শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

  ১৩ আগস্ট, ২০২২

চা শ্রমিকদের কর্মবিরতি

দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি দাবি

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনের চতুর্থ দিনে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রীমঙ্গলের ৪২টি চা বাগানের শ্রমিকরা। শুক্রবার (১২ আগস্ট) বিকালের মধ্যে মালিক পক্ষের আশ্বাস না পেলে আজ থেকে কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে তারা এমনটাই হুশিয়ারি দিয়েছেন।

শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলে। দেশের ২৩১ চা বাগানে এক যোগে প্রতিটি চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতির নেতৃত্বে শ্রমিকদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে চা বাগানগুলো।

চা বাগানের নারী শ্রমিক উমা হাজরা বলেন, ‘আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, এ দিয়ে আমাদের চলে না। অনেক কষ্ট করে জীবন কাটাই। খাওয়া-দাওয়া ভালো হয় না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও করাতে পারি না। সব কিছুর দাম বাড়ে আমাদের মজুরি বাড়ে না। তাই আমরা কোনো রকমে জীবন কাটাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘চায়ের দাম ও উৎপাদন বাড়ে, আমাদের মজুরি কেন বাড়বে না। আমরা যদি বেঁচে না থাকি তাহলে চা বাগানে ধস নামবে।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা শ্রমিকদের এক দিনের মজুরি দিয়ে ১ লিটার পেট্রলও কেনা সম্ভব না। শ্রমিকরা কি নিদারুণ কষ্টে রয়েছেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কিছুই হয় না। শ্রমিকরা ভালোমন্দ খেতে পারে না। মজুরি বৃদ্ধি না হলে শ্রমিকরা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, ‘আমরা গত ১৯ মাস ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করছি। কিন্তু মালিকপক্ষের টালবাহানা কমছে না। বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে ন্যূনতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১২০ থেকে ৩০০ টাকা করার দাবি অনেক দিনের। মালিকপক্ষ এরই মধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরি হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রলের দামও হবে না। আজ চতুর্থ দিনও মালিক পক্ষ দাবি মানেনি।’

এদিকে চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও চা বাগানের নাট মন্দিরে বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে ১২০ টাকা মজুরিতে চলা মুশকিল। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার এই যৌক্তিক দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, আমরা চা শিল্পের ক্ষতি চাই না। আমরা চাই চা শিল্প বেঁচে থাকুক। চা শিল্প বেঁচে থাকলে শ্রমিকরাও বাঁচবে। তাই চা শিল্প টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে আগে তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ অন্যান্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার থেকে দেশের সব চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close