হাসান ইমন

  ০৪ আগস্ট, ২০১৯

মশার ওষুধে খুশি নয় নগরবাসী

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) মশার ওষুধ স্প্রে কার্যক্রমে খুশি নন নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, মশক নিধন কর্মীরা সঠিক জায়গায় ওষুধ স্প্রে করেন না। যারা স্প্রে করেন শুধু লোক দেখানোর জন্য করেন। আর গাড়ি করে ওষুধ স্প্রে করে শুধু রাস্তায় ধোঁয়া ছেড়ে চলে যায়, এতে কোনো কাজ হয় না। মশাতো রাস্তায় জন্মায় না এমন প্রশ্ন তাদের?

এদিকে মশক নিধন কর্মীরা ওষুধ স্প্রে করলেও তারা কোথাও প্রশিক্ষণ নেননি। তারা জানেন না এডিস মশা মারার জন্য আসলে কোথায় ওষুধ ছিটাতে হবে। রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। শিশু থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সি কিম্বা ৮০ বছরের প্রবীণরা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

এ বছরই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে। অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম বারবার ডেঙ্গু আতঙ্কের কথা প্রকাশ করলেও তা মোকাবিলায় কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়নি সংস্থাগুলো। এখন হাসপাতালগুলোয় রোগী আর রোগী। শয্যা সংকটে ফ্লোরে, বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নির্মূল ও প্রতিরোধে ‘ক্রটিপূর্ণ কার্যক্রম’ পরিচালনা করেছে সিটি করপোরেশন। এতদিন মনে করা হতো বাসাবাড়িতেই এডিস মশার জন্ম বেশি। তাই বাসাবাড়ির আশপাশেই মশার ওষুধ বেশি ছিটানোতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু বাসাবাড়ির চেয়ে অন্য স্থানে এডিস মশার প্রকোপ বেশি হয় বলে জানা গেছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ভারতীয় নাগরিক বি এন নাগপাল গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে সভায় এডিস মশা দমনে করণীয়, বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান ও মশা নির্মূলে করণীয় সম্পর্কে নতুন তথ্য তুলে ধরেন।

বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ওই বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে জানান, বাসাবাড়ির চেয়ে অন্যস্থান যেমন, সরকারি পরিবহন পুল, থানার পরিত্যক্ত যানবাহন, নার্সারি, হাসপাতালের বাইরে ফেলে দেওয়া কাঁচ ও প্লাস্টিকের বোতল, অফিস আদালতের বাইরে ফেলে থাকা আসবাবপত্র, বড় বড় নির্মাণাধীন ভবনে পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার-টিউবসহ অন্য ব্যবহার্য পরিত্যক্ত দ্রব্যসামগ্রীতে এডিস মশা বংশ বিস্তার ঘটায়। তাই বাসাবাড়ির চেয়ে এসব জায়গায় মশক নিধন বেশি জরুরি জানিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন তিনি।

আর সিটি করপোরেশনের দুই পদ্ধতিতে মশার ওষুধ স্প্রে করে থাকে। এক. কর্মীরা কাঁধে মেশিন নিয়ে স্প্রে করে থাকেন। দুই. খোলা ছোট ট্রাকে করে কর্মীরা ওষুধ স্প্র করে থাকেন। এই দুই পদ্ধতির কোনোটাই তেমন কার্যকর হচ্ছে না মশা মারতে। যারা হেঁটে হেঁটে ওষুধ স্প্রে করেন, তারা লোক দেখানোর জন্য রাস্তার পাশে ধোঁয়া বের করে চলে যান। আর যারা গাড়িতে করে স্প্রে করেন, তারা শুধু রাস্তায় ধোঁয়া ছেড়ে চলে যান। সিটি করপোরেশনের এমন কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ নগরবাসী।

তারা বলেন, মশক নিধন কর্মীরা গাড়িতে করে ওষুধ স্প্রে করে। মশা তো রাস্তায় জন্মায় না। ওষুধ ছিটাতে হয় যেখানে ময়লা-আবর্জনা আছে সেখানে; আর যেখানে বদ্ধ পানি রয়েছে। তারা শুধু লোক দেখানোর জন্য ধোঁয়া ছেড়ে চলে যান।

এদিকে ৪০ বছরের পুরোনো নিয়মে অপ্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ছিটানো হয় মশা মারার ওষুধ। গবেষকরা বলছেন, এডিস মশা মারার ওষুধ, সঠিক নিয়মে স্প্রে না করায়, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাফল্য আসছে না। এ পদ্ধতিতে এডিস নয়, মরছে কিউলেক্স মশা। অন্যদিকে জনবল অভাবে দুই সিটিতে ব্যাহত হচ্ছে মশার ওষুধ ছিটানোর কাজ।

উত্তর এবং দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশন মিলে কোটি মানুষের এই শহরে মশার মারার জন্য আছে প্রায় ৭০০ জন স্প্রেম্যান। দক্ষিণের চেয়ে উত্তরের আয়তন বেশি হলেও তাদের জনবল সবচেয়ে কম। দুই সিটির অধিকাংশ ওয়ার্ডে সকাল-বিকাল মশার ওষুধ ছিটানো হলেও; এডিস মশা সম্পর্কে এই কর্মীদের কোনো ধারণা না থাকায় সাফল্য আসছে না। আবার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্রপাতিও অনেক পুরোনো।

উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড এক মশক নিধন কর্মীর সঙ্গে বলে জানা যায়, তিনি এডিস মশা নিধনে ফগিং মেশিনে ওষুধ ছিটান। কিন্তু তিনি জানেন না এডিস মশা মারার জন্য আসলে কোথায় ওষুধ ছিটাতে হবে। তার কাছে সব মশাই সমান। আর ওষুধ ছিটানোর এই কাজ তিনি শিখেছেন তার গুরুর কাছে।

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, এতদিন বিষয়টি নিয়ে কোনো ভাবনা থাকলেও এবারের পরিস্থিতি তাদের ভাবতে বাধ্য করেছে। চলতি বছরই স্প্রেম্যানদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনবে সিটি করপোরেশন। তিনি আরো বলেন, এডিস মশা নিধনে স্প্রেম্যানদের কাজের তদারকি এবং মূল্যায়ন করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নগরবাসী,মশার ওষুধ,মশক নিধন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close