নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কর্মস্থলে ফেরা অনিশ্চিত অনেক প্রবাসীর

কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ল্যাব বসানোর দাবিতে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে প্রবাসীদের প্রতিবাদ। ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

টিকিট কেটেও কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না ৪০ হাজার সংযুক্ত আরব-আমিরাত প্রবাসী। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় যেতে পারছেন না তারা। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের কর্মজীবন।

ঘোষণা অনুযায়ী, গত সোমবার থেকে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাব চালুর কথা থাকলেও শুরু হয়নি কার্যক্রম। কবে চালু হতে পারে তা-ও বলতে পারছে না কেউ। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকেন ১৪ লাখ বাংলাদেশি।

করোনার কারণে ছুটিতে দেশে আসার পর এবার আমিরাতে ফেরার অপেক্ষায় দুই লাখ প্রবাসী। টিকিটও কেটেছেন তাদের ৪০ হাজার জন। কিন্তু আমিরাতে ফিরতে ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা এবং ৬ ঘণ্টা আগের করোনা নেগেটিভের দুটি রিপোর্ট লাগে। দেশে ৪৮ ঘণ্টা আগে রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও বিমানবন্দরে ৬ ঘণ্টা আগে পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রবাসীরা।

এ দিকে, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য ল্যাব বসানোর দাবিতে রাজধানীর প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সামনে গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবাদ করেছেন প্রবাসীরা। তারা বলছেন, এই পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় আরব আমিরাত এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। এখন ফের ফ্লাইট চালুর কথা হলেও পিসিআর বসেনি। ফলে অনিশ্চয়তায় আছেন তারা।

এর আগে ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সভা শেষে জানানো হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এয়ারপোর্টে করোনাভাইরাসের পিসিআর পরীক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৮ দিন পেরিয়ে গেলেও সেটি এখনো চালু হয়নি। অথচ সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। বৈঠক শেষে সেদিন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন বাংলাদেশ থেকে এখন যাত্রার ৭২ বা ৪৮ ঘণ্টা আগে পিসিআর পরীক্ষা করে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ সম্প্রতি উড্ডয়নের ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পিসিআর টেস্টের সনদ চেয়েছে। আজকে এটা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে, ভেরি কুইকলি দুই বা তিন দিনের মধ্যে এয়ারপোর্টেই একটা টেস্টিং ফ্যাসিলিটিজ করা হবে। অন্যান্য দেশেও যে রকম আছে। যাতে ফ্লাই করার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে উনারা টেস্ট করতে পারেন।

সেদিনের বৈঠকের পর জানানো হয়, শুধু ঢাকা নয়, বিদেশগামীদের সুবিধার্থে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্রুত করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাবের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ৮ দিন হয়ে গেলেও এখনো সেটি চালু করা যায়নি। শুধু এবার নয়, মহামারির এই দেড় বছরে উড়োজাহাজের টিকিট থেকে শুরু করে টিকাসহ প্রবাসীর যত বিষয় আছে সবক্ষেত্রেই সমন্বয়হীনতার ছবি উঠে এসেছে। পিসিআর মেশিন বসানোয় বিলম্ব তাতে সর্বশেষ সংযোজন।

করোনাভাইরাস শনাক্তে এখন পর্যন্ত বিশ্বে কয়েকটি নমুনা পরীক্ষা পদ্ধতি থাকলেও আরটিপিসিআরই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক খবর বলছে, সরকারিভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিমানবন্দরে পিসিআর বসানোর দায়িত্ব না নিলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই কাজ পেতে তোড়জোড় শুরু করে ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অসংগতিপূর্ণ মনে হওয়ায় ল্যাব স্থাপনের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে। সরকার যাকে এগুলো বসানোর কাজ দেবে, তারা শুধু এখানে স্থাপন করবে। কিন্তু কবে নাগাদ বসবে সে বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কিছু জানে না। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বসে আছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওপর। এসব সিদ্ধান্তহীনতার কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছেন প্রবাসীরা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কর্মস্থল,প্রবাসী,নমুনা পরীক্ষা,পিসিআর ল্যাব
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close