কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
সৌরবিদ্যুতে বদলে গেছে গ্রামীণ জীবন
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার গ্রামীণ জনপদ সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। জলবিদ্যুতের ওপর চাপ কমাতে উপজেলার হাট-বাজার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে স্থাপন করা হয়েছে এসব স্ট্রিটলাইট নামক সৌরবাতি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলে উঠছে এসব বাতি। এতে করে চাপ কমছে জলবিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম পুড়িয়ে উৎপাদিত বিদ্যুতের ওপর।
লোডশেডিংয়ের ঝামেলা না থাকায় এ সড়কবাতিগুলো আলো দেয় সারা রাত। এ আলোর ফলে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই আগের তুলনায় কমেছে অনেক। পাল্টে গেছে উপজেলার গ্রামীণ জীবনমান। গ্রামের মানুষের জীবনেও শহরের পরিবেশের ছোঁয়া লেগেছে।
জানা যায়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি টিআর ও কাবিটার আওতায় উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও নির্জন অন্ধকার সড়কে সৌরবিদ্যুতের (স্ট্রিটলাইট) সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ৪১৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৮৯টি সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়।
এছাড়া একই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজসহ দুস্থ পরিবারে ১৩৮টি সোলার হোম সিস্টেম লাগানো হয়েছে। এতে ২ কোটি ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৩৩ টাকা ব্যয় হয়েছে। আগের বছরও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ মসজিদ মন্দিরে সোলার হোম সিস্টেম বিতরণ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে স্ট্রিটলাইট নামক সৌরবাতি।
চলতি অর্থবছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো সোলার বাতি বসানোর স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে। শেখ হাসিনার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার কালীগঞ্জে বাস্তব রূপ লাভ করছে। সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানো হয়েছে এসব সৌরবাতি। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিগুলো জ্বলছে। আবার সকালের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব সড়কবাতি।
কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী দক্ষিণপাড়া গ্রামের রফিজ উদ্দিন, মিলন মিয়া, কাদির মিয়া, সেলিম মিয়া, লাল মিয়া জানান, আমাদের দেশে শহরে রাস্তায় বাতি দেওয়া হয়। গ্রামের মানুষ যে এই সুবিধা পাবে আমরা কল্পনাও করিনি। কিন্তু এখন সৌরবিদ্যুতের কল্যাণে আমাদের গ্রামের বিভিন্ন অন্ধকার সড়কে আলো জ্বলছে। পাল্টে গেছে গ্রামের মানুষের জীবনমান। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনাও অনেক কমে এসেছে। আগে অন্ধকার রাস্তায় চলাচল করতে ভয় পেতাম। এখন রাস্তায় সৌরবাতি সারা রাত জ্বলে। ফলে রাতে রাস্তায় চলতে কারো মনে তেমন কোনো ভয়-আতঙ্ক নেই। গ্রাম আর গ্রাম নেই, মনে হয় যেন শহরেই থাকি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিবলী সাদিক বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ওই মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি সরকারের সব বরাদ্দে সর্বোচ্চ জনস্বার্থ নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। তাই তিনি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌরবিদ্যুতের বাতি বসানো নির্দেশ দেন। গ্রামের মানুষ এতদিন সড়ক বাতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। সন্ধ্যা হলেই গ্রাম গুলো ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হতো। রাস্তায় আতঙ্কে মানুষ চলাফেরা করতে পারত না। সৌরবাতি বসানোর ফলে রাতের আঁধারে মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। এতে গ্রামের মানুষের জীবনে ও শহরের ছোঁয়া লেগেছে।
পিডিএসও/হেলাল