আরমান ভূঁইয়া

  ০৪ জুলাই, ২০২২

পশুর হাটে শুরু হয়নি কেনাবেচা

ব্যাপারীদের অলস সময়

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে এখনো শুরু হয়নি পশু কেনাবেচা। সরকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ৬ জুলাই থেকে হাট শুরুর কথা। তাই গত শুক্রবার থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। তবে ক্রেতা শূন্যে অসল সময় কাটাচ্ছেন ব্যাপারী ও ব্যবসায়ীরা।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা থেকে ১৪টি গরু নিয়ে ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউন পশুর হাটে আসেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, লোকজন আসছে, দাম শুনছে আর ছবি তুলে চলে যাচ্ছে। এখনো বাজার জমে ওঠে নাই। তবে আর দু-এক দিন পর কেনাবেচা শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন হয় হাটে আসছি। এখনো বিক্রি হয় নাই। তাই অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছি।’

একই উপজেলা থেকে নিজের পালিত একটি গরু নিয়ে আসেন আবদুল লতিফ সিকদার। দেড় বছর তার গোয়ালে লালন-পালন করে ‘লাল শাই’ গরুটি আমুলিয়া হাটে আনেন তিনি। সাড়ে ৭ মণ ওজনের গরুটির দাম চাচ্ছেন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘ছয় মাসের একটা বাছুর নিছিলাম। দেড় বছর এটাকে লালন-পালন করছি। আদর করে নাম দিছি লাল শাই। এটা বিক্রি করে মেয়েটাকে বিয়া দিমু। তবে বাজার কেমন যায়! তাই নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছি।’

গতকাল রবিবার রাজধানীর ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন, মেরাদিয়া বাজার ও আফতাব নগর পশুর হাট ঘুরে জানা যায়, গত দুই দিনে এ হাটগুলো প্রায় দুই হাজারের অধিক পশু আনা হয়েছে। তবে এখনো কোনো পশু বিক্রি হয়নি। হাটে আসা এসব পশুর সর্বনিম্ন ৭৫ হাজার ও সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে। গো-খাদ্যে দাম বেড়ে যাওয়ায় গেল বছরের তুলনায় এবাব কিছুটা দাম বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতারা মনে করছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলে কমে আসবে কোরবানির পশুর দাম।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে প্রবেশে তৈরি করা হয়েছে সুসজ্জিত তোরণ। হাটের আশপাশে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে লাইটিং ও মাইকিং করে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ইজারাদারা। হাটের একাংশে কোরবানির পশুর পসরা সাজানো। অন্যদিকে এখনো চলছে হাট প্রস্তুতের কাজ।

কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে মেরাদিয়া হাটে গরু নিয়ে এসেছেন সাইদুল মণ্ডল ব্যাপারী। তিনি বলেন, ক্রেতারা আসছে। দাম জেনে চলে যাচ্ছে। কেউ দাম করছে না। এখন সবাই হাটে ঘুরতে আসছে। কিনতে চাচ্ছে না।

নাটোরের সিঙ্গাই থানা থেকে মেরাদিয়া হাটে ১৮টি গরু নিয়ে আসেন মো. আবদুল রাজ্জাক। তিনি বলেন, এবার কেমন বাজার পাওয়া যাবে বুঝতে পারছি না। এখনো কেনাবেচা শুরু হয়নি। তবে আশা করছি ভালো কিছু হবে।

গরুর দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘গরুর খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। যে ভুসির বস্তা আগে ১৩০০ টাকায় কিনছি। তা এখন ২ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। গো-খাদ্যের সব কিছুরই দাম বাড়ছে। এজন্য গরু পালনে এখন অনেক খরচ।’

আবদুর রাজ্জাক আরো বলেন, ‘সারা দিন আমাগো খাইতে লাগে ১০০ টাকা। আর একটা গরুর খাবারে লাগে ৪০০ টাকা। আমরা না হয় দুই বেলা হাইলেও চলব। কিন্তু তাদের তো আর না খাইয়া রাখা যাইব না।’

বাজারে গরুর দাম নিয়ে আরেক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী বলেন, গত বছর ৩৫টা গরু নিয়া আসছিলাম। আর এ বছর ১৬টা গরু আনছি। এর মধ্যে ৭০ হাজার টাকার গরু আছে। আবার আড়াই লাখ টাকারও গরু আছে।

এদিকে এখনো করোনা সংক্রমণ থাকায় হাটগুলো ১৬টি নির্দেশনা বেঁধে দিয়েছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু তার কিছুই মানতে দেখা যায়নি হাট পরিচালনাকারীদের। বিক্রি শুরু না হওয়া দোহাই দিয়ে মেরাদিয়া বাজার পশুর হাটের ইজারাদার আওরঙ্গজেব টিটু বলেন, ‘আমার প্রায় পাঁচ হাজার মাস্ক ও গেটে গেটে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করেছি। এখন বেচাকেনা শুরু হয়নি। ৫ জুলাই থেকে এগুলো দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, গত বছর এই হাটে প্রায় পাঁচ হাজার পশু বিক্রি হয়েছে। এ বছরও আমরা আশা করছি ছয় হাজারের মতো কোরবানির পশু বিক্রি হবে।

আমুলিয়া হাটের পরিচালনা পরষদের সদস্য মো. দিপু বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে হাটে কোরবানির পশু আসছে শুরু করেছে। এরই মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক গরু আসছে। এখনো হাট জমে উঠেনি। তাই বিক্রিও হয়নি। আর দু-এক দিন পর থেকে বিক্রি শুরু হতে পারে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close