হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

  ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন

হাটহাজারীতে শুরু মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পাটির নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। হাটহাজারী আসনে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন ছাড়া ও সিটি করপোরেশনের ১নং ও ২নং ওয়ার্ড এ আসনের অন্তর্ভুক্ত। বিএনপি চাইছে, তাদের ২০০৮ সালে নির্বাচনে হারানো আসন ফিরে পেতে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় মহাজোটের মন্ত্রী হিসেবে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সরকারের নানামুখী উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করার কারণে আওয়ামী লীগেরও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তাই তারাও চাইছেন তাদের আসন তাদেরই থাকবে।

এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী ঘরানার প্রার্থী মরহুম এম এ ওহাব একবার জয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে আর কোনো সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিএনপি প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৮৬ সালের ৯ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য এমপি নির্বাচিত হয়েছিল।

১৯৯১ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক হুইপ আলহাজ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং একই সালের ১২ জুন মধ্যবর্তী সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আলহাজ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম পরপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে জোটগত নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য এবং কল্যাণ পাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক হয়তো মনোনয়ন পেতে পারেন বলে তার সমর্থকরা প্রচার করছেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালামের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি ১৯৯৬ সালে এ আসন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার এলাকায় সুনাম রয়েছে। মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক মুঠোফোনে বলেন, ‘২০১১ সালে আগস্টে বাংলাদেশ কল্যাণ পাটি জোটে যোগদানের পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাকে নিজ এলাকায় গিয়ে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমার জন্মভূমি হাটহাজারীর মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। বর্তমানে হাটহাজারীতে জোটের প্রার্থী থাকলেও আমি দেশনেত্রীর নির্দেশে কাজ করছি। যাতে জোট থেকে মনোনয়ন পেলে বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনতে পারি।’

অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবার মনোনয়ন চাইতে পারেন। তিনি ২০০১ সালে হাটহাজারী সংসদীয় আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অল্পসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে বিএনপির প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। খবর পেলেই তিনি যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

এ ছাড়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য একসময় উত্তর জেলা ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা দলের দুর্দিনের কান্ডারী হিসেবে পরিচিত, বাস মালিক ফেডারেশনের নেতা আলহাজ মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী মঞ্জুর নামও শোনা যাচ্ছে। তার সঙ্গে এলাকার মানুষের নিবিড় যোগাযোগও রয়েছে। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার সরব উপস্থিতি থাকে। অন্যদিকে মনোনয়ন চাইতে পারেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য আলহাজ ইউনুছ গণি চৌধুরী। তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।

আলহাজ ইউনুছ গণি চৌধুরী বলেন, ‘অবশ্যই আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকলেও দলের হয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছি। তাছাড়া মাদকবিরোধী বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে মাদকের ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টার করছি। তবে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ভালো, না দিলেও যাকে মনোনয়ন দেবেন আমি তার পক্ষ হয়ে যা করার আমি করে যাব।’ অন্যদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করছি। মনোনয়ন পেলে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার সুযোগ পাব।’ তিনি প্রত্যাশা করেন দলের জন্য দীর্ঘদিন তিনি যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন তার পুরস্কার তাকে দল থেকে দেওয়া হবে।

হাটহাজারীতে তিনজন বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। এরা সবাই মনোনয়ন চান। তাদের মধ্যে সাবেক হুইপ আলহাজ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, তবে তিনি অসুস্থ। তবে তার কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা পিতার আদর্শের অনুসারী হিসেবে দল থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। অন্য প্রভাবশালী নেতা সাবেক মন্ত্রী ও মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তার ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলালও মনোনয়ন চাইতে পারেন। তারা পিতা-পুত্র দুজনই দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। তাছাড়া দল ক্ষমতায় থাকাকালে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন।

অন্যদিকে সাবেক চাকসু ভিপি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এস এম ফজলুল হক আগেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, যারা জাতীয়তাবাদী দলের জন্য কাজ করছেন তারাই মনোনয়ন চাইবার অধিকার রাখেন। আমি প্রতিনিয়ত দলের জন্য কাজ করছি। সে হিসেবে দল আমার ব্যাপারে নিশ্চয় আলাদাভাবে বিবেচনা করবে। তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম চৌধুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থাকায় তার জন্য একটি বাড়তি সুযোগ রয়েছে মনোনয়নের ব্যাপারে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হাটহাজারী,চট্টগ্রাম,চট্টগ্রাম-৫ হাটহাজারী আসন,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist