অলাত এহ্সান

  ২৫ মে, ২০১৭

চিনুয়া আচেবের লড়াই

ক্ষমতা ও সত্যের মিথস্ক্রিয়া

‘আফ্রিকার লেখকের পক্ষে এক ধরনের অঙ্গীকার, এক ধরনের বার্তা প্রদান, এক ধরনের প্রতিবাদ করা-এসব ছাড়া আর কিছুই লেখা সম্ভব নয়। আফ্রিকার জীবনটাই এমন হয়েছে যে, আপনাকে প্রতিবাদ করতেই হবে; আপনাকে ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতেই হবে।’ আফ্রিকার মহান সাহিত্যিক চিনুয়া আচেবে বলেছিলেন এই কথা। তিনি এসব কথা বলেছিলেন আফ্রিকার উপনিবেশ ও উত্তর-উপনিবেশিকতার প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে। তিনি তাঁর সাহিত্য করেছেন এই দায়বদ্ধতা থেকেই। তার অনবদ্য উপন্যাস ত্রয়ী (ট্রিওলজি)-‘থিংস ফল এ্যাপার্ট’, ‘নো লংগার এট এজ’ ও ‘এ্যারো অফ গড’-এর দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এর বাইরে ‘দেয়ার ওয়াজ এ কান্ট্রি’ ও ‘এন্টহিল অফ দ্য সাভানা’-এ প্রসঙ্গগুলো আরো জোড়ালোভাবে এসেছে।

কিন্তু সাহিত্য যখন উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে ভাবছে, তখন আফ্রিকার সাহিত্যিক তার লেখায় কি তুলে ধরবেন? আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে, বর্তমান বিশ্বে সাহিত্যের কি বা মূল্য আছে, যেখানে মারণাস্ত্রের উন্নতি আর যুদ্ধ নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা টের পাই মারণাস্ত্রের লড়াই ছাড়াও বহু ধরনের ক্ষমতা ও পক্ষের লড়াই বিদ্যমান। জ্ঞানতাত্ত্বিক লড়াই তার মধ্যে অন্যতম। যা যুদ্ধের আগেই আমার মস্তিষ্কের সুক্ষ্মতম কোষটিকে নাড়িয়ে যুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায় করে নেয়। জ্ঞানতাত্ত্বিক সেই লড়াইটা কী রকম? মনোজগতে উপনিবেশের বাস্তবতায়, লেখালেখির মূল্য কোথায়? সাহিত্য, বিশেষত আফ্রিকান সাহিত্য তাহলে কি নিয়ে লড়াই করবে?

উত্তর-আধুনিক বিতর্কের একটা ফলাফল অনুযায়ী, নিঃসন্দেহে সত্যের ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাখ্যার ওপর লেখালেখির গুরুত্ব বাড়ছে। এই উত্তর-আধুনিক বিতর্কের প্রবণতাই হলো, গৃহীত বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা যে কোনো প্রচলিত কেন্দ্র্রীয় মতবাদকে খারিজ করে দেয়া। আধুনিক বিশ্বের চিন্তাবিদগণ তর্কাতীত নৈতিক সত্যকে অনেক আগেই বাদ করে দিয়েছেন। ফলে যে শর্তগুলোর ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট প্রেক্ষাপটগুলোতে ধারণা ও চিন্তাগুলো সত্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে-সেই শর্তগুলোর নির্ধারণে তাদের বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি নিবদ্ধিত হয়েছে। সত্যের এই নতুন ধারণা, বিশ্বব্যাপী বহুমুখি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে প্রায় একটি আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। যা কি না ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিজয়ীকে বিশ্বব্যাপী সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখার পথকে প্রশস্ত করেছে।

সত্য ও ক্ষমতার প্রশ্নে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরাসি দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী মিশেল ফুকো’র নাম প্রথমেই সামনে চলে আসে। তিনি তার লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে সত্য ও ক্ষমতার মধ্যের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করেছেন। সেইসঙ্গে সমাজে স্বতন্ত্রদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের সত্য উৎপাদন সম্পর্কে আলোকপাত করেন। ১৯৭০ সালের এক সাক্ষাৎকারে মিশেল ফুকো সত্য ও ক্ষমতার সম্পর্ক বিষয়ে তার ধারণার সংক্ষিপ্ত একটা সারমর্ম টানেন। তা হচ্ছে, সত্য ক্ষমতার বাইরের কিছু নয়, কিংবা ক্ষমতা অনুপস্থিতিও নয়। বর্তমান বিশ্বে সত্য হচ্ছে এমন একটা কিছু, যা শুধু দ্বন্দ্বের বহুমুখি ধরনের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং এটা ক্ষমতার সঙ্গে প্রতিনিয়ত সম্পর্কিত। প্রতিটি সমাজেই সত্যের একটা অবস্থা আছে।

ভবিষ্যৎ পুনঃআলোচনায় যে মিথের ইতিহাস ও কার্যক্রম উঠে আসবে, তার ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক হলো, সত্য কোনো মুক্ত আত্মার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত নয়। এ ধারণা ঘেরাটোপে থাকা নিঃসঙ্গ শিশু, কিংবা বিশেষ অধিকার বলে যারা নিজেদের মুক্ত করেছে তাদের ক্ষেত্রেও নয়। সত্যের একটা সাধারণ রাজনীতি আছে। রাজনীতিটা হলো : সেইসব জ্ঞানতত্ত্ব যা সত্য হিসেবে স্বীকৃত ও ক্রিয়াশীল, একটা কিছুর সত্য ও মিথ্যার ভাষ্য তৈরিতে সক্ষম কৌশল ও উদাহরণ, যার দ্বারা প্রতিটি অনুমোদিত হয়, সত্যের মূল্য অর্জনকারী নিয়ম ও পদ্ধতি, সেইসব উক্তিগুলো যা সত্য হিসেবে কী বিবেচিত হবে তা বদলে দেয়। সেজন্য সত্য পরিবর্তনশীল এবং যখন যেখানে প্রয়োজন তাকে উৎপাদন করা সম্ভব। তাই যাদের হাতে বিপুল পরিমাণ ক্ষমতা একচ্ছত্র, অবস্থানগতভাবেই (তারা) গ্রহণযোগ্য জ্ঞানতত্ত্ব তৈরি করেন। (মিলেশ ফুকো পাঠ ও বিবেচনা/পারভেজ হোসেন সম্পাদিত/সংবেদ)

ফুকো তার ধারণায় উল্লেখ করেন, প্রতিটি সমাজই তার নিজস্ব সত্যের শাসন থাকে এবং অবশ্যই, তার পর্যবেক্ষণের নির্ভুলতা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি, অন্যান্য কারণ সত্যেও আফগানিস্তানের মুসলিমের জন্য সবচেয়ে মৌলিক ও অনস্বীকার্য সত্য যে, সেখানে একজন মাত্র ঈশ্বর আছেন। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে সৃষ্ট সীমান্তের ওপারে ভারতের লক্ষ-কোটি মানুষের দ্বারা তা উপহাসের স্বীকার হবে। খুব স্বাভাবিকভাবে সব সমাজ তার সত্যের আলাদা-আলাদা রূপ সম্প্রসারণের মাধ্যমে উপকৃত হয়। তবে প্রতিটি সমাজ অন্য সমাজে তার সত্যের গ্রহণযোগ্যতা আদায়ে চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানতত্ত্বের যুদ্ধ অবসম্ভাবী করে তুলেছে। ঠিক এই কারণেই, সব তত্ত্বীয় মূলনীতি নিজের বাস্তব সত্য বিশ্বে তুলে ধরার জন্য পূর্বের অবদমিত জনগোষ্ঠীকে অতীত লিখনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আফ্রিকা, আফ্রিকার সাহিত্য কিংবা এখানে আলোচ্য চিনুয়া আচেবে নিয়ে কথা বলতে গেলে, অবশ্যসম্ভাবীভাবে আমাদের সত্যের রাজনীতি ও জ্ঞানতত্ত্ব সম্পর্কে এইটুকু জ্ঞান রাখতেই হয়। কারণ, চিনুয়া আচেবে একজন আফ্রিকান লেখক এবং যিনি মনে করেন, আফ্রিকার ঔপনিবেশিক শক্তিরা আফ্রিকা সম্পর্কে সারা বিশ্বে ক্রমাগত ভুল তথ্য দিয়ে গেছে। ফলে বিশ্বে আফ্রিকা সম্পর্কে মিথ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে।

