কাজী আবুল মনসুর

  ০৩ জানুয়ারি, ২০১৯

চট্টগ্রাম থেকে কারা হচ্ছেন মন্ত্রী, গুঞ্জন

চট্টগ্রামের এমপিদের মধ্যে কারা হচ্ছেন মন্ত্রী? এক না একাধিক মন্ত্রী থাকছেন চট্টগ্রাম থেকে? এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্নের পর চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লবিং-তদবির। তবে সব কিছুর চাবি যে স্বয়ং শেখ হাসিনার হাতে। তাই এ নিয়ে নিজ নিজ এমপির সমর্থকদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও কোনো উচ্চবাচ্য নেই। চট্টগ্রামের প্রতিটি আসনের এমপির সমর্থকরা বিশ্বাস করছেন, তাদের এমপিকে এবার মন্ত্রী করা হবে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ জানুয়ারির আগেই গঠিত হবে নতুন মন্ত্রীসভা। তাই বৃহস্পতিবার এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হবার পর থেকে মন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ঢাকায় ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছেন মহাজোটের চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যরা। এমপিদের অনেক কর্মীরাও এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়। নেতা মন্ত্রী হলে তাকে ঘিরে কি কি আয়োজন হতে পারে এ নিয়ে হিসেব নিকেশে ব্যস্ত কর্মী-সমর্থকরা। চট্টগ্রামের নির্বাচিত কয়েকজন এমপি এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে সাক্ষাত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এমপিদের দেয়া ফুলের তোড়ার ছবি এতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নেতা-কর্মীরা ফলাও করে প্রচার করেছে। স্থানীয় নেতারা এটি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে একমাত্র নতুন মুখ নওফেল। বাকি সবাই পুরানো। এদের সবার ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও ছিলেন। ছিলেন টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রী। তাই মন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে কার ভূমিকা কি রকম ছিল, কে কে মন্ত্রীত্বকে ব্যবহার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন সব আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তবে গুঞ্জন রয়েছে, এবারের মন্ত্রী সভায় স্থান পাবার ক্ষেত্রে নতুন মুখগুলোর প্রাধান্য থাকবে। অর্থাৎ যারা অতীতে মন্ত্রী ছিলেন না তাদের পাল্লা সবচেয়ে ভারী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, এবারের মন্ত্রীসভা গঠন হবে নতুন এবং পুরাতন মিলে। পুরোনোদের মধ্যে বিগত সময়ের কর্মকাণ্ড এবং দলে তার ভূমিকা মূল্যায়ন হবে। মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে যারা অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন এবং যাদের কর্মকাণ্ডে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন মুখ আর দেখা না-ও যেতে পারে।

চট্টগ্রামে পুরোনোদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। নতুনদের মধ্যে চট্টগ্রামের সন্তান হিসেবে যে নামটি বেশ আলোচনায় আছে তা হলো সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান মহিবুল হাসান নওফেল। এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। নওফেল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে টক-শো’র মাধ্যমে দলের ইতিবাচক দিক জনগনের কাছে তুলে ধরেছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। চট্টগ্রামের সবচেয়ে মূল্যবান আসন বলে চিহ্নিত চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালী আসনটি। এ আসনে তরুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে নওফেলকেই দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দেন। নির্বাচনে নওফেল ২ লাখ ২৩ হাজার ৬১৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। মন্ত্রীসভায় চট্টগ্রামের একমাত্র নতুন মুখ নওফেলকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভায় স্থান দেবেন এমনটি সবার মুখে মুখে।

চট্টগ্রামের রাউজানে এমপি এবিএম ফজলে করিমের নাম মন্ত্রীসভায় থাকতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। দলীয় নেত্রীর পরিক্ষীত নেতা হিসেবে চিহ্নিত ফজলে করিম তার নিজের এলাকা রাউজানকে যে পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তাতে বিস্মিত অনেকে। একসময় সন্ত্রাসের জনপদ বলে খ্যাত রাউজান এখন শান্তির জনপদ। এমনকি বিগত নির্বাচনে ঢাকা থেকে যারা প্রচারে এসেছেন তারা রাউজান দেখে মোহিত হয়ে যান।

একবাক্যে সবাই উল্লেখ করেন, দেশের এক প্রান্তে এ ধরনের সবুজ গ্রাম বাংলাদেশে নেই বললেই চলে। তার উন্নয়নের মধ্যে যে বিষয়টি দলের নেত্রীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে তা হলো সবুজায়ন। যার জন্য ফজলে করিম একাধিকবার জাতীয় পুরস্কারও পান। দলের নেত্রীর কাছে ফজলে করিমের অবস্থান, বিগত কয়েক দফা এমপি হবার অভিজ্ঞতা এবং তাকে বিগত সময়ে যে সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার কাজ প্রশংসনীয় হবার কারণে এবার নেত্রী তাকে মূল্যায়ন করে মন্ত্রী করতে পারেন বলে সূত্র জানায়।

মহাজোটের শরীকদল জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দিন বাবলুর দাবি ছিল চট্টগ্রাম-৯ আসনটি। তিনি ছিলেন এ আসনের এমপি। এবার তাকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগের কাছে। তাই গুঞ্জন রয়েছে বাবলুকে মন্ত্রীসভায় নিতে পারেন নেত্রী।

বর্তমানে মন্ত্রী পরিষদে রয়েছেন চট্টগ্রাম- ১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন ও চট্টগ্রাম- ১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। এর আগে মন্ত্রী ছিলেন চট্টগ্রাম- ১৩ আসনের সাংসদ ডা. আফসারুল আমিন এবং চট্টগ্রাম- ৭ আসনের সাংসদ ড. হাসান মাহমুদ। এদের মধ্যে আবারও কে কে মন্ত্রী পরিষদে স্থান পাচ্ছেন এবং বাদ পড়ছেন তা নিয়েও চলছে জল্পনা। তবে পুরানোদের ক্ষেত্রে নেত্রী ঠিক কি ভূমিকা নিচ্ছেন তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে। টেকনোক্রেট কোটায় চট্টগ্রামে জিয়া উদ্দিন বাবলুর সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই হেভিওয়েট প্রার্থী। অনেকেরই রয়েছে মন্ত্রীত্বের অভিজ্ঞতা। অনেকেই মন্ত্রী না হলেও মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। এছাড়া নির্বাচন করার সুযোগ পাননি এমন রাজনৈতিক নেতাদের ত্যাগের মূল্যায়ন করার বিষয়টিও লোকমুখে আছে। চট্টগ্রামে মনোনয়ন চেয়ে পাননি এমন যোগ্য কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে মন্ত্রীসভায় কারা থাকছেন তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম,মন্ত্রী,গুঞ্জন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close