বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

পিকনিক ট্রাজেডির ৪ বছর : অশ্রুতে স্মরণ করলো বেনাপোলবাসি

‘বুকে তীর বিদ্ধ অবস্থায় উড়ছে ৯টি কবুতর। শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। আর পাশেই রক্তের স্রোতে বইয়ের বর্ণমালা মুছে যাচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমার বর্ণমালা তুমি ভালো থেকো।’ বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নির্মিত হয়েছে এসব নিহত শিশুদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ। ১৫ ফেব্রুয়ারী বেনাপোল পিকনিক ট্রাজেডির চার বছর। এদিনটিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার বেনাপোলে শোক দিবস পালিত হয়েছে। ২০১৪ সালের এই দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বেনাপোল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী। এসময় ৭০ জন শিক্ষার্থী ও ৩/৪ শিক্ষক আহত হয়। শোকের এই দিনটিকে ঘিরে বেনাপোল পৌর সভার উদ্যোগে নেয়া হয় নানা কর্মসুচী। সকালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, শোক র‌্যালি, স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার সকালে বেনাপোল বলফিল্ড মাঠ থেকে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে এক বিশাল শোক র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে নিহতদের স্মরনে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে নিহত শিশুদের স্মরন করেন। শোক র‌্যালি ও দোয়া অনুষ্ঠানে বেনাপোলের ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশ গ্রহন করেন। এ সময় নিহতদের পিতা মাতারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এদিন যেন পুরো বেনাপোল শোকের নগরীতে পরিনত হয়।

স্মৃতি স্তম্ভে পুস্প অর্পন শেষে বেনাপোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইজ্জত আলী সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শার্শা উপজেলা নির্বাহি অফিসার পুলক কুমার মন্ডল। এ সময় বেনাপোল পৌর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ মাষ্টার, পৌর কাউন্সিলর শাহবুদ্দিন মন্টু, উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক আজিবর রহমান ও শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হুসাইনসহ বেনাপোলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বেনাপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে মেহেরপুরের মুজিবনগরে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে চৌগাছার ঝাউতলা কাঁদবিলা পুকুর পাড়ে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭ জন শিক্ষার্থী, আহত হয় আরো ৭০ জন শিশু শিক্ষার্থী ও ৩/৪ জন শিক্ষক। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন শিক্ষার্থী মারা যান। ঘটনাস্থলে নিহতরা হলো, বেনাপোল পৌরসভার ছোটআঁচড়া গ্রামের সৈয়দ আলীর দুই মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া (১০) ও তার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী জেবা আক্তার (৮), ছোটআঁচড়া গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মিথিলা (১০), রফিকুল ইসলামের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী রুনা আক্তার মীম (৯), লোকমান হোসেনের ছেলে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র শান্ত (৯), গাজিপুর গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির হোসেন (১০) ও নামাজ গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী আঁখি (১১)। ১৩ দিন পর ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ছোটআঁচড়া গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ইকরামুল (১১) সর্বশেষ দুর্ঘটনার ৩২ দিন পর ১৯ মার্চ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইয়ানুর রহমান (১১)। ঝরে যাওয়া ফুল ফিরে পাবেনা পরিবারের সদস্যরা তাদেরকে অশ্রুতে স্মরন করলো চার বছর পর আবারও বেনাপোলবাসি।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পিকনিক ট্রাজেডি,বেনাপুলবাসী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist