অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪

পাটের বদলে প্লাস্টিকের বস্তা কাজে আসছে না অভিযান

ধান-চাল বিপণনে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার ১০ বছর পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল বাজারজাত করছেন কল মালিকরা। এতে ইরি-বোরো মৌসুমে শতাধিক চালকলে প্রতিদিন তিন লাখের বেশি বস্তা ব্যবহার হয়। এতে পাটের তৈরি বস্তা ব্যবহারের আইন কার্যকরের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নামমাত্র অভিযানেই দায় সারছেন। তবে চালকল মালিকদের দাবি, খরচ কমাতেই পাটের পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চালের মোড়ক ব্যবহার করছেন তারা।

২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ধান ও চাল বিপণনে শুধুই পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ সময় কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়, এই দুটি পণ্যে কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা যাবে না। এর চার বছর আগে ২০১০ সালে ৭ অক্টোবর ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন’ করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এর কোনো কার্যকর প্রয়োগ নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শতাধিকের চালকল রয়েছে। এসব কলের অধিকাংশ জেলার সদর, গোমস্তাপুর ও নাচোল উপজেলায় অবস্থিত। এসব চালকলে ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতিদিন ৬ হাজার ৯৯৬ টন চাল উৎপন্ন হয়। এই চাল ৫ থেকে শুরু করে ৫০ কেজির বস্তা প্লাস্টিক বস্তায় মোড়কীকরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। গড়ে ২৫ কেজি হিসেবে এ চাল মোড়কীকরণের প্রতিদিন অন্তত ৩ লাখ ২ হাজার ২২৫টি বস্তা লাগার কথা।

চলতি বছরে ১ জানুয়ারি হালনাগাদ হওয়া জেলা বাতায়নের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় আবাদী জমির পরিমাণ ১ লাখ ২৯ হাজার ৭৫১ হেক্টর। তবে বাইরে থেকেও ধান এনে জেলার কলগুলোতে চাল তৈরি করে মোড়কীকরণ হয়। জেলার বিভিন্ন চালকল ঘুরে দেখা গেছে, পাটের বস্তায় শতভাগ চাল বাজারজাত করছে হাতেগোনা দু-তিনটি চালকল। বাকি কলগুলোতে প্রকাশ্যেই চলছে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার। যদিও এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে নারাজ কল মালিকরা। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কথা বলেছেন প্রতিবেদকের সঙ্গে।

এক চালকল মালিক জানান, প্যাকেটের খরচ কমাতেই প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার করতে বাধ্য হন তারা। জেলায় ৫০ কেজির একটি পাটের বস্তার দাম ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। সেখানে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা দিলেই পাওয়া যায় একটি প্লাস্টিকের বস্তা। এ কারণে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের বস্তায় চাল সরবরাহে উৎসাহিত হচ্ছেন। আরেকজন চালকল মালিক জানান, চাল মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহার করলে চালের দাম কেজি প্রতি বেড়ে যাবে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ পয়সা। কারণ পাটের বস্তা ব্যবহার করতে গেলে ৫০ কেজির বস্তায় অতিরিক্ত ৩০-৪০ টাকা গুনতে হয়। তবে সরকার ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহ করলে চালকল মালিকরা পাটের বস্তা ব্যবহার করবেন বলেও মনে করেন তিনি।

নিয়মানুযায়ী কলকল চালুর সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) নিতে হয়। সেখানেও প্লাস্টিকের বস্তায় চাল মোড়কীকরণ না করার শর্ত দেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি জানান, চালকলগুলোতে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার বন্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। কিন্তু অভিযান করেও কোনো লাভ হয় না। জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা অজিত কুমার রায় জানান, বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের সভায় পাটের বস্তায় চাল বাজারজাত করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু বিষয়টি আর বেশি দূর এগোয়নি। সভায় চালকাল মালিকরা পাটের বস্তা ব্যবহারের অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়ন করেন না।

অজিত কুমার রায় বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি পাটের বস্তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছি। যদিও চলতি মাসে রাইস মিলগুলো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।’ জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম জানান, চালকলগুলোয় প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহার বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চালানো হয়। পাটের বস্তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হয় মিলারদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close