প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ জুলাই, ২০২২

হাটে বিপুলসংখ্যক গরু

‘পদ্মা-সেতু’ কিনতে লাগবে ২৫ লাখ

কোরবানির আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। এর মধ্যেই দেশের হাটগুলোতে প্রচুর গবাধি পশু আসতে শুরু করেছে। তেমনি পদ্মা-সেতু নামে দুটি গরু নওগাঁর বাজারে এসেছে। সংশ্লিষ্ট খামারি গরু দুটির দাম হাঁকছেন ২৫ লাখ টাকা, যা এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গরু কোরবানিকে সামনে রেখে গ্রামীণ হাট-বাজারগুলোতে গবাধি পশু আসা শুরু হয় কমপক্ষে মাসখানেক আগে থেকে। এ সময় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে হাটে বড় বেপারিররা গরু সংগ্রহ করতে ভিড় করেন। বিশেষ করে গবাধি পশুর উৎসস্থল হিসেবে পরিচিত পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়াসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বেপারিরা ভিড় করেন। সেসব জেলায় কোরবানির গরুও প্রস্তুত হয় বেশি।

তবে হাট-বাজারগুলোতে পাইকারি বেচাকেনা এখন আর তেমনটা নেই। এখন পশুর হাটগুলোতে যেসব গরু বাজারে আনা হচ্ছে, তা শুধু লোকাল কোরবানির চাহিদা মেটানোর জন্যই আনা হচ্ছে। হাটগুলোতে গরু-ছাগলের উপস্থিতি বেশ বাড়লেও বেচা-বিক্রি শুরু হয়নি এখনো। সারা দেশের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, জেলায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে ওজন এবং দামে আলোচনায় উঠে আসে বাহারি নামের গরু। এবার সেই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে নওগাঁর ‘পদ্মা-সেতু’ নামে দুটি ষাঁড়। জেলার বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের দরিয়াপুর গ্রামের মামুনুর রশিদ লিটন গরু দুটির মালিক। ঈদ উপলক্ষে এই গরু দুটিকে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন।

গরু দুটির মধ্যে কালচে রঙের ‘পদ্মা’র ওজন ৩৩ মণ ও লালচে রঙের ‘সেতু’র ওজন ৩০ মণ। ষাঁড় দুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। এরই মধ্যে অনেকেই গরু দুটি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ‘পদ্মা-সেতু’ কিনতে আসছেন ক্রেতারা। করছেন দামণ্ডদরও।

এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ‘এবার নওগাঁয় খামারি ও ব্যক্তিপর্যায়ে ৪ লাখ ৩৩ হাজার গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এসব পশুর মধ্যে রয়েছে ষাঁড়, বলদ, গাভি (বাচ্চা উৎপাদনে অক্ষম) মহিষ ও ছাগল। এর মধ্যে শুধু গরুই ৬৭ হাজার। জেলায় প্রায় ২৫ হাজারের মতো খামার রয়েছে। গত বছর ২ লাখ ২৫ হাজার কোরবানি হয়েছিল। এবার জেলায় প্রায় তিন লাখের বেশি কোরবানি হবে বলে ধারণা ধারণা করা হচ্ছে। জেলায় কোরবানির জন্য পশুর সংকট হবে না। চাহিদার তুলনায় জেলার খামারগুলোতে পশু বেশি থাকায় এবার অন্য কোথাও থেকে পশু আনার প্রয়োজন নেই।

ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ঈদকে ঘিরে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির হাট। এ উপলক্ষে উপজেলায় প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ২২ হাজার গবাদি পশু। কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, পশুর হাটে ক্রেতাণ্ডবিক্রেতার ভিড় ততই বাড়ছে। পশুর হাটে নানা অব্যবস্থাপনা থাকলেও পশু বিক্রি বেড়েছে।

উপজেলার একাধিক খামারি ও প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গো-খাদ্যের দাম তুলনামূলক বৃদ্ধি পাওয়ার পরও কোরবানির পশুর দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে। এবার মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদ বেশি। বিজিবির কড়া নজরদারিতে ভারতীয় গরু কম আসায় বেশ লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় কোরবানির পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২১ হাজার ৪৩০টি। তবে খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে প্রায় ২১ হাজার ৬০৩টি গবাদি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ১৬০টি বলদ, ৬ হাজার ৯২৭টি ষাঁড়, ৩ হাজার ১৭০টি গাভি, ৮ হাজার ৭৫১টি ছাগল ও ২ হাজার ৫৯৫টি ভেড়া রয়েছে। এতে চাহিদা মিটিয়ে ১৭৩টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, ফুলবাড়ীতে সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল গরুর হাট বসেছে। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরু ব্যবসায়ীরা তাদের গরু এনে এই হাটে বেচাকেনা করছেন। এবার গরুর হাটে ক্রেতা থাকলেও গরুর দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় সাধারণ মানুষ এই কোরবানিতে গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ১৬ হাটবাজারে বেচাকেনা হবে কোরবানির পশু। এরই মধ্যে অস্থায়ী পশুর হাট ১৫টি। লোহাগাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান জানান, এখানে অনলাইনেও কোরবানির পশুর বেচাকেনার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো জানান, কোরবানির পশুর ১৬ হাটবাজারের মধ্যে ৬টির জন্য দুটি মনিটরিং টিম কাজ করবে। এ দুটি টিম ভেটেরিনারি পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

উপজেলার সদর উল্লাপাড়া ইউনিয়নের নাগরৌহা গ্রামের একটি গো-খামারে আর দিনকয়েক বাদে বড় জাতের গোটা-দশেক ষাঁড় গরু পালন করা হচ্ছে? এর সঙ্গে ভুটানি জাতের দুটি ষাঁড় গরু পালন করা হচ্ছে। আকারে ছোট গরুগুলো দেখতে এলাকার অনেকেই খামারটিতে আসেন বলে জানা গেছে ?একাধিক গো-খামারি ও গরু বেপারিদের কথায় আকারে ছোট হলেও ভুটানি জাতের ষাঁড় গরুর দাম বেশি।

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার দুই উপজেলা আমতলী ও তালতলীর বিভিন্ন খামারি ও স্থানীয় গৃহস্থ পরিবারগুলোয় ১৫ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন। দুই উপজেলার ১৪ ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় প্রায় ৪ হাজার ৬৬৩টি ছোট-বড় খামার ও গৃহস্থ পরিবারে এসব গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। দুই উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশু বাইরের উপজেলাগুলোতেও বিক্রির জন্য পাঠানো হবে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানা গেছে, দুই উপজেলায় কোরবানি ঈদের জন্য পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ১২০টি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close