কক্সবাজার প্রতিনিধি

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার পর্যটনে আয় শতকোটি

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ মিলে ৫ দিনের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নামে কক্সবাজারে। ছুটির সময় পাঁচ শতাধিক হোটেল মোটেল এবং গেস্ট হাউসগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে যায়। সব মিলে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বরাবরের মতো হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল পর্যটকদের। হোটেল মালিক পক্ষের দাবি ৫ দিনের ছুটি থাকলেও হোটেলগুলোয় শতভাগ বুকিং ছিল মাত্র দুই দিন। আর পর্যটকদের নিরাপত্তায় সচেষ্ট ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ।

গত সোমবার থেকে অগ্রিম হোটেল কক্ষ বুকিংয়ের মাত্রা কমে যায়। এ কারণে হোটেল-মোটেলগুলোয় পর্যটকের অবস্থান ৫০ শতাংশের নিচে নেমে আসে বলে জানান পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা, সীগাল, লাবণী ও কবিতা চত্বর পয়েন্টে পর্যটকের ভিড় তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। ঈদের দু-এক দিন পর পয়েন্টগুলোয় যে ব্যস্ততা ছিল, তা কমে গেছে। দিন দিন আরো কমে যাবে বলে ধারণা করছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের এক দিন পর থেকে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক ছিল। এমনকি ঈদের ৪র্থ দিন কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক ছিল। সমুদ্রসৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কিন্তু ছুটি শেষে আস্তে আস্তে পর্যটক কমতে শুরু করে। কর্মব্যস্ততায় পর্যটকরা ঘরমুখী হচ্ছেন।

বিচকর্মীদের সুপারভাইজার মো. মাহবুব আলম বলেন, ঈদ ও নববর্ষের দীর্ঘ ছুটিতে কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকে টইটম্বুর ছিল। পর্যটকের ভিড়ে সৈকতে হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। কিন্তু গতকাল থেকে পর্যটক কমতে শুরু করেছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকের আনাগোনা আগের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে।

হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ছাড়াও রেস্তোরাঁ, ওয়াটার বাইক, বিচ বাইক, কিটকট, শামুক ঝিনুক, শুঁটকি, বার্মিজ পণ্য বিক্রিসহ কয়েক লাখ মানুষ সরাসরি পর্যটনশিল্প ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পর্যটক এলে তাদের আয়ের পথ সুগম হয়। তবে বুকিংয়ের বাইরে ওয়ার্কিং পর্যটকের সংখ্যা বেশি ছিল।

পর্যটন উদ্যোক্তা আবদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের সেবায় হোটেল-মার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা কয়েক দিন ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

ঈদের সময়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু করায় কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মিলে ২৫ হাজারের মতো কক্ষ রয়েছে। সে হিসেবে এক দিনে হোটেল কক্ষের ভাড়া থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকার ওপরে। এছাড়া রেস্তোরাঁ, ওয়াটার বাইক, কিটকট, শামুক-ঝিনুক, শুঁটকি এবং বার্মিজ পণ্য বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার মতো। পরিবহনসহ অন্যান্য খাতসহ সবমিলিয়ে ঈদের ৫ দিনের ছুটিতে শতকোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতকে সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে বছর জুড়ে পর্যটকের আগমন থাকত। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্বও আয় হতো।

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ৫ দিনের ব্যবসা দিয়ে তো আর বছর পার করা যায় না। তারপরও যা আয় হয়েছে, তা দিয়ে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অফ কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, সেন্টমার্টিনে যাওয়ার সুযোগ পেলে আরো বেশি পর্যটক আসত কক্সবাজারে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটক সমাগমের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল আমাদের। সৈকতে পর্যটকদের ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। বিপদাপন্ন কোনো পর্যটক একটি বাটন টিপেই সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন। পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবায় সার্বক্ষণিক টহল রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন জানান, এখনো পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। তারপরও হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায়, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ এবং পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close