সম্পাদকীয়

  ১৬ জুলাই, ২০২১

নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এখন আক্রান্ত আমাদের সমুদ্রবন্দর। পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। গার্মেন্ট সেক্টরের বিপুল অর্ডার এলেও তা সঠিক সময়ে রপ্তানি করা নিয়ে চিন্তিত অনেক গার্মেন্ট মালিক। করোনা যে বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও হানা দিয়েছে, এটি তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি উপমা। মাঝেমধ্যেই এ রকম সমস্যায় যে পড়তে হবে তা আগে থেকেই সবার জানা। এটিকে করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। দেশের অভ্যন্তরে দুর্ঘটনাজনিত কোনো কারণে এমনটি হয়নি। সিঙ্গাপুর, কলম্বো ও মালয়েশিয়ার কেলাং বন্দরে চলছে জাহাজজট। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের ভেতরে ও বাইরে পণ্যভর্তি অনেক কনটেইনার আটকা পড়েছে। অনেক জাহাজে পণ্য ওঠানোর জন্য লেগে যাচ্ছে এক মাসেরও বেশি সময়; যা স্বাভাবিক সময়ের প্রায় চার গুণ। এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এদিকে বিদেশি জাহাজ লাইনের মালিক হ্যাপাগ লয়েড সিঙ্গাপুর বন্দরে বাংলাদেশের আমদানিযোগ্য কোনো কনটেইনার লোড না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কলম্বোর ক্ষেত্রেও এ নিয়ম চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেউই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। ফলে এসব বন্দরে বাংলাদেশের পণ্যভর্তি কনটেইনার জমা হয়ে পাহাড় সমান স্তূপে পরিণত হচ্ছে। আবার কোনো কোনো জাহাজ লাইনের মালিক বিলম্বের জন্য চার্জ আরোপ করার চিন্তা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে তা এরই মধে আরোপিত হয়েছে। জাহাজ বেশি দিন বন্দরে বসে থাকলে তার জন্য অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটিই নিয়ম। এই নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর আলাদা চার্জ বসানো হয়। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বর্তমানে তিন বন্দরে যে জাহাজজটের সৃষ্টি হয়েছে, তার শেষ কোথায় তা আমাদের জানা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেছেন, সমস্যা এড়াতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ের চেয়ে কলম্বো বন্দরের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। আমরা সেদিকেই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।

তথ্য মতে, শুধু এই তিন বন্দরে যে জাহাজজট চলছে তা নয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জাহাজজটের মহড়া চলছে। বিশেষ করে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোয় এ সমস্যা বেশি। এ সমস্যার কারণ হিসেবে করোনা মহামারিকেই দায়ী করা হয়। লকডাউনের কারণে সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ এবং পণ্যের জট সৃষ্টি হয়েছে। গত এক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতা এবং বিভিন্ন বন্দরে জটজনিত কারণে সব প্রান্তেই পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিবহন ব্যাহত হওয়ার দায় এককভাবে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের ওপর বর্তালে তা বাণিজ্যিক নৈতিকতার ওপর আঘাত হানার শামিল। সমস্যা বাংলাদেশের একার নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে সমস্যা মোকাবিলা করাই হবে যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া সমস্যা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়ী নয়।

আমরা মনে করি, বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবেই এগিয়ে আসা উচিত। কেননা সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যেমন আমাদের কোনো সফলতা নেই, একইভাবে এ ক্ষেত্রেও সফলতার সম্ভাবনা খুবই কম। সভ্যতার দাবিদার বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি দেশকে শুধু নিজের অস্তিত্ব রক্ষার পথ পরিত্যাগ করে সংঘবদ্ধ পৃথিবীর কথা ভাবতে হবে। করোনাভাইরাস সরে যাওয়ার পর সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, ভাবনাটা নেতিবাচক। কেননা, যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তাকে পুনরুদ্ধার করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের। আশা করি, পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্ব সম্প্রদায় সে পথেই পা বাড়াবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাণিজ্য,আমদানি-রপ্তানি,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close