কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় ভোট কারচুপি : ইনু

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে এবারে জিততে পারেননি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। নৌকা মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ১৪ দলের এই হেভিওয়েট প্রার্থী এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রশাসনের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় ভোট কারচুপি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’ অপরদিকে, ওই আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন। তিনি এই বিজয়কে মিরপুর-ভেড়ামারাবাসীকে উৎসর্গ করে বলেন, ‘৭৫র পর এ পর্যন্ত মিরপুর থেকে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা এমপি হতে পারেনি। মিরপুর-ভেড়ামারাবাসী আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করতে চাই।’

টানা তিনবারের সংসদ সদস্য জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩ হাজার ৩ শত ৫৪ ভোটের ব্যবধানে হার মানতে হয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রশাসনের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় ভোট কারচুপি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সারা দেশে একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় নির্বাচন হলেও শেষ পর্যন্ত একভাবে জনগনের অংশগ্রহনসহ সাড়া পাওয়া গেছে। নির্বাচনী কাজটা নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সব জায়গায় কিভাবে নির্বাচন হয়েছে সেটা আমাকে দেখতে হবে।’

‘তবে কুষ্টিয়া-২ আসনে যেভাবে নির্বাচন হলো সেখানে আমি মনে করি পরিকল্পিতভাবে ভোট কারচুপি হয়েছে। এখানে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং পরাজিত হয়েছি। সবাই জানেন কালো টাকার ছড়াছড়ি, মাস্তানি পেশিশক্তির প্রভাব থাকলেও প্রশাসনের নীরতার কারনেই আমি পরাজিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্কিয়তা আমার পরাজয় নিশ্চিত করতে ভুমিকা রেখেছে। কেন প্রশাসনের এই উদ্দেশ্যমূলক নিষ্কিয়তা, সেটা পরে ভেবে দেখবো আমি।’

সোমবার বেলা ১২টায় ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর গ্রামের নিজ বাড়িতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে ইনু এসব কথা বলেন।

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘কেবল নির্বাচন শেষ হলো, এমুহুর্তে রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ভাবিনি, এমুহুর্তে দল বসবে, তারপর পরবর্তী রাজনৈতিক পরিকল্পনা আমরা গ্রহন করবো। তবে ১৪ দলীয় জোটের যে নির্বাচনী বিজয় এবং তার ভিত্তিতে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা নতুন ভাবে সরকার গঠন করবেন, সেটা রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার জন্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। আমি সেটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

অপরদিকে, কামারুল আরেফিন এই জয়কে মিরপুর-ভেড়ামারাবাসীকে উৎসর্গ করে এলাকার উন্নয়নে মানুষের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, মিরপুর-ভেড়ামারাবাসী আমাকে যে সম্মান দেখিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষা করতে চাই।

তিনি বলেন, কুষ্টিয়া-২ আসনে ‘৭৫র পর মিরপুর থেকে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা এমপি হতে পারেননি। আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে প্রথম আওয়ামী লীগের ঝান্ডা নিয়ে মিরপুরের এমপি হতে পেরেছি। সোমবার দুপুরে মিরপুর উপজেলার আমলা সদরপুর গ্রামে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

কামারুল আরেফিন বলেন,‘আমার উপজেলাবাসী দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিলো। এলাকার উন্নয়নে জনগনের দেওয়া ভালোবাসা আমি মাথায় তুলে নিয়ে বেড়াতে চাই। জনগনের সাথে থেকে আমি কাজ করতে চাই। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের অংশ হিসেবে মিরপুর ভেড়ামারার যুব সমাজকে সাথে নিয়ে স্মার্ট জাতি গঠনে ভুমিকা রাখতে চাই। রেমিটেন্স যোদ্ধাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ইন্টারনেট কম্পিউটার ভিত্তিক একটা যুব সমাজ গড়তে চাই। এদিকে কামারুল আরেফিন এমপি নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দ মিছিল করেছে স্থানীয় কর্মী সমর্থকরা।

উল্লেখ্য, তফসিল ঘোষণার পর থেকেই গুঞ্জন ছিল এবার আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই না। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের কাউকে দাঁড় করানো হবে। পরে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনকে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী ইনুর বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close