বদরুল আলম মজুমদার

  ০৪ আগস্ট, ২০২১

ঢাকা মহানগর বিএনপি

সমন্বয় ও ভারসাম্যের কমিটি, আছে বিতর্কও

ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই অংশের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের সমন্বয়ের পাশাপাশি মহানগরের দুই নেতার প্রভাবশালী বলয়েরও ভারসাম্য হয়েছে। তবে কমিটি থেকে কিছু প্রভাবশালী গ্রুপ বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ। ঢাকা উত্তরের কমিটিতে চিরচেনা বলয়কে এবার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রভাব বিস্তারকারী সাবেক কমিটির নেতাদের সাইড লাইনে রাখা হয়েছে। ঘোষিত কমিটি নিয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হলেও কেউ প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। কারণ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ থাকায় কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। নগর বিএনপির অতি পরিচিত কিছু নেতা বাদ পড়লেও তারা মুখ খুলছেন না।

মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছিল। গত কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়েছিল কেন্দ্রীয় বিএনপিতে। ওইসব কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীরা অনাস্থা দিয়ে আসছিল গত কয়েক বছর থেকে। উত্তর বিএনপির অবস্থা একেবারেই লেজেগোবরে ছিল। সেই নাজুক অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে এবার নতুন-পুরোনো সমন্বয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি। যদিও কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানে নির্দেশে গঠন করা হয়েছে জানিয়ে বলেছেন, এই কমিটি দুটোর প্রতি সারা দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এরা সবাই পরীক্ষিত নেতা। আমাদের প্রত্যাশা, এই কমিটির মাধ্যমে দেশের রাজনীতির একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে।

তিনি বলেন, অত্যন্ত সক্রিয়, সচল এবং কার্যকরী এই আহ্বায়ক কমিটি অতি দ্রুত দলকে সুসংগঠিত করবে এবং একটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কার্যকরী কমিটি গঠন করবে। কবে নাগাদ মহানগরের কাউন্সিল হতে পারে প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সেই গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিল করবে। সেটা তিন মাস।

বর্তমান কমিটি নিয়ে ক্ষোভ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। সেই দলের যখন একটি কমিটি করা হয় তখন ছোটো-খাটো সমস্যা থাকতেই পারে। আমরা যেটা দেখছি, একবারে পরীক্ষিত নেতাদের দিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে করা হয়েছে।

বিএনপির দক্ষিণের নতুন কমিটি করা হয়েছে ঢাকা মহানগর রাজনীতিতে দলটির দুই প্রভাবশালী নেতা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার বলয়কে সমন্বিত করে। অন্যদিকে উত্তরের নতুন কমিটির দুই শীর্ষ নেতাই নগর রাজনীতির নতুন মুখ। যদিও সারা দেশেই রয়েছে তাদের ব্যাপক পরিচিতি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ৪৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক ও দলের ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হককে সদস্য সচিব করে গঠন করা হয়েছে ৪৭ সদস্যের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি।

সূত্র জানায়, নতুন কমিটি ঘোষণার আগে গত রোববার পৃথকভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সদ্যবিলুপ্ত কমিটির দক্ষিণের সভাপতি সোহেল ও উত্তরের সভাপতি কাইয়ুমের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তিনি সোহেল ও কাইয়ুমকে নতুন কমিটিকে সহযোগিতা করতে বলেছেন।

বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলয়ের পরিচিত এবং মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতির অভিজ্ঞ নেতা আবদুস সালামকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলয়ভুক্ত হিসেবে পরিচিত মহানগরকেন্দ্রিক যুবদল নেতা রফিকুল আলম মজনুকে এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

আবদুস সালাম বলেন, দীর্ঘদিন অভিন্ন মহানগরের দায়িত্বে ছিলাম। দলের হাইকমান্ড আমার ওপর আবারও আস্থা রেখেছেন। এর প্রতিদান হিসেবে সংগঠনকে সুসংগঠিত করে আন্দোলনমুখী করতে চাই।

এদিকে ৪৯ সদস্যের দক্ষিণের কমিটিতে ছাত্রদলের তিন নেতার পদায়ন ঘটেছে যা নেতাকর্মীদের বিস্মিত করেছে। এমনকি ছাত্রদলের ওই নেতারাও এমন পদ প্রত্যাশা করেননি বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীদের মতে, অনেক যোগ্য ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে এই কমিটিতে।

মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব মহানগরকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নতুন মুখ। ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান ঢাকা-২ আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচন করেছেন ও এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এ নেতা মহানগর দক্ষিণে বেশি আলোচিত হলেও শেষ পর্যন্ত উত্তরের দায়িত্ব পাওয়ায় চমক সৃষ্টি করা হয়েছে। উত্তরের সদস্য সচিব হিসেবে আলোচিত আমিনুল হক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে একের পর এক চমক সৃষ্টি করছেন।

আমান উল্লাহ আমান বলেন, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রহীন এক দুঃশাসন চলছে। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতার আলোকে এই স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাজধানীতে দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা ও সমর্থন কামনা করেন।

উত্তরের কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে নিয়ে বেশি গুঞ্জন থাকলেও তার অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত তাকে এ পদে আনা হয়নি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিতর্ক,ঢাকা মহানগর বিএনপি,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close