আলী হাবিব

  ২৫ মে, ২০১৭

স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ

একটা জোক দিয়ে শুরু করা যাক। যে সময় জোকটি খুব চালু ছিল বাংলাদেশে। তখন প্রবল প্রতাপে ক্ষমতায় ড. ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই সময়ে রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আজকের প্রেসিডেন্ট পুতিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্র্রের প্রেসিডেন্ট তখন বহুল আলোচিত জুনিয়র বুশ। বুশ-পুতিনের নামের সঙ্গে আমাদের বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান ফখরুদ্দিন আহমদের নাম এলো কেন? কারণটি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। কারণটি হলো, প্রত্যেকেই ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ঈশ্বর তাঁদের দেখা দিতে রাজি হয়েছিলেন। শুভদিন দেখে তিনজনই হাজির হলেন ঈশ্বরের দরবারে। ঈশ্বর প্রত্যেককে একটি করে প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন। একটির বেশি প্রশ্ন করা যাবে না। নো সম্পূরক প্রশ্ন। নো প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন। শর্ত মেনে তিনজনই হাজির হলেন ঈশ্বর সমীপে। কিংবা এভাবেও বলা যায়, তাঁদের তিনজনকেই হাজির করা হলো। ক্ষমতা সবখানেই সবাইকে এগিয়ে রাখে। কাজেই জুনিয়র বুশ প্রথমে প্রশ্ন করার সুযোগ পেলেন। তিনি ঈশ্বরকে প্রশ্ন করলেন, তাঁর দেশ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শান্তি আসবে কবে? ঈশ্বর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থেকে জবাব দিলেন, ৫০ বছর পর। ঈশ্বরের জবাব শুনে বুশ সাহেব কাঁদতে শুরু করলেন। কাছাকাছি ঈশ্বরের অনুচর বা দেবতা যারা ছিলেন, তাঁরা কান্নার কারণ জানতে চাইলেন। বুশ বললেন, তিনি তো আর সেই শান্তিময় আমেরিকা দেখে যেতে পারবেন না। এবার পুতিন সাহেবের পালা। বুশের প্রশ্ন, ঈশ্বরের উত্তর ও সেই জবাব শুনে ভদ্রলোকের কান্না দেখে পুতিন সাহেব বোধ হয় একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তিনিও একই প্রশ্ন করে বসলেন। তাঁর রাশিয়ার শান্তি আসবে কবে? পুতিনের প্রশ্নের জবাবে ঈশ্বর জানালেন, ১০০ বছর পর। জবাব শুনে পুতিনও একদিকে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন। কী হবে? তিনিও তো একটি শান্তিময় রাশিয়া দেখে যেতে পারবেন না। এবার ফখরুদ্দিন সাহেবের পালা। তিনি বেশ বুকটান করে ঈশ্বরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। একই প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশে কবে শান্তি আসবে? বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রশ্ন শুনে ঈশ্বর নিজেই কাঁদতে শুরু করলেন। বলে রাখি, এই জোকটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। কারণ বাংলাদেশকে নিয়ে কান্নার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিশ্বের অনেক দেশ এখন উন্নয়নের মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে দেখতে চায়।

অনেক স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীনতার সাড়ে চার দশক পার করছে। এই দীর্ঘ সময়ে কোথায় যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের? কোথায় এসেছে বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশে অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ নিয়ে অনেক আলোচনা। কানাডায় এক সেমিনারে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ ২৩টি আলোচিত দেশের মধ্যে থাকবে। বাংলাদেশকে তো অনেক আগের ইশায়ার অর্থনীতির উদীয়মান বাঘ হিসেবে বলা হয়েছে। দেশে-বিদেশে যেমন বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই, তেমনি স্বর্গপুরীতেও বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনায় হয়ে থাকে। স্বয়ং পরমেশ্বর বাংরাদেশ নিয়ে ভাবেন। একাধিকবার তিনি তাঁর দূত পাঠিয়েছেন বাংলাদেশে। চিত্রগুপ্ত, স্বর্গের পেশকার হিসেবে যাঁর বিশেষ পরিচিতি, তিনিও বাংলাদেশে এসে রিপোর্ট করেছেন পরমেশ্বরের কাছে। সে রকম কিছু রিপোর্ট নিয়েই এই নিবন্ধ। অনেকদিন আগের কথা। আবার অনেকদিন আগের না-ও হতে পারে। স্বর্গের পেশকার চিত্রগুপ্তকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিলেন পরমেশ্বর। অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা নিয়ে স্বয়ং পরমেশ্বরও চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি তখন তাঁর পারিষদদের কাউকে কাউকে পাঠিয়ে দেন। তাঁরা বাংলাদেশে এসে খবরাদি সংগ্রহ করে ফিরে যান। পরমেশ্বরের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বাংলাদেশে চিত্রগুপ্তের শুভাগমন ঘটেছে বহুবার। দেশ অচল করে দেওয়া হবে এমন এক ঘোষণায় তিনি একবার চিত্রগুপ্তকে পাঠালেন বাংলাদেশে। কী করে দেশ অচল হয়, তা দেখে তাঁকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে হবে। চিত্রগুপ্ত এসে দেখে ও শুনে লিখলেন, এমনিতেই এখানে মানুষের চলাফেরার মধ্যে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকায় আগের মতোই যানজট আছে। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা শ্রমসময় নষ্ট হচ্ছে। এখানে রাজনীতি আছে। সরকারি ও বিরোধী দল নিজেদের অবস্থানে বেশ ভালোই আছে বলে মনে হয়। রাজনৈতিক উš§াদনাও কিঞ্চিত বৃদ্ধি পেয়েছে বা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে কারো কারো কথা ও কাজের বিবেচনা করে সেটাকে উš§াদের কাজ বলে বিবেচনা করা যায় কি না তা ভেবে দেখার বিষয়। চিত্রগুপ্ত আরো লিখেছেন, পরমেশ্বর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামে এক কবি সম্পর্কে জানেন। বাঙালির কাব্যকলার এই ঠাকুর তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন, ‘ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,/পোষ-মানা এ প্রাণ/বোতাম-আঁটা এ জামার নিচে/শান্তিতে শয়ান।/দেখা হলেই মিষ্ট অতি/মুখের ভাব শিষ্ট অতি/অলস দেহ ক্লিষ্টগতি-/গৃহের প্রতি টান।/তৈল-ঢালা সিগ্ধ তনু/নিদ্ররসে ভরা,/মাথায় ছোট বহরে বড়ো বাঙালি সন্তান।’ কবির এই কবিতাটি আমার বোধের অগম্য। না, সবটুকু নয়। কেবল ওই মাথায় ছোট-এই দুটি শব্দের অর্থ বুঝতে আমি অপারগ। কী বোঝাতে চেয়েছেন কবি? মাথায় ছোট মানে কি বেঁটে, নাকি তাঁর মাথার আকৃতি ছোট, নাকি মাথার ভেতরে বস্তুর আকাল? বাংলাদেশে আজকাল মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি-এসব শব্দ খুব চলছে। শরীরের মধ্যপ্রদেশ স্ফীত হওয়ার মতোই। এসব স্ফীতি নাকি জনস্বার্থবিরোধী।

ঠিক এ রকমভাবে আগেও একবার পরমেশ্বর ডেকে পাঠান চিত্রগুপ্তকে। বলেন, তাঁকে যেতে হবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। বাংলাদেশের কথা শুনে চিত্রগুপ্তের মুখ শুকিয়ে গেল। পরমেশ্বর তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, চিন্তা কিসের। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। সেখানে সবাই মিলে স্থির করেছে রাজধানীকে কলোল্লিনী তিলোত্তমা করবে। চারদিকে সাজ সাজ রব। একবার গিয়েই দেখ, তোমার হয়তো আর আসতে ইচ্ছে করবে না। এর আগেও তো তুমি বলেছ, মর্ত্য তোমাকে টেনেছে। কাজেই হৃষ্টচিত্তে চলে যাও।

শুভদিন দেখে চিত্রগুপ্ত রওনা হলেন। স্বর্গের দেবতা। রওনা হওয়া মানে ইচ্ছে প্রকাশ করা। ইচ্ছে প্রকাশ করলেই স্বর্গ থেকে সোজা মর্ত্যে আবির্ভাব। নো ভিসা, নো পাসপোর্ট। সাত-সকালে ঢাকায় নেমে তো তাঁর ছোখ ছানাবড়া হওয়ার মতো অবস্থা। এ কোন ঢাকাকে দেখছেন তিনি। অনেক আগে যখন এসেছিলেন, তখনকার ঢাকার সঙ্গে আজকের ঢাকার অনেক তফাৎ। আজকের ঢাকার সঙ্গে সেদিনের ঢাকাকে মেলানোই যায় না। একটা আবাসিক হোটেলে গিয়ে নিজের থাকার জন্য একটা ঘর ঠিক করে চিত্রগুপ্ত ঢাকা শহর দেখতে বের হলেন। হোটেল থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই একটা বাস পেয়ে গেলেন। সেটাতেই চেপে বসলেন তিনি। অনেক দিনের অভ্যেসমতো একটু ঝিমুনিতে পেয়েছিল বোধহয়। কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকিয়ে দেখেন, যেখান থেকে বাসে উঠেছিলেন, বাসটি সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। বাসের মধ্যে সবাই ঘামছে। চিত্রগুপ্তের তো ঠা-া-গরম নেই। স্বর্গের দেবতাদের ওসব থাকে না। তিনি বাসের মধ্যে বসে আছেন। বাসটা চলতে শুরু করল। একটু একটু করে এগোচ্ছে। বাসের ভেতরের লোকজন বলাবলি করছে, জ্যাম। চিত্রগুপ্ত পাশের লোককে জিজ্ঞেস করলেন ভাই জ্যাম কী? ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘জ্যাম বোঝেন না? ট্র্যাফিক জ্যাম। দেখছেন না রাস্তার কী অবস্থা। নতুন এসেছেন নাকি?’ চিত্রগুপ্তের ইচ্ছে ছিল, আগে শহরটা ঘুরে দেখবেন। এদিক থেকে ওদিকে যাবেন। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠল না তাঁর। মতিঝিল থেকে এয়ারপোর্ট পেরিয়ে উত্তরার দিকে যেতেই দিনের অর্ধেকটা পেরিয়ে গেল। তিনি ঠিক করলেন, গাড়িতে আর চড়বেন না। হেঁটেই চলাচল করবেন। বুড়ো শরীরের জন্য সেটা একটা ঝক্কি। তা হয় হোক। তিনি হেঁটেই ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে দেখবেন। হাঁটতে শুরু করলেন চিত্রগুপ্ত। কিন্তু এ কী! ঢাকার রাস্তাঘাট সব কাটা কেন? চিত্রগুপ্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। এ রাস্তা ছেড়ে ও রাস্তায় ঢুকলেন। সেখানেও খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তিনি ভেবেছিলেন এখানে মাটির নিচে বোধহয় গুপ্তধন আছে। তাই রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে। কিন্তু শহরের অধিকাংশ রাস্তার নিচে কি গুপ্তধন থাকতে পারে? তিনি একজনকে ধরে বসলেন। জানতে চাইলেন, ভাই এভাবে রাস্তা কাটা হচ্ছে কেন? ভদ্রলোক অবাক চোখে চিত্রগুপ্তের দিকে কিছুক্ষাণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর হঠাৎ যেন ক্ষেপে গেলেন। উন্নয়ন বোঝেন, উন্নয়ন-জানতে চাইলেন ভদ্রলোক। চিত্রগুপ্ত মাথা নেড়ে জানালেন, এ বিষয়ে তিনি অজ্ঞ। ভদ্রলোক বললেন, উন্নয়ন হচ্ছে। যত খোঁড়া হবে তত উন্নয়ন। বুঝলেন? ওই যে বোর্ডে লেখা আছে দেখুন গিয়ে। যত্তসব। ভদ্রলোক গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। চিত্রগুপ্ত বোর্ডের সামনে গিয়ে দেখলেন সেটাতে লেখা আছে, ‘উন্নয়ন কাজ চলিতেছে’।

এরপর আবারও বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় আসতে হয়েছে চিত্রগুপ্তকে। যথারীতি সেবারও ডেকে পাঠিয়ে পরমেশ্বর তাঁকে অ্যাসাইনমেন্ট বুঝিয়ে দিলেন। চিত্রগুপ্ত একটু আপত্তি করতে গিয়েও বুঝলেন, পরমেশ্বরের ইচ্ছের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললেন। তাঁর মনের ভাব বুঝতে পেরে পরমেশ্বর বললেন, এই তো তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছ। কাল সকালেই টুপ করে নেমে পড়ো।

‘টুপ করে নেমে পড়ো’ কথাটা পরমেশ্বর ভুল বলেননি। স্বর্গের দেবতারা ইচ্ছে করলেই যেকোনা জায়গাতে চলে যেতে পারেন। চিত্রগুপ্তেরও ইচ্ছে হলো এবারও তিনি প্রথমেই ঢাকা শহরে যাবেন। বাংলাদেশের রাজধানী বলে কথা। এরপর না হয় সারাদেশ ঘুরে দেখবেন।

ঢাকা শহরে নেমেই তাঁর চোখ জুড়িয়ে গেল। বিভিন্ন জায়গাতে বড় বড় ফ্লাইওভার দেখে চিত্রগুপ্ত রীতিমতো মুগ্ধ। আগে যেসব রাস্তায় যানজট দেখেছেন, আজ সেখানে কোনো যানজট নেই। ফ্লাইওভার দিয়ে সারি সারি গাড়ি চলে যাচ্ছে। শহরে যে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে, তা বুঝতে বাকি বইল না তাঁর। তিনি একটা বাসে উঠে বসলেন। বাসটা একটা ফ্লাইওভার পার হয়ে এগিয়ে চলল। একটা পার হয়ে আরেকটা ফ্লাইওভার। সেটা পার হয়ে আরেকটা। বেশ মজা পেয়ে গেলেন চিত্রগুপ্ত। আগে তিনি এমনটা দেখেননি। সেটা তৃতীয় ফ্লাইওভার পার হতেই চিরচেনা সেই জ্যামে পড়ে গেলেন তিনি। আগেরবারে এসে জ্যাম শব্দটার অর্থ তাঁকে আরেকজনের কাছে জিজ্ঞেস করতে হয়েছিল। জ্যামে পড়েও নির্বিকার তিনি। সবাই দরদরিয়ে ঘামলেও তাঁর কোনো ভাবান্তর নেই। তাছাড়া কোথাও যাওয়ারও কোনো তাড়া নেই তাঁর। ঘুরতে বেরিয়েছেন। ঘুরে ঘুরে দেখবেন। একসময় নেমে পড়লেন বাস থেকে। হাঁটতে শুরু করলেন সামনের দিকে। এ জায়গাটা কেমন চেনা চেনা মনে হলো তাঁর কাছে। পথচারী একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, জায়গাটার নাম হাতিরঝিল। আগে এ জায়গাটা এমন ছিল না। এখন সংস্কার করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে যেতে যেতে জায়গাটা চিত্রগুপ্তের বেশ পছন্দ হয়ে গেলে। তখন সন্ধ্যা নেমেছে। হাতিরঝিলের রাস্তার পাশের বাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। হালকা আলোয় বেশ মায়াবি একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চিত্রগুপ্ত দেখলেন জোড়ায় জোড়ায় তরুণ-তরুণীরা আসছে। রাত বাড়তে শুরু করেছে। চিত্রগুপ্ত একটু নিরিবিলি একটা জায়গা বেছে নিলেন। ঝিলের ধারে সবুজ ঘাসের ওপর বসে পড়লেন। সেখানে বসেই ধ্যানস্থ হলেন স্বর্গের বুড়ো পেশকার। বাংলাদেশের অবস্থাটা দেখতে চান তিনি। স্বর্গের দেবতারা এভাবে ধ্যানস্থ হয়ে অনেক কিছু দেখতে পারেন। ধ্যানস্থ চিত্রগুপ্তের চোখের সামনে ভেসে উঠতে শুরু করল বাংলাদেশের বর্তমান চিত্র। সেই চিত্র দেখে ভবিষ্যতের কথা ভেবে ধ্যান ভেঙে গেল তাঁর।

তিনি বিড়বিড় করে তাঁর রিপোর্ট পাঠাতে শুরু করলেন। টেলিপ্রিন্টারের মতো তা পরমেশ্বরের দরবারে ছাপা হতে লাগল।

রিপোর্টে লেখা হলো, ‘পরমেশ্বর, রাজধানী ঢাকায় আবার সেই চিরচেনা যানজট। মালিবাগ-মগবাজারের রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলা দুষ্কর। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। তারপরও মানুষের মনে স্বস্তি। কিন্তু এই স্বস্তি কতদিন থাকে এই ভেবে আমি চিন্তিত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলার কথা আপনার স্মরণে আছে। পরের বছর ১৭ আগস্ট জঙ্গি বোমায় কেঁপে উঠেছিল বাংলাদেশ। ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল জঙ্গিরা। বড় বড় জঙ্গি সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হয়েছে। অনেক নেতার জেল হয়েছে। দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছি পরমেশ্বর, জঙ্গিরা আবার নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। নতুন কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা। ছদ্মবেশে মিশে যাচ্ছে জনস্রোতে। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল নিশ্চয় এই খবরে উল্লসিত। তারা হয়তো জঙ্গি উত্থানের অপেক্ষায় আছে। রাজনৈতিকভাবে যারা অগ্রসর হতে পারেনি, তারা কি জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেবে? বাংলাদেশ কি নতুন করে আবার জঙ্গি আতঙ্কের দেশ হতে যাচ্ছে পরমেশ্বর! আশার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় উš§াদনায় বিশ্বাসী নয়। এই উদারনৈতিক রাজনৈতিক চেতনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

চিত্রগুপ্ত তাঁর প্রতিবেদনে জানালেন, বাংলাদেশকে অনেকে সব সম্ভবের দেশ বলে পরমেশ্বর। আশার কথা হচ্ছে, এ দেশের মানুষের মতো আশাবাদী মানুষ আমি কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। এ দেশের মানুষের মতো স্বপ্ন দেখতে অন্য কোনো দেশের মানুষ পারে কি না, আমি জানি না। বাংলাদেশের সব মানুষ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে পরমেশ্বর। স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ-আলোকিত, উজ্জ্বল দিনের স্বপ্ন।

লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক, ছড়াকার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist