গাজী শাহনেওয়াজ
সিটি নির্বাচন
খুলনা ও গাজীপুরে নিরাপত্তা ছক ইসির
ভোটের আগে-পরে ৪ দিন মাঠে থাকবে র্যাব-বিজিবি
খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ছক তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির সমন্বয়ে এ ছক তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন র্যাব এবং দুই ওয়ার্ডে এক কোম্পানি বিজিবি সদস্য টহল ও রিজার্ভ র্ফোস হিসেবে নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকিতে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং গুরুতর অপরাধের শাস্তির জন্য সামারি ট্রায়াল করে বিচার করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট। ইতোমধ্যে আচরণ বিধি মনিটরিংয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সিটি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত হিসেবে টহল শুরু করে দিয়েছেন।
একইসঙ্গে ভোটকেন্দ্র পাহারায় থাকবে পুলিশ, আর্মস্ পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও আনসার ও ভিডিপি। এসব বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা সাধারণ ভোটকেন্দ্রে এস আইয়ের নেতৃত্বে ২২ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন। ভোটের আগের দুদিন এবং ভোটের পরে একদিনসহ মোট চার দিন এসব সদস্যদের মাঠে রাখার পরিকল্পনা করেছে কমিশন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে ইসি সচিবালয় এ-সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করবে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে খুলনা ও গাজীপুর সিটিতে ভোট হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা পুরোদমে প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। শুরু হয়েছে কথার লড়াই এবং নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা চলছে। দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রিয়তা প্রমাণের এ নির্বাচনে ইসির জন্যও অগ্নিপরীক্ষা। কমিশন নিজেদের নিরপেক্ষতা দেখাতে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ও ইভিএমে ভোট নেওয়ার চিন্তা করছে, যা গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন খুলনা ও গাজীপুর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তারা। তারা বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।
গাজীপুর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিবউদ্দিন মন্ডল বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ এখনো শান্তিপূর্ণ, নেই কোনো শঙ্কা। আজ (গতকাল) থেকে ১৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছেন। পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে কি পরামর্শ থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, র্যাব, বিজিবিসহ পুলিশের সদস্য বৃদ্ধির দাবি জানানো হবে। পাশাপাশি, ভোটের দিন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইসিকে অনুরোধ জানানো হবে।
খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, শঙ্কা নেই। বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত সমন্বয় কমিটির সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক হয়েছে; তারাও এ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে কি দাবি জানাবেন জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সে ধরনের ব্যবস্থা রাখার দাবি জানাব।
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এ দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন রাখা যেতে পারে। সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আদলে এ দুই সিটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। গাজীপুর ৫৭টি ওয়ার্ডে র্যাবের ৫৭টি টিম, বিজিবির ২৯ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হবে। আর খুলনায় র্যাবের ৩১টিম এবং বিজির ১৬ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটের দুই দিন আগে, ভোটের দিন, এবং ভোটের পরে একদিন সব মিলিয়ে চার দিন মাঠে থাকবে। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব-পুলিশের টিম ও আরো বাড়তি কয়েক প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে সংরক্ষিত রাখার সুপারিশও করেছে ইসি সচিবালয়।
কিন্তু সুশীল সমাজসহ বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানানো হলেও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কার্যপত্রে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় জানায়, ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ পাঁচ লাখ ৯১ হাজার ১০৭ এবং নারী পাঁচ লাখ ৭৩ হাজার ৩১৮ জন। আর ৩১টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৫৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৮ এবং নারী দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৬ জন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ রিটার্নিং অফিসার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন-পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়েই আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ছক চূড়ান্ত করবে ইসি।
পিডিএসও/হেলাল