reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ফিরে দেখা এক সেনাশাসকের কর্মকাণ্ড

ফাইল ছবি

দীর্ঘ অসুস্থতার পর মারা গেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিতর্কিত সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর বিবিসি সংবাদদাতা সুমায়লা জাফরিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের আইএসপিআর বলেছে, জেনারেল মোশাররফের মৃত্যুতে তারা শোকাহত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ৭৯ বছর বয়সী জেনারেল মোশাররফ দীর্ঘ রোগভোগের পর রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন। তার অসুস্থতার ব্যাপারে ২০২২ সালে জানানো হয়েছিল, পাকিস্তানের সাবেক এই সেনাশাসক ‘অ্যামিলোডয়সিস’ নামে এক জটিল রোগে ভুগছেন।

এ রোগে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যেতে থাকে। জেনারেল মোশাররফের জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট, ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে। পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন তিনি। এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

১৯৪৭ সালে পরিবারের সাথে পাকিস্তানে চলে যান পারভেজ মোশাররফ। তার বাবা সৈয়দ মোশাররফ একজন কূটনীতিক ছিলেন।

১৯৬৪ সালে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পারভেজ মোশাররফ তুরস্কে ছিলেন। সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার পর তিনি কোয়েটার আর্মি কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেছেন।

২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন, যার মাধ্যমে তিনি নিজের শাসনামল প্রলম্বিত করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভ হয় এবং ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। এজন্য পরে জেনারেল মোশাররফকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।

তিনি পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক, যাকে সংবিধান স্থগিত করার জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয় এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল পাকিস্তানের আদালত। যদিও পরে তা বাতিল হয়ে যায়। সর্বশেষ তিনি দুবাইতে অবস্থান করছিলেন।

পারভেজ মোশাররফের ক্যারিয়ার পাকিস্তানের সাবেক শামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য তিনি সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চে পদকে ভূষিত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পান।

১৯৯৯ সালের মে মাসের কারগিল যুদ্ধে সেনাবাহিনীর জড়িত থাকা নিয়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সাথে সম্পর্কে ফাটল ধরে জেনারেল মোশাররফের। এর ধারাবাহিকতায় ওই বছর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন তিনি।

২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে বহুবার আততায়ীর হামলা থেকে রক্ষা পেয়েছেন জেনারেল মোশাররফ। তাকে উৎখাতের বহু প্লটও ব্যর্থ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে’ সমর্থন ও ভূমিকা পালনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি। যদিও একারণে স্বদেশে ব্যাপক বিরোধিতার শিকার হতে হয় তাকে।

রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করার পর ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য পাকিস্তানে ফেরেন। যদিও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে ব্যর্থ হন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার শুনানিতে মাত্র দুবার হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি।

এর আগে তার সময় কেটেছে হয় সেনাবাহিনীর একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নয়তো ইসলামাবাদের একটি খামারে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে তিনি করাচিতে চলে যান। সেখানে দুবছর থাকার পর তিনি আবার দেশত্যাগ করেন। ২০১৬ সালে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি পাকিস্তানের সাবেক এই বিতর্কিত শাসকের। সূত্র: বিবিসি

পিডিএস/এইচএস

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পারভেজ মোশাররফ,পাকিস্তান,প্রেসিডেন্ট,সেনাশাসক
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close