করোনাভাইরাস সংক্রমণের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে ঢুকতে পারেননি নারী সাংবাদিক। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে দেশে ফিরতে চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে তালেবান নিয়ন্ত্রণাধীন আফগানিস্তানে আশ্রয় হয়েছে শার্লট বেলিস নামের নারী সাংবাদিকের।

সংবাদমাধ্যমে লেখা এক কলামে শার্লট বলেন, করোনা নিষেধাজ্ঞার ফলে নিজের দেশে তাকে ফিরতে দেয়া হয়নি। আশ্রয়ের জন্য তিনি আফগানিস্তানে তালেবানের সাহায্যপ্রার্থী হলে তারা তাকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। এটি এক নির্মম পরিহাস, এক সময় তিনি তালেবানদের নারীর প্রতি আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এখন সেই প্রশ্ন নিজ দেশের সরকারের প্রতি করতে হচ্ছে।

শার্লট বেলিস ২০১৭ সাল থেকে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা আলজাজিরাতে কর্মরত ছিলেন। আলজাজিরার প্রতিনিধি হয়ে আফগানিস্তানের খবর সংগ্রহ করতেন তিনি।

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের সৈন্য প্রত্যাহার এবং তালেবানের দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার খবর সম্প্রচারের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি।

সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান থেকে কাতারে ফেরেন তিনি। কাতারে বয়ফ্রেন্ড জিম হাইলেব্রুকের সাথে নিজেকে অন্তঃসত্তা হিসেবে আবিষ্কার করেন। জিম হাইলেব্রুক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে কর্মরত রয়েছেন। তিনিও পত্রিকাটির হয়ে আফগানিস্তানের খবর সংগ্রহ করছিলেন।

অন্তঃসত্তা হওয়ার ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ বলেন এই সাংবাদিক। কারণ আগে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছিল, তিনি গর্ভধারণ করতে পারবেন না।

মুসলিম দেশ কাতারে বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক অবৈধ হওয়াতে শার্লট কাতার ছেড়ে নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করেন।

এদিকে নভেম্বরে আলজাজিরার চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। পরে বয়ফ্রেন্ড জিম হাইলেব্রুক তার নিজ দেশ বেলজিয়ামে নিয়ে যান শার্লটকে। কিন্তু আবাসিক অনুমতি না থাকায় সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি শার্লট।

অন্য যে দেশে শার্লট বেলিসের আশ্রয়ের সুযোগ ছিলো, সেটি হলো আফগানিস্তান। উপায় না পেয়ে তিনি জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতাদের সাথে কথা বলেন।

তালেবান নেতারা তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, আফগানিস্তানে শার্লট নিরাপদেই থাকবেন। তবে মানুষকে বলতে হবে তিনি ‘বিবাহিত’। কোনো সমস্যা হলে তাদেরকে জানাতে বলেন এবং দুশ্চিন্তা না করতে বলেন।

কলামে শার্লট লেখেন, ‘একজন অবিবাহিত অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তালেবান যখন নিরাপদ আশ্রয় দেয়, তখন বুঝতে হবে আপনার পরিস্থিতি গুরুতর।’

এদিকে শার্লটের কলাম প্রকাশের পর নিউজিল্যান্ডের কোভিড রেসপন্স মন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স বলেন, সাংবাদিক বেলিসের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে কিনা, কর্মকর্তাদের তিনি সেটা পরীক্ষা করে দেখার কথা বলেছেন।

কলামে শার্লট আরো বলেন, মাতৃসেবা ও চিকিৎসার সামর্থ্যের অভাবের ফলে আফগানিস্তানে গর্ভধারণ ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত’ আসামীর মতোই যন্ত্রণাদায়ক।

তবে আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং নিউজিল্যান্ডের জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি আশাবাদী, দেশে ফিরতে পারবেন এই সাংবাদিক । আগামী মে মাসে তার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। সূত্র : আরব নিউজ