ফুকো দেখিয়েছেন যে, জ্ঞান সংগ্রহ ও দ্রুত বংশবিস্তার সত্য নির্মাণকে এগিয়ে নেয় এবং তা ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণকে নির্ধারণ করে। কিংবা জ্ঞান অবস্থার বাস্তবতার সঙ্গে সব যোগাযোগ বজায় রাখায় খুব কম গুরুত্বই বহন করেছে, সত্য সর্বদাই তৈরি হয়েছে এবং ক্ষমতাশীন প্রভুর হাতেই তা থেকে গেছে।

বিষয়টা জ্ঞানতাত্ত্বিক এডওয়ার্ড ডব্লিউ. সাঈদ আরো ভালোভাবে দেখিয়েছেন। তিনি তার ‘ওরিয়েন্টালিজম’ তত্ত্বে বিশ্লেষণের মাধ্যমে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্যকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। আফ্রিকাকে নিয়ে লেখা পশ্চিমা লেখকদের সাহিত্যের দিকে চোখ বুলালেই তার অজস্র উদাহরণ পাওয়া যাবে। আচেবে উল্লেখ করেন, গত পাঁচশ বছর ধরে ইউরোপের সঙ্গে আফ্রিকার সম্পর্ক সাহিত্যের এমন শরীর তৈরি করেছে, যা আফ্রিকাকে খুব বাজে এবং অমানুষিকভাবে উপস্থাপন করেছে।

‘বর্বর’ মোটামুটি এই বিষয়/থিমকে কেন্দ্র করে বিশ্বনন্দিত গোটা কয় লেখকের উপন্যাস পাওয়া যাবে। মোটাদাগে জোসেপ কনরাডের ‘হার্ট অফ ডার্কনেস’, জয়েস ক্যারির ‘মিস্টার জনসন’, কিংবা ভি এস নাইপলের লেখার কথা উল্লেখ করা যায়। এসব সাহিত্যে চোখ দিলেই বোঝা যাবে, তা দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক দিয়ে ‘পশ্চিমা’-এ ঠাসা।

জয়েস ক্যারির ‘মিস্টার জনসন’ উপন্যাসের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরা যায়। উপন্যাসটি সে সময় টাইমস পত্রিকা ‘আফ্রিকার উপরে লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস’ বলে আখ্যায়িত করে।

‘ফাডা হচ্ছে পশ্চিম সুদানের একটি স্থানীয় শহর। এর কোনো সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য বা সুবিধে নেই। এক পর্যায়ে এটাকে বলা যায় খরগোশ প্রতিপালনের বনভূমি থেকে শুরু করে ভোঁদড়ের গর্তের মতো একটা বাসভূমি এবং পরেরটার মতো এতো পরিচ্ছন্নও নয়। নিজের ময়লা স্তূপের ওপরেই এটা তৈরি, প্রাচীনত্বের কোনো আকর্ষণও এর নেই। এর বিবর্ণতা, এর দুর্গন্ধ সবই নতুন-এর মাটির দেয়াল মনে হয় গুটি বসন্তে খেয়ে ফেলেছে। যদি সময় পঞ্চাশ বছর পিছিয়েও যায়, এর অধিবাসীরা কোনো পরিবর্তনই টের পাবে না। ঘরের মেঝেতে ইঁদুরের মতো এরা বেঁচে থাকে। শিল্পের, জ্ঞানের যত মহত্ত্ব, ঔদার্য, বৈচিত্র্য ও সভ্যতার যত সংগ্রাম-যুদ্ধ, সব তাদের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়, তারা যেন কল্পনাতেও এসব স্পর্শ করতে পারে না।’

এই হলো আফ্রিকা নিয়ে লেখা পশ্চিমা সাহিত্যিকের ‘শ্রেষ্ঠ কাজ’। আচেবে ক্যারির ‘মিস্টার জনসন’ প্রথম পাঠের বিরক্তি সম্পর্কে বলেন, ‘আফ্রিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে ক্যারির সীমিত বোঝাপড়া, হার্ট অফ ডার্কনেস-এর বর্ণবাদের প্রতি তার সাড়া উত্তর-ঔপনিবেশিক সাহিত্যের বিধিসম্মত সমন্বিত অংশ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।’

