নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০১৯

২ সংসদ সদস্যের শপথ প্রসঙ্গ

গণফোরামে অস্বস্তি, বিএনপিতে ক্ষোভ

ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত গণফোরামের দুই সংসদ সদস্যের শপথ নিয়ে গণমাধ্যমের গত কয়েক দিনের খবরে অস্বস্তিতে রয়েছে দলটি। ব্যক্তিগত মতামত জানাতে গিয়ে মোলভীবাজার থেকে নির্বাচিত ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও হবিগঞ্জ থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান গত দুই দিনে একাধিক গণমাধ্যমে সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। আর এ নিয়েই অস্বস্তি। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় গণফোরাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয় গণফোরামের সদস্যরা শপথ নিচ্ছেন না।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত গণফোরামের দুই সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানসহ ঐক্যফ্রন্টের কোনো সদস্য শপথ নেবেন না। শপথ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। এ জোটের ঐক্য সুদৃঢ় ও অটুট আছে বলেও উল্লেখ করেন। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠান। অবশ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটির পর দুজন সংসদ সদস্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

গত দুই দিনে এ দুই সদস্যের সংসদে যাওয়ার পক্ষে মনোভাব প্রকাশিত হওয়ার পর এদের নিজ দল গণফোরামে অস্বস্তির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপিতে যথেষ্ট ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গণফোরামের শীর্ষ নেতারা তাদের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে সরাসরি না করলেও নতুন করে এ আলোচনা আবার উঠে আসায় নেতারা রীতিমতো বিব্রত হয়েছেন।

নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন দলের যৌথ সভা শেষে নির্বাচিত সদস্যের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলার পর এ নিয়ে ব্যাপক বির্তক তৈরি হয়। পরে নির্বাচিতদের সংসদে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তখন নেতারা তাদের প্রতিক্রিয়ার জানিয়েছিলেন, যেহেতু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ফল প্রত্যাখান করেছে তাই তাদের ব্যনারে নির্বাচিত সদস্যরা সংসদে যেতে পারেন না।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘না যাওয়ার ব্যাপারে ঐক্যফ্রন্ট ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত একই। ওনারা তো ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচন করেছেন। একজন ধানের শীষে, আরেকজন উদীয়মান সূর্যে। এখন পর্যন্ত না যাওয়ার সিদ্ধান্তই আছে।

দলীয় সূত্র জানায়, চিকিৎসার জন্য ড. কামাল হোসেন এখন সিঙ্গাপুরে আছেন। আজ যেকোনো সময় তার ফেরার কথা রয়েছে। গত ৫ জানুয়ারি গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, শপথের ব্যাপারে তারা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন। অবশ্য তার পর দিন ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বৈঠক শেষে মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের জানান, তারা কেউই শপথ নিচ্ছেন না। দলের এমন অবস্থানের পর এখন ড. কামাল হোসেনের ফেরার অপেক্ষায় আছেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারা।

গণফোরামের একটি সূত্র জানায়, দলটির ভেতরে সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব আছে। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকের পর সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কেউ আর কথা বলেননি। তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যদি এই দুইজন শপথ নেন তাহলে গণফোরাম থেকে তাদের বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। আগামীকাল গণফোরামের একটি সভা রয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে আরো আলোচনা হবে।

এর আগে এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, যারা নির্বাচিত হয়েছে সবাই শপথ নেবেন। কখন নেবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন, কারণ ৯০ দিন তো সময় আছে। ৩০ তারিখ (জানুয়ারি) সংসদে যাওয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও চাপ দেয়া হচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, সবাই শপথ নেবে। গণফোরাম সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক, তবে ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিলেই তারা যাবে।

এদিকে গণফেরামের দুই সদস্যের সংসদে যাওয়ার খবরে বিএনপিতে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিএনপি নেতারা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, সারা জীবনেও গণফোরামের কোনো সদস্য সংসদে যেতে পারেননি। এবার বিএনপির সমর্থনে তারা নির্বাচিত হয়েই সংসদে যাওয়ার জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বেইমানি করতে যাচ্ছেন। এমনটা করলে ফ্রন্টে ড. কামালের ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্নের জন্ম নিতে পারে। যা এরই মধ্যে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মুখে মুখে রয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারা নির্বাচনের পর থেকেই বার বার বলে আসছেন, ভোট ডাকাতির নির্বাচনের ফল তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবস্থায় তারা সংসদে যাবে না। সম্প্রতি ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ বিএনপির উদ্দেশে বলেছেন, সংসদে গেলে বেইমানি করা হবে। এই বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি বলেন, কর্মীদের রক্তের ওপর পা দিয়ে, যাদের ওপর হামলা-মামলা হয়েছে, তাদের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে, কেউ যেন নিজের লাভ বা সুবিধা না দেখে। ভোট ডাকাতির নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। যে বা যারা সংসদে যাবেন, তারা জোটের সঙ্গে বেইমানি করবে। জাতির সঙ্গে প্রতারণা করবেন।

এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, জোটগতভাবে সংসদে না যাওয়া সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরলে শপথসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। জোটগতভাবে না নিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে তাতে জোটের মধ্যে সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করেন ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, তারা যদি এখন যেতে চান তবে তা ঐক্যফ্রন্টের সামগ্রিক সিদ্ধান্ত না। কোনো বৈঠকে এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বিএনপি বা গণফোরাম যে-ই নেবে, সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি আরো বলেন, আমর মনে হয়, যা কিছুই হবে, ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তেই হবে। ৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংলাপ হলে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সহজ হবে।

গণফোরামের দুই সদস্যের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির মেম্বার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তাদের সংসদে যাওয়ার বিষয়ে কোনো খবর আমার কাছে নেই। তবে গণমাধ্যমের সূত্রে এটা জানতে পেরেছি। এখানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান হচ্ছে কেউ সংসদে যাবেন না। এখন তারা যদি এমন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে পরবর্তীতে বিষয়ে মিটিংয়ে আলোচনা হলে বিস্তারিত বলা যাবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শপথ,সংসদ সদস্য,ক্ষোভ,বিএনপি,গণফোরাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close