বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ জুলাই, ২০২০

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শ্রমজীবীদের অনীহা

আমির হোসেন ঢাকায় রিকশা চালান। এসেছেন কুড়িগ্রাম থেকে। বয়স চল্লিশোর্ধ্ব। রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়ায় তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মুখে তার মাস্ক ছিল না। কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি জবাব দেন মাস্ক পড়তে আর ভালো লাগে না। করোনার মতো ভয়াবহ দুর্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মানার আগ্রহে ভাটা পড়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাকে ভয় করলে আমাদের চলবে না। করোনাকে ভয় করলে না খেয়ে মরব। যাই ঘটুক, তার জন্য প্রস্তুত আছি। আল্লাহই আমাদের ভরসা। গরিবের আবার স্বাস্থ্যবিধি লাগব না।

আমির হোসেনের মতো অসংখ্য শ্রমজীবী মানুষ মানতে চাচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। গত কয়েক দিনে রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মুখে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন অনুভব করছেন না। সামাজিক দূরত্ব মানার কথায় কোনো গুরুত্বও দিচ্ছে না। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও শ্রমজীবীদের মধ্যে আক্রান্তের হার অনেক কম। যদিও করোনার সতর্কতার বালাই নেই তাদের। গাদাগাদি করে থাকা খাওয়া ঘুম, একসঙ্গে হাঁটাচলা, সামাজিক দূরত্ব না মেনে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া চলছে আগের মতোই।

সরেজমিন রাজধানীর উত্তরার কামারপাড়া, টঙ্গীবাজার, বাউনিয়া বাজার, মানিকদী বাজার, পুরান ঢাকার বাবুবাজার, নাজিরা বাজার, মধ্য ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। জটলা বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কেউ বলছেন, রাতে ঘুমানোর আগে তারা ঠিকমতো সাবান দিয়ে গোসল করছেন, ভিটামিন সি জাতীয় লেবুর রস বা শরবত পান করছেন। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। তারা বলছেন, কাজের প্রয়োজনে সামাজিক দূরত্ব মানা যাচ্ছে না। তারা বলছেন, গরিবের আবার স্বাস্থ্যবিধি কী। মরণ আসলে মরে যাব। সামাজিক দূরত্ব মানতে গেলে ঘরে থাকতে হবে। ঘরে খাবার দেবে কে? একজন বলেন, সাধারণ ছুটির সময় একমাস ঘরে ছিলাম। খাইয়া না খাইয়া দিন পার করছি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের নামকরা একটি বিরিয়ানির দোকানের ছয় টেবিলের ২৪টি চেয়ারেই বসে খাচ্ছে মানুষ। মাঝখানের রোতে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে আরো তিনজন। তাদের গাঘেঁষেই বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে যাচ্ছে বেয়ারা। গেটে পার্সেল নিতে অপেক্ষায় আরো চার-পাঁচজন। সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম চিহ্নও নেই এখানে। এত গেল খাবারের দোকান। রাজধানীর কাঁচাবাজারের চিত্র আরো ভয়াবহ। ক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতার মাস্ক থাকে থুতনিতে। গায়ে গাঘেঁষে চলাচল করেন ক্রেতারা। মাছ বাজারেও একই অবস্থা। বড় শপিংমলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেলেও অনেক মার্কেট বিপণিবিতানে অধিকাংশ ব্যবস্থাই লোকদেখানো।

স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেশের কিছু কিছু এলাকায় জরিমানা করলেও রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর সরকার গত ৩১ মে থেকে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান চলাচলসহ সবকিছু খুলে দেয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে সরকার সবকিছু খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু প্রথম দু-এক দিন সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও তারপর থেকে বেপরোয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এখন যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে। যিনি মানবেন না, তিনি যেমন বিপদে পড়বেন, তিনি নিজের পরিবারকেও বিপদে ফেলবেন। তিনি আরো বলেন, এখনো যারা আক্রান্ত হননি তাদের বাঁচার একমাত্র পথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও নিম্ন আয়ের মানুষের আক্রান্তের হার অনেক কম। তার মানে এই নয় যে, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিম্ন আয়ের মানুষ,স্বাস্থ্যবিধি,শ্রমজীবী,অনীহা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close