ফলে আফ্রিকা সম্বন্ধে যে ধারণা জন্মে তা আফ্রিকা সম্পর্কে বাকি বিশ্বকে এক প্রকার অন্ধকারেই রাখে। তাহলে আফ্রিকার সম্পর্কে সত্য ধারণা কি করে পাওয়া যাবে? উত্তর হলো, আফ্রিকানদের দ্বারা আফ্রিকার সাহিত্য রচিত হলো। অর্থাৎ ‘ব্যথিতের বেদন বুঝে কি সে জন’। কিন্তু কথা হলো, দীর্ঘ উপনিবেশের তলে থাকার পর, আফ্রিকান সাহিত্যিক হলেই কি আফ্রিকান মানসিকতার হবেন? যেমন ঘানার প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক আয়ি কিউই আর্মা। তার ‘দ্য বিউটিফুল ওয়ানস আর নট ইয়েট বর্ন’ (সুন্দর এখনো জন্মায়নি) উপন্যাসে আমরা দেখি ততোধিক কুৎসার সঙ্গে ঘানা তথা আফ্রিকাকে উপস্থাপন করেছেন। যেমন-

‘বাঁ হাতের আঙ্গুলগুলো তাদের অমনোযোগী এই যাত্রায় মলদ্বার থেকে পিছলে গেল রেলিংয়ের দিকে, যেখানে তাদের মালিক তখন ফিরতি যাত্রা করছে শৌচাগার থেকে নিচের সিঁড়ি দিয়ে ওপরের অফিসে। ডান হাতের আঙ্গুলগুলো তখনো ভেজা মুত্র-পরবর্তী তরলে এবং তেলতেলে গাছের ডাল থেকে বেরুনো বাসি ঘামে। পিওনদের নির্মম তালুগুলো, ওরা যখন ওদের বুজে যাওয়া নাকগুলো ঝেড়ে ভালোভাবে ছড়ানো সিকনি মোছার জন্য সুবিধেজনক জায়গা খোঁজে। যতক্ষণ না হাতগুলো তালের রস এবং সম্পূর্ণ লেহন-অবশিষ্ট থেকে ঘষে পরিষ্কার করে।’

ঔপনিবেশিকতার তাত্ত্বিক ফ্রাঞ্চ ফেনো’র ভাষায় এটা ‘ব্ল্যাক স্কিন, হোয়াই মাস্ক’ জাতীয় সমস্যা। চিনুয়া আচেবে ফেনো’র পুনঃউপনিবেশিকরণ তত্ত্বকে সামনে না আনলেও আরমাকে সমালোচনা করেন। বলেন, আরমার বর্ণনায় ঘানার পঙ্কিলতা এক ধরনের ঠা-া, ?বিদ্বেষপূর্ণ দূরত্ব আছে।

‘আমি আফ্রিকী লেখক নই, বরং কেবল একজন লেখক’ আরমার এই ধরনের বক্তব্যেরও তিনি সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়-এই মানসিকতা পশ্চিম জগতে প্রশংসা কুড়াবে। কিন্তু এটা পরাজয়ের বিবৃতি। মানুষ যখন নিজের কাছে থেকে পালাতে চায়, তখন তার মতো পরাজিত আর কেউ নেই। তিনি জোর দেন-লেখকরাই যদি এমন পলায়নবাদী পথ বেছে নেন, তাহলে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবে কে?

