা যায়, বিদ্যুতের খুঁটির আশপাশে যেসব বসতবাড়ি রয়েছে তাদের প্রথমে রাজি করান তারা। স্বেচ্ছায় রাস্তায় আলো দেওয়ার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ওই বাড়ি থেকে নেওয়া হয়। তারপর সংযোগ তার ও বাল্ব এবং সেই সঙ্গে সেন্সরসহ যাবতীয় খরচ করে সংগঠন। এতে রাস্তায় চলাচলের সুবিধা হয় এলাকাবাসীর। সন্ধ্যা থেকে সারারাত মানুষ চলাচল করলেই জ্বলে উঠে আলো।

সংগঠনটির সদস্য সোহান জানান, গ্রাম জুড়ে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের প্রায় ১০২টি খুঁটি রয়েছে। জনবসতি ও জনগুরুত্বপূর্ণ ৯০টি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটিতে বৈদ্যুতিক বাল্ব দেওয়া হবে। গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৫৬টি স্থানে আলোর সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হবে। প্রতি আলোর পেছনে একটি করে সেন্সর সুইচ লাগানো আছে। যাতে আলোগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলতে ও নিভতে পারে।

এই গ্রামের বৃদ্ধা আনোয়ারা বলেন, ‘রাস্তার কারেন্টের খুঁটিতে চাঁদের ল্যাহাল (মত) বাত্তির সলোক (আলো)। শহরের ল্যাহাল গ্রামের রাস্তায় কিডা ঝকঝকে কারেন্টের বাত্তি দিলো।’

বৃদ্ধ আফতাব প্রামানিক বলেন, ‘রাস্তায় কারেনের (কারেন্ট) বাত্তি দিয়ে রাত বি রাত বেড়ানের সুবিদে হয়চে। এখন চোর চুটকাও কমবিনি।’

ঘরের কোণে বিদ্যুতের লাইট পাওয়াই নিজেদের নিরাপদ মনে করছে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী জুলি, ৮ম শ্রেণির ছাত্রী আইরিন, কুষক কামাল। গ্রামের রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকায় সন্ধ্যা নামলেই তারা দরজা-জানালা বন্ধ করে বাড়ি থাকত। সপ্তাহখানেক আগে তাদের পাড়ায় আলো লাগানো হয়েছে। তাতে খুশি তারা।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানা যায়, গ্রাম আলোকিত করতে তাদের এবারের এই প্রকল্প ব্যয়বহুল। প্রবাসী ও দেশে কর্মরত সদস্যদের অনুদানে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তারা গ্রামবাসীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মতামদের ভিত্তিতে বিদ্যুতের খুঁটির কাছে যার বাড়ি, তিনি বিদ্যুৎ দেবেন- এই শর্তে কাজ করে চলেছেন। বিদ্যুৎ দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউই বাদণ্ডসাধেননি। পরে বাতি ও সংযোগ মেরামত করে সংগঠন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close