আরমান ভূঁইয়া

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মীরহাজীরবাগে জোড়া খুন

পরকীয়ার জেরে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা, স্বীকার করলেন স্বামী

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রী ও দেড় বছরের সন্তানকে হাতুড়ি দিয়ে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন স্বামী ওয়াহিদুল ইসলাম। এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বাইরে পালানো সময় বেনাপোল থেকে এই খুনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসে মা-ছেলে হত্যাকান্ডের চাঞ্চল্যকর রহস্য। গত মাসের ৩০ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগ এলাকার একটি বাসা থেকে রুমা আক্তার (২৫) ও তার দেড় বছরের শিশুসন্তান মো. নিশাদের লাশ উদ্ধার করে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। ঘটনার পর ঘাতক স্বামী ভারতে পালিয়ে যাওয়া সময় ১ সেপ্টেম্বর যশোর বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুকিত হাসান বলেন, আসামি ওয়াহিদুলের সন্দেহ ছিল নিহত রুমার পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। গত ৩০ আগস্ট দুপুর থেকে স্ত্রীর পরকীয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিকাল ৪টার দিকে ওয়াহিদুল তার স্ত্রী রুমার মাথায় ও কপালে হাতুড়ি দিয়ে একাধিক আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই রুমার মৃত্যু হয়। পরে আসামির সন্দেহ ছিল তাদের দেড় বছরের শিশুসন্তান মো. নিশাদ তার সন্তান ছিল না। সেজন্য আসামি বাচ্চাকেও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীরহাজীরবাগের ১৯২ নম্বর বাসার দ্বিতীয়তলায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামীর সঙ্গে ভাড়া থাকত নিহত রুমা আক্তার। কুমিল্লা কান্দিরঘায় আমির হামজার মেয়ে রুমা। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। সে লক্ষ্যে নবম শ্রেণি থেকে তিনি টিউশনি করাতেন। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ছাত্রছাত্রী পড়িয়েছেন। বিয়ের পর বন্ধ হয়ে যায় তার টিউশনি। তবে শত বাধার মধ্যেও চালিয়ে গেছেন নিজের পড়াশোনা। নিহত রুমার বড় বোন নাছিমা আক্তার বলেন, আমার বোন খুবই ভালো শিক্ষার্থী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। বিশেষ করে পথশিশু ও বঞ্চিত শিশুদের পড়াতে খুবই পছন্দ করত সে। প্রায় সময় নিজের জমানো টাকা দিয়ে পথশিশুদের বই-খাতা ও খাবার-দাবার কিনে দিতেন। তার স্বপ্ন যে এভাবে শেষ হয়ে যাবে তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। নিহতের মা রেবা আক্তার বলেন, ঘটনার দিন দুপুর থেকে আমার মেয়ের মোবাইলে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাই। পরে তার স্বামীর মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে বন্ধ পেয়ে তার শ্বশুরের মোবাইলে যোগাযোগ করি। পরে রাত সাড়ে ১১টায় দিকে আসামির মা ফোন করে জানায় একটা সমস্যা হয়েছে, আপনারা দ্রুত বাসায় আসেন। আমরা ভেবেছি, রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু যখন শুনি আমার মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। তখন আর নিজেকে সামাল দিতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, একটি শিশু বাচ্চাকে কীভাবে মানুষ হত্যা করতে পারে! দেড় বছরের একটি শিশু বাচ্চা। সে দুনিয়া সম্পর্কে কী বুঝে? মেয়ের জন্য প্রচন্ড কান্নায় মা রেবা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে ও নাতি হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে করে এ ধরনের হত্যাকান্ড আর কখনো না হয়।

রুমা আক্তর (২৫) নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রুমার। দেড় বছরের একটি ছেলেসন্তান ছিল তাদের। তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষকতা করার। সে লক্ষ্যে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। স্বপ্ন পূরণে স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে চালিয়ে যায় পড়াশোনা। শেষ পর্যন্ত স্বামীর হাতুড়ি আঘাতে শেষ হয়ে যায় তার স্বপ্ন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুকিত হাসান বলেন, আসামিকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তারের পর অসুস্থতার কারণে স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে যশোর কোর্টের মাধ্যমে আসামিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে ১৬ আগস্ট দুই দিনের রিমান্ড দেয় আদালত। আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর দিন আদালতে হাজির করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close