আচেবে মনে করেন, ইউরোপীয় শিল্প ও সাহিত্যের যথেষ্ট কারণ নৈরাশ্য বা বিপর্যয়ের একটা স্তরে পৌঁছানোর। যেটা আফ্রিকার সাহিত্যের ?ও শিল্পের নেই। সবচেয়ে খারাপ হলো আফ্রিকানরা বড়জোর আশাভঙ্গ হতে পারে। প্রযুক্তিগত সাফল্যের চূড়ান্তে উঠার পর হয়তো ইউরোপিয়ানদের মতো আফ্রিকানরাও আধ্যাত্মিক উন্নতিহীন হতাশায় নিমজ্জিত হবে। ‘অথবা কে জানে আমরা অন্যের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই নিশ্চিত বিপর্যয়কে এড়াতেও হয়তো পারি। কিন্তু, আমরা শিখব কি শিখব না-তা নিয়ে এত আগে থেকেই ছুটোছুটি করার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না।’ এ দিক দিয়ে বিবেচনা করলে, আচেবে আফ্রিকান সাহিত্যের সময়কেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মিশেল ফুকোর খানিকটা নৈরাশ্যের বর্ণনার পরও, চিনুয়া আচেবে দৃঢ়ভাবে ক্ষমতা ও সত্যের সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষে। তিনি এখানে লেখকের নৈতিক সততার কথা বলেন, ‘আমি মনে করি, একজন ঔপন্যাসিকের জন্য নৈতিক দায়িত্ব হলো পীড়িতদের নিয়ে কথা বলা।’ ভার্জিনিয়া উলফের ‘এ রুম অফ ওয়ানস ওন’ (নিজের জন্য একটি কামড়া) যেমন অফিসের নারীর যৌন নির্যাতন প্রসঙ্গের গ-ি পেরিয়ে সাহিত্যে নারীবাদী ধারণাকে সম্প্রসারিত করেছে, সেজন্য সত্যের বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় যাওয়া পর্যন্ত মানুষ, সমাজ, অতীত ও বর্তমান সম্বন্ধের সত্য নিয়ে ‘অতীত লিখন’ চালিয়ে যেতে হবে। এজন্য অবশ্যই একজন লেখককে প্রথমেই মনোজগতের উপনিবেশকে উপড়ে ফেলতে হবে।

মনোজগতের উপনিবেশ কীভাবে উপড়ে ফেলবে? আফ্রিকান সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার দিজিব্রিল দিওফ নেমবেতি এক সাক্ষাৎকারে এর একটা ভালো ব্যাখ্যা দেন। ‘আফ্রিকাতে তুষারপাত হয় না, সোনালি চুল আর সবুজ চোখের নারীও নেই। তাই বলে কি আফ্রিকার সোন্দর্য নেই? আফ্রিকান সাহিত্যিককে আফ্রিকার গাছপালা-ছায়ার মাঝে, কালো চোখ-কালো চুলের মধ্যেই সৌন্দর্য খুঁজে বের করতে হবে।’

এজন্য সাহিত্যিকদের নৈতিকতা ও দায়বদ্ধতা সবচেয়ে জরুরি। আচেবে বরাবরই এর প্রতি জোর দেন। যেহেতু আফ্রিকার জনগণ সবাই লিখতে পারেন না, তাই অগ্রবর্তী শিক্ষিত ও সাহিত্যিকদের কাজ হবে তাদের হয়ে গল্পগুলো লেখা। প্রসঙ্গটা দার্শনিক কার্ল মার্কস ও লেনিনের চিন্তার সঙ্গেও মিলে যায়। তাদের এই বিতর্কে মূল কথা হলো, নিপীড়িত মানুষের মাঝেই অগ্রবর্তী মানুষকে খুঁজে বের করা। এই ধরনের অগ্রবর্তী মানুষই রাশিয়াতে কমিউনিস্ট বিপ্লব সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছিল।

সোমালি সাহিত্যিক নুরুদ্দিন ফারাহ্ আচেবের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তার ভাষায়-ঔপনিবেশিক শক্তির বিষয়াবলির তখনই মৃত্যু হয়েছে যখন তাদের (আফ্রিকানদের) জন্মের মধ্যদিয়ে উপনিবেশের লোকজন নিজেদের অধিকার হারিয়েছে।

তাহলে আফ্রিকার ভবিষ্যৎ খুবই চিন্তার বিষয়? আচেবে ভবিষ্যৎ নিয়ে মোটেই হতাশ নন। এমনকি তিনি যখন মেনেও নেন যে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার ওপর সত্যের গল্প নির্ভর করে।

