তিনি চাকরি করেন, এ তথ্য গোপন করে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা হয়েছেন, সত্য ঘটনা শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি। বেরিয়ে এসেছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এলাকায় এখন চাওর হয়েছে। রসদ জোগাচ্ছে পাড়া-মহল্লার চায়ের আড্ডায়।

জানা গেছে, উপজেলার হাতিয়া ভবেশ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি করেও তা গোপন করে ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন ছাত্রলীগের এ নেতা। শুধু তাই নয়, সরকারি দলের ক্ষমতার দাপটে মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে যান না। তবে স্কুলের খাতায় নিয়মিত উপস্থিত দেখাতে স্বাক্ষর করেন। ২০২২ সালের ৬ জুলাই স্কুল এমপিও হওয়ার পর থেকে মাসে দুই থেকে তিনবার স্কুলে গিয়ে পুরো সপ্তাহের স্বাক্ষর করেন। এভাবেই সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন (এমপিও) উত্তোলন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এখন তার সেই চাকরির খবর পুরো উপজেলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এতে সরকারি দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। বিদ্যালয়ে নজরুলের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরি ও নিয়মিত বেতন (এমপিও) উত্তোলনের কথা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাঈদুল ইসলাম নিশ্চিত করলেও তার কর্মজীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তিনি। শিক্ষক নজরুল স্কুলে নিয়মিত আসে না, অথচ বেতন উত্তোলন করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে পরে সাক্ষাতে কথা বলবে বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে নজরুলের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে নিয়োগ পেয়ে চাকরিতে যোগদান করেন তিনি।

জেলা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজু আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে নজরুল ইসলামকে সভাপতি ও মঈনুর রশিদ নোমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৭ সদস্য বিশিষ্ট উলিপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই সময় হাতিয়া ভবেশ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) পদে চাকরিরত থেকেও কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগকে না জানিয়ে তথ্য গোপন করে সম্প্রতি ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ উলিপুর উপজেলা শাখার ‘সভাপতি’ পদ পেয়েছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ (গ) ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী (৫ এর ক উপ-ধারা অনুযায়ী) ছাত্রলীগের কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য হতে পারে। বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরি নিয়োজিত কোনো ছাত্রছাত্রী ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। ছাত্রলীগ এই সভাপতি নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে সাক্ষাতে কথা বলতে চেয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নয়ন বলেন, তিনি চাকরিতে কর্মরত এমন অভিযোগ পেয়েছি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তার ব্যাপারে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহাতাব হোসেন বলেন, স্কুল নিয়মিত করেন না এমন অভিযোগ শুনেছি। এখন কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় স্কুল বন্ধ রয়েছে। স্কুল খুললে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। যেহেতু বিদ্যালয়ে যান না বলে তথ্য পেলাম, উপস্থিত দেখাতে খাতায় স্বাক্ষর করেন, নিয়মিত বেতন উত্তোলন করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"