মাওলানা মাসউদুল কাদির

  ১০ মে, ২০২০

রমজানে কেন দেবেন জাকাত

জাকাত ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এক খাত। ইসলামের তৃতীয় খুঁটি বা স্তম্ভ এটি। জাকাতকে ইসলামের একটি শিয়ারও মানা হয়। মুসলমান মানেই তিনি জাকাত দেবেন। রোজা, নামাজ আর জাকাত না দিলে লোকজন তাকে মুসলমান হিসেবেই মূল্যায়ন করতে পারবেন না। ইসলামের এই বিধানটি অসহায়কে সবল করতে এবং সম্পদশালী মানুষের হৃদয়ে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগাতে সহায়তা করে।

জাকাত অর্থ কী? জাকাত অর্থ হলো, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা, বৃদ্ধি পাওয়া। শুধু তাই নয়, জাকাত একাধারে পবিত্রতা, বর্ধিত হওয়া, আশীর্বাদ (ইষবংংরহম) এবং প্রশংসা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আল্লামা জুরযানি জাকাতের আভিধানিক অর্থ করেছেন ‘অতিরিক্ত’। আল মুজামুল অসিতে আছে, যে জিনিস ক্রমে বৃদ্ধি পায় ও পরিমাণে বেশি হয়- তাকেই জাকাত বলা হয়েছে। ইসলামি শরিয়াতের পরিভাষায় জীব যাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর সম্পদে পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ওই সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ আল্লাহর নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে জাকাত বলা হয়।

জাকাতের নির্ধারিত খাত স্পষ্টভাবে আল্লাহতায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘সাদাকাহ (জাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তআকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। [সুরা তওবা : আয়াত ৬০]

এ আয়াতে জাকাতের আটটি খাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে এ খাতগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো :

১. নিঃস্ব ফকির : ফকিহ বলা হয় যার কোনো সম্পদ নেই, নেই তার উপযোগী হালাল উপার্জন, যদ্বারা তার প্রয়োজন পূরণ হতে পারে। যার খাওয়া-পরা ও থাকার স্থান নেই। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। আবার কেউ বলেছেন, ফকির সে যার সামান্য সম্পদ আছে। তবে জীবন ধারণের জন্য অপরের ওপর নির্ভর করে।

ফকিরের সংজ্ঞায় আল্লামা তাবারি বলেন, সে অভাবগ্রস্ত যে নিজেকে সর্বপ্রকার লাঞ্ছনা থেকে রক্ষা করে চলেছে, কারোর কাছেই কিছুর প্রার্থনা করে না।

২. অভাবগ্রস্ত মিসাকন : মিসকিন বলা হয় যার এমন পরিমাণ সম্পদ আছে যাদ্বারা তার ওপর নির্ভরশীল লোকদের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট নয়। আল-ফাতওয়া আল-হিন্দিয়ায় বর্ণিত আছে, মিসকিন এমন ব্যক্তিকে বলা হয়, যার কিছুই নেই, যে মানুষের কাছে হাত পেতে বেড়ায় এবং খোরাক-পোশাকের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হয়।

৩. জাকাত বিভাগের কর্মচারী : যারা জাকাত আদায়কারী, সংরক্ষণকারী, পাহারাদার, লেখক, হিসাবরক্ষক এবং তার বণ্টনকারী এদের সবাইকে জাকাতের ফান্ড থেকে বেতন দিতে হবে।

ক) তাকে মুসলিম হতে হবে, খ) পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকসম্পন্ন হতে হবে, গ) জাকাতের বিধান সম্পর্কে ইলম থাকতে হবে, ঘ) আমানতদারি ও কাজের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকতে হবে, ঙ) স্বাধীন মুসলিম নিয়োগ করতে হবে, ক্রীতদাস নয়।

৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য : ইসলামের জন্য যাদের মন আকর্ষণ করা প্রয়োজন কিংবা ইসলামের ওপর তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত রাখার জন্যে এমন লোকদের জাকাতের খাত থেকে প্রদান করা। ইমাম যুহরি বলেন, যে ইয়াহুদি বা খ্রিস্টান ইসলাম কবুল করবে, সে-ই এর মধ্যে গণ্য, সে যদি ধনী হয় তবুও।

৫. দাসমুক্তির জন্য : যে ক্রীতদাস তার মালিককে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে মুক্তিলাভের জন্য চুক্তিবন্ধ হয়েছে। এখানে এ পর্যায়ে মুসলিম যুদ্ধবন্দিও এ খাতের আওতায় পড়বে। কাজি ইবনুল আরাবি বলেন, মুসলিম দাসকে যখন মুক্ত করতে জাকাতের খাত থেকে দেওয়া যাবে, ঠিক তেমনি মুসলিম বন্দিকে কাফিরদের দাসত্ব শৃঙ্খলা ও লাঞ্ছনা থেকে মুক্ত করার কাজে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা অধিক উত্তম বলে বিবেচিত হবে।

৬. ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য : এমন ব্যক্তি যে ঋণ ভারাক্রান্ত অবস্থায় নিপতিত, তাকে জাকাতের ফান্ড থেকে সাহায্য করা।

৭. আল্লাহর পথে : আল্লাহর পথ বলতে আকিদা বিশ্বাস ও কাজের দিক দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যে পথ।

৮. মুসাফিরদের জন্য : এমন যার নিজ আবাসস্থলে সম্পদ আছে, কিন্তু সফরে সে বিপদগ্রস্ত ও নিঃস্ব তাকে জাকাতের তহবিল থেকে সাহায্য করা।

আমাদের হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে রমজানের সঙ্গে জাকাতের সম্পর্ক কী? জাকাত আসলে যেকোনো সময়ই দিতে পারে ব্যক্তি। তবে পবিত্র রমজানের এ বরকতের সময় জাকাত দিলে সোওয়াব আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। এ কারণে অনেকেই এই রমজানকে জাকাত দেয়ার মওসুম হিসেবে বেছে নেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দিন। আমীন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাকাত,জাকাতের তাৎপর্য,জাকাত আদায়,রমজান
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close