আধুনিক সময়ে ইউরোপ-মার্কিন আমেরিকা নিঃসন্দেহে বিশ্বের প্রধানতম নিয়ন্ত্রক ভূমিকা পালন করছে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও অদূর ভবিষ্যতে, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে নিষ্পেষিত মানুষকেও সামরিক শক্তি অর্জন করতে হবে। সেজন্য ভিন্ন এক কৌশল তৈরি হবে। এই উদ্ধার রহিত পরিস্থিতিতে সেই গল্পই তৈরি হওয়া জরুরি। আচেবে তার প্রথম উপন্যাস ‘থিংস ফল এপার্ট’-এ ব্রিটিশ উপনিবেশ আক্রান্ত হিসেবে নাইজেরিয়ার একটি গ্রামের গল্প বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি পরবর্তীতে কোন ধরনের গল্প বলবেন, তার একটা ইঙ্গিতও দিয়ে দেন। ফলে আফ্রিকার সাহিত্য নিয়ে পশ্চিমা মিথ্যাচারের মুখোশ খসে পড়ে। বিশ্ব জানতে পারে আফ্রিকা আসলে কি, তার নিহিত শক্তি-সৌন্দর্য-সমৃদ্ধি কোথায়।

নিঃসন্দেহে এখন আর সশস্ত্র উপায়ে, সশরীরে কোথাও উপনিবেশ হবে না। কিন্তু স্বাধীন দেশে কিংবা উপনিবেশ-উত্তর দেশে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য ওই দেশগুলোর অস্থিরতা সৃষ্টি, সামরিক ক্যু’র মধ্য দিয়ে স্বাধীন সরকার উৎখাত করা হবে। তারপর সেখানে একটা তাঁবেদারি শাসক বসিয়ে দেয়া হবে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকালেই তা দেখতে পাই। ব্যাপারটা আচেবের সময়ও ছিল। মানচিত্রে বায়াফ্রা নামক দেশের জন্ম ও মিলিয়ে যাওয়া নিয়ে আচেবে লেখন ‘দেয়ার ওয়াজ এক কান্ট্রি’।

উপনিবেশের বাস্তবতা শুধু আফ্রিকায়ই নয়, এখন সারাবিশ্বে বিদ্যমান। তথ্যপ্রযুক্তির বিরাট উল্লম্ফনের পরও মানুষের মনোজগতে উপনিবেশ এতটাই যে, আফ্রিকা বলতে অনেকে স্রেফ একটা রাষ্ট্র মনে করে। আফ্রিকা বলতেই অনগ্রসর, অসুন্দর, ক্লেদ, দুর্ভিক্ষ নিমজ্জিত দরিদ্র জনগণের আবাস মনে করে থাকে। অথচ তারা জানেই না, এটা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি মহাদেশ। প্রাণ প্রাচুর্য ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও সমৃদ্ধ। অপর পক্ষে মানচিত্রে ইউরোপ ও পাশ্চাত্যের টুকরো টুকরো পুরো বিশ্ব মনে করে অনেকে। কারো কাছে তা, একখ- ভূ-স্বর্গ।

আচেবের সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, আফ্রিকার বর্তমান দীন-দশার কারণ ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো নিজের দ্বন্দ্ব নিরসন ও দখল লুণ্ঠনের মাধ্যমে প্রাচুর্য তৈরির লক্ষ্যেই আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়েছে। ইউরোপীয়রা কোথায় কে উপনিবেশ গড়বে তা নির্ধারণের জন্য ১৮৮৪-র নভেম্বর থেকে ১৮৮৫-র ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জার্মানির বার্লিন শহরে নীতিনির্ধারণী পর্যায় সম্মেলন করে। যার ফলে ১৮৮৪ সালে যেখানে আফ্রিকায় মাত্র ১০ ভাগ উপনিবেশ ছিল, ১৯০০ সালে সেখানে মাত্র ১০ ভাগ উপনিবেশমুক্ত থাকে। (সূত্র : মাসিক উত্তরাধিকার/বৈশাখ ১৪২১/বর্ষ ৪২ সংখ্যা ০১)

গল্পের মধ্য দিয়েই এই সত্যও প্রস্ফুটিত হবে। ইতিহাসে বিভিন্নভাবে যাদের চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কথা বলার যেকোনো অধিকার রহিতকরণ হয়েছে, আচেবে তাদের ভাষা দিবেন। এই আগ্রহটা কেবল আচেবের একার প্রশ্ন নয়, তার সমসাময়িক সব লেখক সহকর্মীদেরও একই মত। যেমন সোমালি ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন ফারাহ দেশ সম্বন্ধে লিখনীর মাধ্যমে দেশকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর।

