উখিয়া (কক্সবাজার) ও নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মিয়ানমারের মর্টার শেলের শব্দে কাঁপছে সীমান্ত

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষে গোলাগুলি, মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দে কম্পিত হচ্ছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফারি, ফাত্রাঝিরি, বাজাবুনিয়া, রেজু আমতলি, গর্জবনিয়াসহ সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলো। তেমনি মিয়ানমার থেকে মঙ্গলবার রাতে ভারী একটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির লোকালয়ে এসে পড়ে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক কাটছে না। এদিকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে টেকনাফ সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ডও। গতকাল বুধবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের, ঘুমধুম, তুমব্রু, ভাজাবুনিয়া, বাইশফাঁড়িসহ সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিপজ্জনক এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ সময় স্থানীয়রা অনেকে আতঙ্কে থাকলেও ভয়ের কারণ নেই। কেননা সীমান্তে ৩৪ বিজিবির জোয়ানরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছিলেন পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমজাদ হোসেন, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট রাজেস কুমার বিশ্বাস নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা, ঘুমধুম তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মাহাফুজুর রহমান প্রমুখ।

স্থানীয় আজিজুল হক রানা, নুর মোহাম্মদ সিকদার ও মাহামুদুল হাসানসহ অনেকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘাত চলমান রয়েছে। এ সংঘাতে বিভিন্ন সময় নিক্ষিপ্ত গোলা তাদের সীমানা পেরিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী লোকালয়ে এসে পড়ছে। এতে নিত্যদিনের কাজে ও শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা। গত সোমবার দুপুরে কোনার পাড়া এলাকায় বিস্ফোরিত মর্টার শেলের খোসা পাওয়া যায়। মঙ্গলবারও দিনগত রাতে ঘোনারপাড়া এলাকায় মিয়ানমার থেকে নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে। এসব ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে মর্টার শেলের আঘাতে একটি আমগাছ ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।

ভাজাবনিয়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নূরজাহান বেগম বলেন, সীমান্তের ওপারের গোলাগুলিরও ভারী গোলার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। কোনো সময় আবার গোলাগুলি শুরু হয় তা বলা মুশকিল। এ পরিস্থিতিতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে খুবই ভয় লাগে।

তুমব্রু ঘোনারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবু সিদ্দিক বলেন, মধ্যরাতে গোলাগুলি শুরু হলে ভয়ে কাঁচাঘরের বাসিন্দারা পাড়ার বা কাছাকাছি পাকা দালানে গিয়ে আশ্রয় নেন। মঙ্গলবার রাতে যখন আবারও গোলাগুলি শুরু হয় তখন অন্যের ঘরে আশ্রয় না পেয়ে সীমান্ত সড়কের ওপারে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

এদিকে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির পাশাপাশি টহল এবং নজরদারি জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের পক্ষ থেকে গতকাল জানানো হয়, পার্শ্ববর্তী দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় বাংলাদেশের উপকূলবর্তী সীমানায় যাতে বিরূপ প্রভাব না পড়ে এজন্য সবোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। সম্প্রতি মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে অব্যাহত সংঘাত ও গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্ক রয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী উপকূলের বাসিন্দারা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে মানব পাচার, চোরাচালান, মাদকদ্রব্যের অবৈধ অনুপ্রবেশসহ নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত দিনরাত নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টেকনাফ কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার লুৎফুল লাহিল মাজিদের নেতৃত্বে টহল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। এছাড়াও টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনে বর্তমানে অতিরিক্ত জনবল মোতায়েন করার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং দেশের মানুষের জানমালের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close