উখিয়া প্রতিনিধি

  ২২ জুন, ২০১৯

উখিয়ার নব্য ইয়াবা ডন জয়নাল এখন কোটিপতি

মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষিত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রায় অর্ধশত ইয়াবা ব্যবসায়ী নিহত হলেও আইনের আওতায় আসেনি অনেক ইয়াবা কারবারি। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী।

কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফে গোয়েন্দা সংস্থার তালিকার বাইরেও রয়ে গেছে বহু মাদক কারবারি। তারা কতিপয় অসৎ সীমান্তরক্ষী ও পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ কারবার।

জানা যায়, উখিয়ার পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যৎছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার জয়নাল আবেদিন একজন ইয়াবা ডন হিসেবে পরিচিতি পেলেও তিনি বরাবরই অধরা রয়ে গেছেন।

তালিকার শীর্ষে থাকা অনেক ইয়াবা ডন গ্রেপ্তারের পরও নিজের অবস্থান টিকিয়ে সীমান্তে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যার ফলে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রকাশ্যে পাচার করছে কাড়িকাড়ি ইয়াবা। ধ্বংস হচ্ছে দেশ তথা দেশের যুব ও ছাত্রসমাজ। জয়নাল একবার ইয়াবাসহ আটক হয়ে জেলও খেটেছিলেন বলে জানা গেছে।

ঘুমধুম সীমান্তে জয়নাল আবেদীন ইয়াবা ব্যবসা করে গত কয়েক বছরে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নামে বেনামে ঘুমধুম এলাকায় জায়গা জমি কিনে সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও তিনি উখিয়ার হেলাল স্টোর নামক একটি দোকানের কর্মচারি ছিলেন। এরপর উখিয়ার জাকের মার্কেটে একটি দোকান দিয়ে দেউলিয়া হয়েছিলেন। কিন্তু মরণনেশা ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে আজ কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে মতে, জয়নাল সম্প্রতি ঘুমধুমে নির্মাণ করেছেন কোটি টাকা ব্যায়ে বিলাশবহুল বাড়ি। এছাড়া কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় ওয়ার্ল্ড বীচ নামক হোটেলে তার ফ্ল্যাটের ব্যবসা আছে।

সূত্রমতে, ইয়াবা জয়নালের নেতৃত্বে পুরো উখিয়া সীমান্তের বিভিন্ন সিন্ডিকেট মোটা দাগের ইয়াবা লেনদেন ও পাচার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এ কাজে পারদর্শী বিত্তহীন থেকে কোটিপতি হওয়া উক্ত জয়নাল নিজেকে একজন এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে কালো টাকাকে সাদা করতে ব্যস্ত।

সচেতন অভিভাবকদের অভিমত, বর্তমান ভয়াবহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যেসব কিশোর, যুবক জড়িয়ে পড়েছে, তাদের একটি অংশ মাদকাসক্ত ও মাদক পাচারের সাথে কোনও না কোনওভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মতে, কারা ইয়াবা পাচার করে বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে, তাদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষ করে র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশন সহ সমাজের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বা নজরদারির দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, আগামী প্রজন্ম খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।

এলাকাবাসী আরো জানায়, সীমান্তের অপরাধজগত ও নানা অপকর্মের অন্যতম ইয়াবা ব্যবসায়ী জয়নালকে গ্রেপ্তারে বেরিয়ে আসবে ইয়াবা পাচারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জয়নাল জানান, আমরা পাঁচ ভাই এনজিওতে চাকরি করি। পাশাপাশি বাবার জায়গা জমি বিক্রি করে ২৪ লক্ষ টাকা পেয়েছি, সেই টাকা দিয়ে বাড়ি করেছি তাতে দোষের কিছু দেখছি না।

ঘুমধুম এলাকার নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক যুবক জানান, জয়নাল একজন প্রকৃত ইয়াবা গডফাদার তা এলাকার মানুষ অবগত রয়েছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। তাদের পেছনে কারা শক্তি জোগাচ্ছে তাদেরও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। সরকার মাদক নির্মূলে খুবই কঠোর এবং বদ্ধপরিকর।

ফলে তারা যতই শক্তিশালী হোক না কেন ছাড় দেয়া হবে না। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আওতায় নিয়া আসা হবে বলে তিনি জানান।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উখিয়া,নব্য,ইয়াবা ডন,জয়নাল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close