তবে সমাজের কিছুসংখ্যক লোকজন তাদের এই গল্প শুনবে না। আফ্রিকার স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে স্বল্পসংখ্যক ইউরোপীয় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চলে গিয়েছিল, যে সব গ্রুপ সমাজের দলিত মানুষদের চুপ করিয়ে লাভবান হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তারা নাইজেরিয়ার দুর্বল মানুষের উত্থানে আতঙ্ক বোধ করবে। নাইজেরিয়ায় নিপীড়ক ও নিপীড়িতের সম্পর্ক ভিত্তি করেই আচেবের ‘আন্টহিল অফ দ্য সাভানা’র কেন্দ্রীয় থিম গড়ে উঠেছে। যেখানে আমরা দেখি, গল্পের প্রধান চরিত্র ইকিম, একটা অনগ্রসর এলাকার অধিবাসী এবং একটা পত্রিকার সম্পাদক। তিনি তার পত্রিকায় পিছিয়ে পড়া মানুষের সংগ্রামের খবর ছাপছেন। আবার পদাধিকার বলে কিংবা সমাজে অবস্থানগত কারণে তিনি আধিপত্যশীল গোষ্ঠীর দেয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঔপনিবেশিকদের দ্বারা নিহত হচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে আফ্রিকাতেই উপনিবেশিত ও বিশ্ব মোড়লদের চরিত্র উন্মোচন করেন যে, চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে আসছে। তাঁবেদারি করলেও, পশ্চিমারা কলমকে, সত্যকে ভয় পায়; অবিশ্বাস করে।

চিনুয়া আচেবে তার সাহিত্যে দেখান যে, ঔপনিবেশিক দেশে একজন যোদ্ধা-সে সন্ত্রাসী নাকি স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে পরিগণিত হবেন তা নির্ভর করে, তার সংগ্রামের ধরনকে বিশ্বে প্রচার বা উপস্থাপন ক্ষমতার ওপর। বিষয়টা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা যায়। অধুনা স্তিমিত নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চাকারীরা দেখান যে, ব্রিটিশ শাসকরা তাদের দলিলপত্রে যাদের সন্ত্রাসী বলেছে তারা মূলত স্বাধীনতা সংগ্রামী। যাদের তারা ডাকাত বলেছে, তারা মূলত সশস্ত্র বিপ্লবী। একইভাবে, আর্যরা গল্পে ভারতে তাদের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর রূপক ব্যবহার করে এবং তাদের বধ করার মনঃস্তাত্বিক বৈধতা আদায় করে নেয়। অর্থাৎ ক্ষমতাবলে এক সত্য তৈরি করে ও তাদের প্রভাব জারি রাখে। আফ্রিকায় এই সত্য-ক্ষমতা ও ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলেন আচেবে।

প্রায়শ ভাষার প্রশ্নে চিনুয়া আচেবেকে ভুল বোঝা হয়ে থাকে। এটা ঠিক তিনি ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় সচেষ্ট। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি একটি ভাষা, এর মাধ্যমে আপনি আপনার হৃত গৌরবকে পুনরুদ্ধার করতে পরেন।’ আবার একই সময় আফ্রিকান আরেক শক্তিশালী সাহিত্যিক নগুগি ওয়া থিওঙ, ইংরেজি ছেড়ে স্থানীয় ভাষায় লিখার সিদ্ধান্ত নেন। এমনকি তিনি পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত ‘জেমস নগুগি’ নামও ছেড়ে দেন। অনেকে নগুগির তথ্য আচেবের প্রতিপক্ষে দাঁড় করাতে চান। কিন্তু আমার মনে হয়, এখানে ভুল বোঝার অবকাশ খুব কমই আছে। আচেবে ইংরেজি বলতে পশ্চিমা ধারা অনুকরণে ইংরেজি চর্চায় উৎসাহী নন। তিনি ভাষার অংশগ্রহণের দিকটি সামনে নিয়ে আসেন। তিনি মনে করেন, ভাষা কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। ভাষা একটি মাধ্যম, এখানে যে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই তার ইংরেজি উচ্চারণ, বাক্যগঠন হবে আফ্রিকানদের মতো। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি আফ্রো-ইংলিশ। যে কারণে আফ্রিকার প্রভাবশালী সাহিত্যিক আমোস টুটুওলাকে একান্ত নিজের মতো করেই ইংরেজিতে সাহিত্যচর্চা করতে দেখি। এটা অনেকটা সাহিত্যে আফ্রিকানদের অংশগ্রহণের মতো ব্যাপার। এক সময় তো ভাবাই হতো, সাহিত্যে বিশেষত ইংরেজি সাহিত্যে আফ্রিকানদের অংশগ্রহণই রহিত হবে। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব সাহিত্যে তাদের উত্থান যেকোনো মহাদেশের জন্য সম্মানের।

