ইমাম হোসেন হিমেল, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)

  ০৭ জুন, ২০২৩

২০০ বছরের নৌকাটি

পটুয়াখালী জেলার পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে বালুর বুক চিরে জেগে উঠা সেই ২০০ বছরের পুরোনো নৌকাটির দর্শনার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা পর্যটকদের পদভারে মুখরিত কিন্তু নৌকা জাদুঘরে লোক সমাগম নেই। প্রচার ও সংরক্ষণের অভাবেই নৌকা জাদুঘরে লোক আসা অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। লোকসানের মুখে পড়েছেন নৌকা জাদুঘরের আশপাশের ক্ষুদ্র দোকানিরাও।

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে অব্যাহত ভাঙনে বালু ক্ষয়ের ফলে ২০১২ সালে সন্ধান মেলে কুয়াকাটা ঝাউবন-সংলগ্ন সৈকতে ৬২ হাত দীর্ঘ ও ১৬ হাত চওড়া ঐতিহ্যবাহী একটি সাম্পান। বালু ক্ষয়ে ক্ষয়ে শতবছর পর জেগে ওঠে। আনুমানিক ২০০ বছর আগে রাখাইনরা এ নৌকায় করেই কুয়াকাটায় এসে বসতি গড়েছিল বলে লোকমুখে শোনা যায়। কালের বিবর্তনে নানা স্মৃতি হারিয়ে গেলেও বর্তমানে নৌকাটি এ অঞ্চলের রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের পাশে বৌদ্ধ মন্দির-সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ঢালে একটি টিনশেডের বেষ্টনীর ভেতর স্থাপন করে। এটি নৌকা জাদুঘর নামে পরিচিত। এটি উদ্ধারকালে পাটের তৈরি ছালার নিদর্শন, পাটখরি, মাদুরের অবশেষ, শিকল, তামার অনেক পাত, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরো, লোহা দস্তার তৈরি ব্যালাস্ট পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এ নৌকাকে সোনার নৌকা বলা হয়, কারণ এর বাইরের আবরণ তামার পাতে মোড়ানো ছিল বলে মানুষ এ নামকরণ করে। নৌকা জাদুঘরে পর্যটকের উপস্থিতি অনেক কম। বেশ কিছুদিন ধরে নৌকা জাদুঘরে দর্শনার্থী অনেক কমে গেছে বলে মনে করে নৌকা জাদুঘরসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ।

লোকসানের মুখে পড়েছেন নৌকা জাদুঘরের আশপাশের হোটেল-মোটেল ও ছোট ব্যবসায়ীরা। নৌকা জাদুঘরের পাশের ব্যবসায়ী মিজান জানান, সমুদ্রসৈকতে দর্শনার্থীর ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই অথচ নৌকার জাদুঘরে লোকজন নেই বললেই চলে।

ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী ফারিয়া ইসলাম জানান, ২০০ বছর আগের নৌকার কথা শুনে দেখতে এলাম, দেখে ভালোই লাগল কিন্তু কোনো দর্শনার্থী নেই। এখানে এসে রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্য জানতে পারলাম।

কুয়াকাটা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার শহীদ দেওয়ান বলেন, অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে নৌকা জাদুঘরে দর্শনার্থী সংখ্যা একটু কম। তবে নৌকা জাদুঘর নিয়ে প্রচার-প্রচারণার কমতি আছে। নৌকাটি এ অঞ্চলের রাখাইনদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী বহন করে।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর পর্যটকের উপস্থিতি আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। আশা করি, নৌকা জাদুঘরে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কুয়াকাটার অনেক উন্নয়নকাজ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় নৌকা জাদুঘরে দর্শনার্থী ফেরাতে পৌরসভার মেয়র হিসেবে যা করার আমি করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close