বিশেষ প্রতিনিধি

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

নতুন কৌশলে আ.লীগ-বিএনপি

লক্ষ্য ভোটারের মন জয়

আগামী ডিসেম্বরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার আগপর্যন্ত এক ধরনের ধারায় চলছিল নির্বাচনী রাজনীতি। কিন্তু রায়ে পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় সেই রাজনীতিতে নতুন মাত্রা পেয়েছে এখন। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি বিলম্বিত হতে পারে—এমন আশঙ্কা বিশেষ মাত্রা যুক্ত করেছে নির্বাচনী হাওয়ায়। আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন কর্মসূচিতে নতুন কৌশল যুক্ত করছে। এসব কৌশল নিয়ে নতুন করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। একইভাবে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে বিশেষ কৌশল নিয়ে শিগিগির মাঠে নামতে যাচ্ছে বিএনপিও। এবার ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে যুক্তভাবে মাঠে নামার ইচ্ছে রয়েছে ক্ষমতার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের।

এর মধ্যে আগে থেকেই মাঠে থাকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় এবার নতুন করে যুক্ত হচ্ছে খালেদা জিয়ার রায়। এখন রায় নিয়ে কথা না বলার নির্দেশ থাকলেও প্রচারণায় খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরা হবে। এর জন্য ইতোমধ্যেই দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশ গেছে। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির আইনি ব্যস্ততাকেও নির্বাচনী প্রচারণায় কাজে লাগাতে চায় দলটি। কে নির্বাচনে এলো কি এলো না—এমনটি ভেবে সময় নষ্ট করতে চান না ক্ষমতাসীনরা। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মেরুকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে তাই নতুন করে মাঠে সরব হবে দলটি।

একইভাবে ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বিএনপিও। প্রচারণায় ভোটারদের সরকারের দুর্নীতির ফিরিস্তি জানানোই হবে দলের মূল লক্ষ্য। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও সমন্বয় করতে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশ গেছে। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলার রায়ে সরকারের হাত আছে—সে তথ্যও প্রচার করতে চান তারা। খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি—দুটোই একসঙ্গে চালাবে দল। নিজেদের আরো শক্তিশালী করতে নতুন জোট গঠনের চিন্তাভাবনাও চলছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখনই আন্দোলনের একটি রূপরেখা দাঁড় করাতে চায় বিএনপি।

দুই দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, নির্বাচনী প্রচারণায় মূল লক্ষ্য ভোটারদের নিজেদের দিকে টানা। এ জন্য দুই দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য প্রচারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সেপ্টেম্বরে এমন প্রচারণায় মুখোমুখি অবস্থান নিতে পারে দল দুটি। তবে দুই দলই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা জানিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে গড়িমসি করলে তাদের জন্য অপেক্ষা করবে না বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার রায় আইনের একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর জন্য তো নির্বাচন আটকে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ীই, আগামী নির্বাচন হবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো নির্বাচনী প্রচার চালাবে। বিএনপি কী করবে সেটা তাদের দলীয় ব্যাপার। আর আওয়ামী লীগ বা সরকার কোনো রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপিকে ব্যস্ত রাখেনি। বিএনপি তাদের অপকর্মের ফল ভোগ করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে এক সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আন্দোলন ও নির্বাচনী প্রস্তুতি—একসঙ্গে চলবে। তবে আমাদের পরিষ্কার কথা আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়েই হবে। তাকে ছাড়া এ দেশের কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। দলের বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামির অর্থদ-সহ ১০ বছর করে কারাদ- হয়েছে। এই সাজায় খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে রয়েছেন। সেই রায়ের পর থেকেই নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ যুক্ত হয়। আগের নির্বাচনী প্রচারণার কর্মসূচির সঙ্গে নতুন কৌশল যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে অনেক আগে থেকেই মাঠে আওয়ামী লীগ। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যতে কি মেরুকরণ যুক্ত হতে পারে—সেসব ভাবনা মাথায় রেখেই নির্বাচনী প্রচারণা কৌশল সাজিয়েছে দলটি। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ায় সেসব কর্মসূচিতে নতুন করে কিছু কৌশল যুক্ত করছে ক্ষমতাসীনরা।

দলীয় সূত্রমতে, রাজনৈতিক কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়টিকে প্রকাশ্যে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। কিন্তু ভোটের মাঠে, নির্বাচনী প্রচারে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়টি জনগণের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে ও আইনি লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকবে। সে সময়টা নির্বাচনী প্রচারণায় জোরেশোরে কাজে লাগাতে চায় দলটি।

দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে নির্বাচনী সফর শুরু করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায় সব সাংগঠনিক জেলায় এক দফা সফর সেরে নিয়েছেন। নির্বাচন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি মাসের শুরুতে ৩০০ সংসদীয় আসনে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও জেলা-উপজেলার নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারের কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ৯ বছরের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচার এবং বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- জনগণের সামনে তুলে ধরতে উঠান বৈঠক, কর্মীসভা, জনসভা, পথসভার মতো কর্মসূচিও চলছে অনেক আগে থেকেই।

অন্যদিকে, ২০দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী যেসব দল রয়েছে, সেগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। প্রয়োজনে এদের নিয়ে আলাদা জোট গঠনের কথাও ভাবছে দল।

দলীয় সূত্রমতে, সরকার খালেদা জিয়ার দুর্নীতি নিয়ে মাঠে নামবে—এমন ধারণা করছেন দলের নেতারা। সে জন্য রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা ও ভোটারদের আস্থায় নিতে খালেদার মামলা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেটি যেমন তুলে ধরবে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদের দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার সাজার পরদিন গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিবদের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দলীয় সূত্রমতে, ওই বৈঠকে সরকারের দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দুর্নীতির ফিরিস্তি সংবলিত লিফলেট তৈরি করে তা সারা দেশে বিলি করার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ শেষ করেছেন তারা। যেকোনো সময় লিফলেট আকারে দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, জোটবদ্ধভাবে যুগপৎ আন্দোলন করা হবে। নির্বাচনও করা হবে। আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন,নির্বাচনী রাজনীতি,আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist