নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ নভেম্বর, ২০১৯

ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ৬ মাসের জেল

আজ থেকে কার্যকর নতুন সড়ক আইন

৭৯ বছরের পুরোনো আইনের ভিত্তিতে তৈরি মোটরযান অধ্যাদেশ বাতিল করে আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশে কার্যকর হচ্ছে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮। এই আইনে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে গুরুদণ্ড নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন আইন কার্যকর করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আজ থেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার জন্য গত ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এরপর বিআরটিএ থেকে আইনটি কার্যকর করতে সবার কাছে অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার শুরু হয়েছে। এতে বলা হচ্ছে, ‘আইন মেনে চালাব গাড়ি, নিরাপদে ফিরব বাড়ি’।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইন কার্যকর করতে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, নতুন আইন তফসিলভুক্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বিধিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে। বিধিমালা প্রণয়নে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি দল কাজ করছে।

নতুন আইনে বেপরোয়া বা অবহেলায় গাড়ি চালানোর কারণে কেউ গুরুতর আহত বা কারো প্রাণহানি হলে অপরাধীর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তদন্তে যদি দেখা যায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, তাহলে দন্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ সাজা হবে ফাঁসি। তবে এটা তদন্তসাপেক্ষে এবং তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্ধারণ করবে। এটি অজামিনযোগ্য শাস্তি। আগের আইনে ছিল তিন বছরের কারাদন্ড ও তা জামিনযোগ্য।

নতুন সড়ক আইনে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ছাড়া কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট দেওয়া থাকবে। দোষ করলে তা কাটা যাবে। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লংঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এই বিধান আগে ছিল না।

নতুন আইনে বৈধ চালক ছাড়া নিয়োগ না দেওয়ার বিধান আবারও যুক্ত করে বলা হয়েছে, কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে তাকে চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুসারে, লিখিতভাবে চুক্তি সম্পাদন ও নিয়োগপত্র ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তিকে গণপরিবহনের চালক নিয়োগ করতে পারবে না। নিয়োগপ্রাপ্ত চালক তার কাগজপত্র গাড়িতে প্রদর্শন করবেন। এছাড়া কন্ডাক্টর লাইসেন্স ছাড়া কন্ডাক্টর নিয়োগ করা যাবে না বলে বিধান করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল চার মাসের কারাদন্ড বা ৫০০ টাকা অর্থদন্ড। কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সমিতি ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, প্রদান ও নবায়ন করলে শাস্তি অনধিক দুই বছর। তবে অন্যূন ছয় মাসের জেল বা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দন্ডের বিধান রয়েছে। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ছয় মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে।

নতুন আইনে ফিটনেস সনদ ছাড়া বা মেয়াদ পেরোনো ফিটনেস সনদ ব্যবহার করে ইকোনমিক লাইফ অতিক্রান্ত বা ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপুর্ণ গাড়ি চালালে ছয় মাসের জেল বা অনধিক ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড দেওয়া হবে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আগের তুলনায় শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।

গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় গড়ে উঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পরিবহন শ্রমিকরা মাঠে নামে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সংশোধন ছাড়াই আইনটি কার্যকর হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেছেন, এই আইনের দাড়ি কমা সংশোধন করা হয়নি। শাস্তি বেশি বলেই এটি বাস্তবায়নে বাধা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকাল বিকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, অকারণে পরিবহন শ্রমিকরা কেন জরিমানা দেবে? এ আইন করা হয়েছে চালকদের শায়েস্তা করার জন্য। বিধিমালা না করেই এ আইন কার্যকর করা উচিত হবে না।

সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তি-জরিমানা : অবহেলায় গাড়ি চালানোতে গুরুতর আহত বা প্রাণহানিতে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকান্ড প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড। লেন ভঙ্গ ও হেলমেট ব্যবহার না করায় অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দন্ড। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা বা উভয় দন্ড এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোয় ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দন্ড।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সড়ক পরিবহন আইন,বিআরটিএ,লাইসেন্স,জরিমানা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close