মো. রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর ফ্লাইওভার চালু আগামী সপ্তাহে

কাজ শুরুর প্রায় এক দশক পর বহু প্রত্যাশিত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের একটি ফ্লাইওভার খুলে দিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষের জন্য এ সুখবর জানিয়েছেন বিআরটিএ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম। টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত অংশে নির্মিত ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিএসপি ও পিএমপির দুটি প্রতিনিধি দল। প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম, জিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার হাফিজুল ইসলামসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন আমরা আরো কয়েক দিন দেখব, যানবাহনের গতিবিধি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব বিষয়। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ শেষ হলে আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টঙ্গীর স্টেশন রোড থেকে আবদুল্লাহপুর অংশে নির্মিত ফ্লাইওভারটি সব রকম যানবাহনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া সম্ভব হবে। যদি নতুন কোনো সমস্যা থাকে তাহলে হয়ত আরো দু-একদিন দেরি হতে পারে। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহেই চালু হবে এটি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে ফ্লাইওভারের ওপরের অংশে যানবাহন কীভাবে চলবে, রেলিং ঘেঁষে যাতে গাড়ি না চলে, আঁকাবাঁকা অংশে চালকের সাবধানতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সেগুলো সরেজমিনে দেখা হয়েছে। আরো কয়েক দিন পর্যেক্ষণ করা হবে।

উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) বলেন, এটি খুলে দেওয়া হলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে যানজট কমে যাবে। মানুষের যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। এর ফলে ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ও অন্যান্য কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের যানজট দূর করতে ২০১২ সালে হাতে নেওয়া হয় বিআরটি প্রকল্প। কিন্তু প্রকল্প শুরুর পর চার দফা সময় বাড়িয়েও সর্বশেষ নির্ধারিত সময়েও শেষ হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। সর্বশেষ মেয়াদ বৃদ্ধির পর চলতি বছরের ডিসেম্বরে বহুল আলোচিত বিআরটি প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা। ৬ বছরে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে সময় বাড়ানো হয়েছে চারবার। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। সময় ফুরিয়ে গেলেও কাজ ফুরোয়নি। তাই আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।

এর আগে গত ১৬ আগস্ট সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, গড়ে এ প্রকল্পের কাজ ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

জানা যায়, রাজধানী হতে সড়কপথে গাজীপুরের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যানজট না থাকলে সড়কপথে খুব সহজেই গাজীপুরে আসা যায়। দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে সড়কপথে গাজীপুরের যোগাযোগ ভালো। গাজীপুরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এপথ দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৭টি জেলা এবং উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ এপথ ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে গাজীপুরের গুরুত্ব অপরিসীম। এ গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে শুরুতে প্রকল্পের বিবরণীতে বলা হয়েছিল, অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ গাজীপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বসবাসযোগ্য হবে গাজীপুর নগরী। সহজ হবে গণমানুষের যাতায়াত। বাড়বে ঢাকার গতি।

তখন আরো বলা হয়েছিল, ব্যক্তিগত যানবাহন নয়, শুধু গণমানুষের পরিবহনের জন্য সড়কের মাঝখানে নির্মিত হবে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোনো সিগন্যাল ছাড়াই এসব গণপরিবহন চলবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। স্বপ্ন দেখানো হয়েছে, বিআরটি চালু হওয়ার পর প্রতি ঘণ্টায় ২০ হাজার যাত্রী গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে যেতে পারবে। আর গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট। এতে সড়কের দুই পাশের যানজট কমবে। সহজ হবে মানুষের যাতায়াত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে গাজীপুর সিটির যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ৬টি ফ্লাইওভার নির্মাণ। সড়কের প্রধান করিডোরের সঙ্গে সংযোগের জন্য বিভিন্ন অংশে ১১৩টি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ২৫টি বিআরটি স্টেশন নির্মাণ, ঢাকা বিমানবন্দর ও গাজীপুরের শিববাড়ী এলাকায় দুটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ। বাস স্টপেজে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং পথচারী পারাপারের জন্য ৩০টি আন্ডারপাস নির্মাণ, পুনর্নির্মিত সড়কের দুই পাশে উচ্চ ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ৪১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাত নির্মাণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close