আবদুর রহমান রাসেল, রংপুর

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

এবারও সেচের বাইরে ৩৯ হাজার হেক্টর জমি

পানির অভাবে এবারও তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ৩৯ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমি সেচের বাইরে থাকছে। এ প্রকল্পে পানির নিশ্চয়তা না থাকলেও প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সংস্কার ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পানির ন্যায্যতা নিশ্চিত ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করাকে অপচয় বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা।

রংপুর অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জীবন-জীবিকার অন্যতম অবলম্বন প্রমত্তা তিস্তা। বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহ গড়ে ২ লাখ কিউসেক থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে গড়ে থাকে ২ হাজার কিউসেক। তবে কোনো কোনো সময় তা নেমে আসে ৫০০ কিউসেকে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের জনজীবন। হুমকিতে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প সম্প্রসারণ ও সংস্কারকাজ শেষ হলে ৭০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি ও টারসিয়ারি সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে করে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা যাবে। রংপুরের গংগাচড়ার লক্ষ্মীটারির আলতাব হোসেন বলেন, মূল ক্যানেলে পানি না থাকায় তাদের শ্যালোমেশিনের সাহায্যে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। এতে তাদের খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। তিস্তার পানি পেলে খরচ হতো মাত্র ৫০০ টাকা।

তিস্তার পানির ওপর নির্ভর করেই ১৯৯০ সালে প্রথম দফায় কাজ শেষ হওয়ার পর ৮৪ হাজার ৩৭৮ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সে লক্ষ্যমাত্রা এখনো পূরণ হয়নি। যার মূল কারণ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদী থাকে পানিশূন্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ১৮ হাজার হেক্টর, ২০১৫ সালে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০২০-২১ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২৩ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর ও ২০২৪ সালে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়েছে।

‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নদীকে বাঁচাতে হলে সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। তিনি বলেন, নদী ড্রেজিং করে ক্যানালে সংযুক্ত, গভীর ও জলাধারা নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া তিস্তার শাখা নদীগুলোর সঙ্গে সংযোগ ফেরাতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদী নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। আমাদের আন্দোলনের মূলকথা ছিল, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু সরকার তা না করে ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে কৃষকের কী উপকার হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

তিস্তায় পানি না থাকলে এ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে- এমন প্রশ্নে উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ওভারকাম করার জন্য যতটুকু পারা যায়, আমরা তা করব। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ড্রেজিংয়ের টার্গেট নিয়েছি। যেখানে নদী চার-পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত আছে, সেখানে আমরা সেটা ১৬০০ মিটারে নিয়ে আসব। এ পরিকল্পনার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হয়তো সুফল পাব।

রিভারাইন পিপলসের রংপুরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘তিস্তার পানি নিশ্চিত করা না হলে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পেছনে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তা কোনো কাজেই আসবে না। তিনি বলেন, ‘এটা একটা অপরিকল্পিত কাজ। তিস্তা সেচ প্রকল্প বৃদ্ধির কাজ করা হচ্ছে, এটাতো শুভঙ্করের ফাঁকি। কারণ এখানে পানি কোথায়? এক খাল সংস্কারের ভেতর দিয়ে যে ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করা হচ্ছে বা যে জমিগুলোয় ভুট্টা হতে পারে, মরিচ ও আলু হতে পারে, আমাদের এসব কাজে উৎসাহিত করতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close