প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

জলে স্থলে আকাশে যৌথ হামলা, টিকতে পারে না হানাদাররা

জলে, স্থলে, আকাশে শুরু হয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ। এতে টিকতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ। অগ্রসরমান মুক্তিবাহিনী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এলাকায়। মুক্ত এলাকায় মুজিবনগর সরকারের প্রশাসন চালু করা হয়। সেক্টর কমান্ডাররাও একে একে নিজেদের সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থানান্তর শুরু করেন মুক্তাঞ্চলে। দলে দলে মুক্তাঞ্চলে সমবেত হতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। প্রায় দুই লাখ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তখন যুদ্ধরত। বিভিন্ন ক্যাম্পে ছিলেন প্রশিক্ষণরত ১৫ হাজার তরুণ। এ ছাড়া শরণার্থী শিবির ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে হাজার হাজার তরুণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের সংখ্যা প্রায় অর্ধ লাখ।

একাত্তরের এই দিনে ঢাকার আকাশ পুরোপুরি দখল করে নেয় ভারতের মিত্রবাহিনীর বিমানবাহিনী। ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো সারা দিন ধরে অবাধে আকাশ থেকে পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচ- আক্রমণ চালায়। অকেজো করে দেয় বিমানবন্দরগুলো। ভারতীয় বিমানবাহিনীর হিসাব মতে, ১২ ঘণ্টায় ২৩২ বারে তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গিবিমান আক্রমণে ৯০টি গাড়ি ধ্বংস হয়। এ ছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যবোঝাই কয়েকটি লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ডের সফল আক্রমণে ধ্বংস হয় পাকিস্তানি সাবমেরিন ‘গাজী’।

আজ ৫ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিন বাংলাদেশকে নিয়ে মার্কিন সরকারের বিশেষ উদ্যোগে জাতিসংঘে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র বুশের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘ভেটো’ দেন সোভিয়েত প্রতিনিধি কমরেড মালিক।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মূলত বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মূল লড়াইটা ছিল দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বাংলাদেশের পক্ষে আর যুক্তরাষ্ট্র ছিল পাকিস্তানের পক্ষে।

পাকিস্তানি সেনাদের ওপর ৩ ডিসেম্বর রাত ১টায় বিমান হামলা শুরু করে বাংলাদেশ ও ভারতীয় বিমানবাহিনী। এই দিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী সিলেট সেক্টরে বোমাবর্ষণ করে উড়িয়ে দেয় শত্রুর পাঁচটি বাঙ্কার। জামালপুর বিমান হামলায় হানাদার বাহিনীর কয়েক শ সৈন্য নিহত হয়, বিধ্বস্ত হয় বহু সামরিক যানবাহন।

চট্টগ্রামে পাকিস্তান নৌবাহিনী ও ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। মুক্তিবাহিনীর এ আক্রমণের ফলে পাকিস্তান বাহিনীর সব সৈন্য বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

তখন স্থলে মিত্রবাহিনীও এগিয়ে চলে। ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট-নাটোরের সঙ্গে ঢাকা এবং রংপুর আর যশোরের সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুধু ঢাকার সঙ্গে যশোর ও খুলনার যোগাযোগ ব্যবস্থা তখনো বহাল ছিল।

একাত্তরের এই দিনে বড় লড়াই হয় লাকসামে। আরেকটা লড়াই হয় ঝিনাইদহে কোটচাঁদপুরে। দুটি লড়াইয়ে পাকিস্তান বাহিনী ব্যাপক পরাজয় ঘটে। তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। বকশীগঞ্জ দখলে নেয় যৌথবাহিনী। মুক্ত হয় পীরগঞ্জ, হাতিবান্ধা, পচাগড়, বোদা, ফুলবাড়ী, বীরগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ। আর জীবননগর, দর্শনা ও কোটচাঁদপুরে পাক হানাদার বাহিনী মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মসমর্পণ করে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের খুশি করতে পূর্বাঞ্চলের রাজনীতিক নূরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমাঞ্চলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে উপ-প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয় না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
একাত্তর,৫ ডিসেম্বর,মুক্তিবাহিনী,হামলা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close