রাহাত চৌধুরী, জাবি

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

‘জাবিতে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে’

জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও অছাত্রদের হল থেকে বের করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রতিদিনের সংবাদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চলা আন্দোলনে এই অভিযোগ করা হয়।

জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও অছাত্রদের হল থেকে বের করাসহ ৫ দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে সকাল পৌনে ৯টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে প্রতিকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

আ র ক রাসেলের সঞ্চালনায় অবরোধে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা পার পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দরকার।’

নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সদস্যসচিব পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য এখানে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, আজকে যে গুটিকয়েক মানুষ এখানে দাঁড়িয়েছি, শুধু তারাই আন্দোলনকারী নয় বরং প্রত্যেকটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা হাজির হয়েছি।’

ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের কোনো বাস্তবায়ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারেনি। অছাত্রদের বের তো দূরে থাক, বরং প্রশাসন তাদের নিয়ে ভাগবাটোয়ারার মিটিং করছে প্রতিনিয়ত। আমরা প্রাথমিকভাবে প্রতীকি অবরোধ করছি। প্রশাসন আমাদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে, প্রয়োজনে আরো কঠোর কর্মসূচিতে যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘৪ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য বলেছিলেন, ৫ কর্মদিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বের করবেন। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ছিল শেষ কর্মদিবস। কিন্তু প্রশাসনের কোনো তৎপরতা দেখিনি। আমরা চাই, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত হলে স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ ছাত্ররা অপসারিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, তার পেছনে এই প্রশাসনই দায়ী। ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। র‌্যাব ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বলেছে প্রশাসনের দায়।’

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় এখন একটি মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনকে বারবার বলেছিলাম আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করবো। কিন্তু আপনারা আমাদের সাহায্যে চান না। কেন চান না তা জাতি জানে। এই আন্দোলন কোনো দলের আন্দোলন না, এই আন্দোলন একটা পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আন্দোলন।’

অধ্যাপক শামীমা সুলতানা আরো বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক দিকটা আজ কোথাও নেই। শুধু শিক্ষার্থীরা ব্যবহৃত হচ্ছে। আমরা শিক্ষার্থীদের একটাই মেসেজ দিতে চাই, তারা তোমাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে, ওরাই তোমাদের ধর্ষক বানাচ্ছে। কোনো মা-বাবা চায় না তার ছেলে ধর্ষক হোক।’

ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘উপাচার্য রবিবার বলেছেন আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি অছাত্রদের বের করার। তিনি যদি আপ্রাণ চেষ্টা করেই থাকেন, তাহলে এই পাঁচ দিনে অন্তত পাঁচশত শিক্ষার্থী বের করার কথা। যদি সেটা না পারেন, তাহলে কোন নৈতিকতার বলে তিনি পদে আছেন? সেই প্রশ্নটি করতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গত কয়েকবছর ধরে ঘুরে ঘুরে পদে আসছেন। আমরা জানি না তার মধ্যে বিশেষ কী গুণ রয়েছে, কোনো বিশেষ গুণতো দেখতে পাই না। তিনি নিজেও নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত, অসংখ্য নিপীড়নের ঘটনাকে উসকে দিচ্ছেন। তাকে বারবার ক্ষমতায় বসিয়ে কি বুঝাতে চান আমরা বুঝি না।’

পিডিএস/আরডি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাবি,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close