লেখকের এই এগিয়ে যাওয়ার কারণ তার পর্ববেক্ষণ ক্ষমতা, সংবেদনশীলতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তা। মার্কসবাদী শিল্পতাত্ত্বিক আর্নস্ট ফিশারের বলেন-দ্বৈততা শিল্পীর কর্মপদ্ধতিতেও কি পরিলক্ষিত হয় না? একদিকে বাস্তবতায় বিলীন হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণ করার আনন্দ-উত্তেজনা। এ ব্যাপারে যেন ভুল না ঘটে যে, একজন শিল্পীর কাজ অত্যন্ত সচেতন, মননশীল এক প্রক্রিয়া; যার শেষে একটি শিল্পকর্ম আত্মপ্রকাশ করে বিনির্মিত বাস্তবতা হিসেবে মোটেই কোনো উন্মত্ত অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট বিষয় হিসেবে নয়।’(সূত্র : দি নেসেসিটি অব আর্ট/আর্নস্ট ফিশার)

চেক সাহিত্যিক মিলান কুন্ডেরা একবার বলেন, ‘সাহিত্য হচ্ছে বিস্মৃতির বিরুদ্ধের লড়াই।’(দি আর্ট অব দ্য নভেল/মিলান কুন্ডেরা)। এই বিস্মৃতি আফ্রিকার জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। শত শত বছর ধরে সেখানে ঔপনিবেশিক শক্তির শাসন আফ্রিকার নিজস্ব সংস্কৃতি-রীতিনীতি অনেক ক্ষেত্রে বিস্মৃতি ঘটিয়েছে। লিখনী বিস্মৃত সেই ঐতিহ্য আফ্রিকার অতীত সমৃদ্ধি ও সায়ম্বর দিক তুলে ধরে। আফ্রিকান লেখকরা অতীত লিখবেন। বিশ্ব দরবারে তুলে ধরবেন। আচেবে সেই লড়াইয়ের অগ্রনায়ক।

বিশ্ব ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জ্ঞানতত্ত্ব তৈরি ও সত্য উপস্থাপনের পাশাপাশি সাহিত্য আর কি করতে পারে তা আফ্রিকার প্রখ্যাত কবি সাঁগরের একটি কবিতা থেকে বোঝা যাবে। আচেবে তার ‘আফ্রিকা ও তার লেখক’ শীর্ষক প্রবন্ধে এই কবিতাটির উদ্ধৃতি দেন।

‘মুখোশের কাছে প্রার্থনা’ কবিতা কবি সাঁগর লিখেন-

‘শোন, কেননা পৃথিবীর এই নবজন্ম

আমরা হচ্ছি সেই খমির যা মেশাতে হয় সাদা ময়দায়

না হলে কেই বা এই পৃথিবীকে শেখাবে ছন্দ,

যে পৃথিবী যন্ত্র ও মারণাস্ত্রের চাপে মৃত?

আর কেই বা আনন্দের সেই ধ্বনি তুলবে-যা কিনা

নতুন এক ভোরে জাগিয়ে তোলে মৃত ও প্রাজ্ঞজনকে?

বলো-আর কেই বা আশাছিন্ন মানুষকে ফিরিয়ে দেবে জীবনের স্মৃতি?’

(ছায়াচ্ছন্ন হে আফ্রিকা/সম্পাদিত)

অলাত এহ্সান : গল্পকার, প্রবন্ধ লিখেন।

লেখক : সাংবাদিক, গল্পকার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist