মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব

আজ মাগফিরাতের দ্বিতীয় দিন। রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু হয়ে গেছে। ফিতরা বিষয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। শুরুতেই সরকারিভাবে নির্ধারিত ফিতরার কথা জানিয়ে রাখি। হিজরি ১৪৪৫ সনের সাদকাতুল ফিতরের হার জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে আয়োজিত জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

আমরা জানি, ফিতরা আদায় করাও মাগফিরাত লাভেরই একটি মাধ্যম। ফিতরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। ফিতরা জাকাতের মতোই প্রতি বছর বান্দাকে দিতে হয়। অসহায় ও গরিব মিসকিনদের দান করতে হয়। আরবিতে একে সাদকাতুল ফিতর বলে। যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে ৭ ভরি সোনা বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা সমমূল্যের ব্যবসাপণ্য থাকে। তাকে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হলো তার নিজের ও পরিবারের ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করবেন।

ফিতর কী? ফিতর মানে ভাঙা। রোজা ভাঙা বা রোজা শেষ করার পর এই ফিতরা আদায় করতে হয়। এ কারণেই একে ফিতরা বলে। রোজা পালনের ক্ষেত্রে বান্দার নানা রকম ভুল থেকে পরিশুদ্ধির জন্যই এই ফিতরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক মাস রোজা পালনের ক্ষেত্রে অনেক ভুল হয়। অনেক ত্রুটি হয়। এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পরিত্রাণের জন্যই ফিতরাব্যবস্থা। অসচ্ছল, অসহায় ব্যক্তিদের মধ্যে ঈদগাহে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করার নিয়ম। যা প্রত্যেক বান্দার জন্যই একান্ত আবশ্যকীয়।

হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিমদের স্বাধীন ও ক্রীতদাস পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড় সবার জন্য এক সা’ (প্রায় সাড়ে ৩ কেজি) খেজুর বা জব খাদ্য (আদায়) ওয়াজিব করেছেন। (বোখারি ও মুসলিম)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন নবী করিম (সা.)-এর জামানায় আমরা সাদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল- জব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বোখারি)

তিনি আরো বলেন, আমরা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু। যেমন- এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ। (বোখারি)

হজরত ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)-এর মতে, অধিক মূল্যের দ্রব্য দ্বারা ফিতরা আদায় করা উত্তম; অর্থাৎ যা দ্বারা আদায় করলে গরিবদের বেশি উপকার হয়, সেটাই উত্তম ফিতরা। বাস্তবেই গরিব উপকৃত হয় এমন বস্তু দিয়ে ফিতরা আদায় করা উচিত।

সাধারণত, ইসলামি শরিয়া মতে, মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিশমিশ, পনির ও জবের মধ্য থেকে যেকোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজারমূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন।

আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা)। খেজুর, কিশমিশ, পনির ও জবের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রামের (এক সা) মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এসব পণ্যের বাজারমূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।

ফিতরা নিজের কল্যাণের জন্যই দিতে হবে। ফিতরা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অলসতা কাম্য নয়। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় ফিতরা দিয়ে দেওয়া উত্তম। অনেক সময়, নিজের এলাকায় বা কাছের মানুষের দেওয়ার নাম করে ফিতরা দিতে গিয়ে সময় ক্ষেপণ করা হয়। তা ঠিক নয়। আল্লাহতায়ালা ফিতরার আমলকে যথাযথভাবে করার তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মাদরাসাতু ইকরা দারুল উলুম হবিগঞ্জ [email protected]

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফিতরা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close