পঞ্চগড় প্রতিনিধি

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে আরো ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বজনদের দাবি, এখনো ৪০ জন নিখোঁজ আছেন। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের তিনটি ডুবুরি দল উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক শেখ মাহবুবুব ইসলাম জানান, আলো-স্বল্পতায় রাতে বন্ধ থাকার পর সোমবার সকাল ৬টায় উদ্ধার অভিযান শুরু করে রাজশাহী থেকে আসা ছয়জনের ডুবুরি ইউনিটসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ১৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার তুষার কান্তি রায় বলেন, ‘আমরা ভাটির দিকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।’

এদিকে, দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ের বোদায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ আটজনের লাশ দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বীরগঞ্জের আত্রাই ও কোতোয়ালির কাঞ্চন নদী থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। যাদের মধ্যে তিন শিশু, চার নারী ও একজন পুরুষ রয়েছে।

বীরগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সকোর জানান, আত্রাই নদীর কাশিমনগর বাদলা ঘাট থেকে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তার নাম সুব্রত রায় (২)। সে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া গ্রামের প্রফুল্ল রায়ের ছেলে।

কোতোয়ালি থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৯টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার মাহুদপাড়া পুনর্ভবা নদী থেকে এক যুবকের (২৮) লাশ উদ্ধার করা হয়। তার নামণ্ডপরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এটিও করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির নিখোঁজের লাশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

খানসামা থানার ওসি চিত্ত রঞ্জন জানান, আত্রাই নদীর জিয়া সেতুর কাছ থেকে চার নারী ও দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বদ্বেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উৎসবে যোগ দিতে নৌকায় করে দেড় শতাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় নৌকাটি করতোয়া নদী আওলিয়াঘাট এলাকায় ডুবে যায়। এ ঘটনায় রবিবার ২৫ এবং সোমবার ১৬টিসহ ৪১টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, নৌকাডুবিতে এখনো অনেকেই নিখোঁজ আছেন। তাদের সন্ধানে নদীতীরে ভিড় করছেন স্বজনরা। কেউ কেউ নৌকা নিয়ে নদীতে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্রিয়জনকে। কারো হাতে নিখোঁজদের ছবি, তা নিয়ে নদীতীরের বাসিন্দাদের দেখাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। এদেরই একজন মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের গেদীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব রায় (৫০)। তিনি বলেন, তার দুই কাকি, মামাসহ আটস্বজন নিখোঁজ। তাদের কাউকে খুঁজে না পেয়ে করতোয়ার তীরে বিলাপ করছিলেন তিনি। তার মতো অবস্থা পাঁচপীর গ্রামের জগদীশ রায়েরও। তার এক বন্ধু, বেয়াই, ভাতিজি, জামাইসহ ৯ জন নদী পার হচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে ভাতিজির লাশ পাওয়া গেছে। কিন্তু অন্যদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। করতোয়া পাড়ে এসেছেন তাদের খুঁজতে।

প্রিয়জনকে খুঁজে পাওয়ার আশায় জগেশ রায়, প্রদীপ চন্দ্রসহ কয়েকজন নৌকা নিয়ে নদীতে চষে বেড়াচ্ছেন। নিখোঁজদের ছবি নদীতীরের বাসিন্দাদের দেখাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন। নিখোঁজদের সম্পর্কে কোনো ধারণাই দিতে পারছেন না দুর্ঘটনাস্থলের তীরের মানুষরা।

দীপক চন্দ্র রায়ের মা আদুরী রানী ও ছেলে তন্ময় দুজনে মিলে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নদী পার হচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় তারাও ডুবে যান। তন্ময়কে উদ্ধার করা গেলেও আদুরী রানী এখনো নিখোঁজ। মাকে খুঁজতে করতোয়ার পাড়ে এসেছেন দীপক। তিনি বলেন, ‘আমি শুধু মায়ের মুখটা দেখতে চাই।’

এদিকে সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, মৃত ব্যক্তিদের সৎকার ও দাফন প্রক্রিয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তিদের প্রতি পরিবারকে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২৫ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close