reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ জুন, ২০১৮

দূরত্বমায় আপনাকে ডুবতে হবে

সময়ের সঙ্গে মানুষ এখন দৌড়ে পারছে না। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আয়োজন করে আর পড়া হয় না গল্প, কবিতা বা উপন্যাসের বই। পাঠক বইয়ের কভার দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। ভূমিকা পড়েই বলে দিতে চায় বিস্তারিত। পড়ার চেয়ে ছুঁয়ে দেখার প্রবণতা বেশি কাজ করছে। মানুষের চিন্তা-ধারণা সবই এখন স্বল্প সময়ের মধ্যে অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকার সমসাময়িক পাতায় এখন নির্ধারণ করা হয়েছে নির্দিষ্ট শব্দের। লেখকরা তাই অনুগল্পের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। পাঠকের জন্য বেছে নিচ্ছেন অনুগল্প। গল্পকার রাকিব আল হাসানের ২৫টি অনুগল্পের সংকলন ‘দূরত্বমা’ নিঃসন্দেহ একটি অসাধারণ সংযোজন।

দূরত্বমা বইয়ে সাজুর প্রচ্ছদ দেখে বইয়ের পাতা উল্টানো হলো। খুলে দেখি হাজারো শব্দের বসবাস। উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো অক্ষরগুলো জ্বলজ্বল করছে।

মানুষের জীবনে গল্পেরা কীভাবে আঁকড়ে আছে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। গল্পকে আপনি তাড়িয়ে বেড়ালেও গল্প আপনার পিছু পিছু ছুটবে। সমগ্র মুখে তরুণত্বের ছায়ায় আবৃত রাকিব আল হাসান গল্প কিংবা গল্পের মাহাত্ম্যকথা আপনার হƒদয়ে সুনিপুণভাবে মেলে ধরতে সক্ষম হবে।

রাকিব আল হাসানের দূরত্বমা ৭২ পৃষ্ঠার বইটিতে রয়েছে ভালোলাগা-ভালোবাসার অনুভূতি। প্রতিটি গল্পে রয়েছে হƒদয়ে আনন্দ দেওয়া সুন্দর সুন্দর শিরোনাম। প্রতিটি গল্প গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে চেষ্টা করেছি। অচেনা এ রাকিব আল হাসানকে চিনতে চেয়েছি গল্পগুলো পড়ে।

মূলত দূরত্বমা বইটি মানুষের জীবনে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা ‘প্রেম’ ‘ছেড়ে যাওয়া, ‘না বলা হƒদয়ের স্পদন’ নিয়ে লেখা হয়েছে। গল্পগুলোর মূল উপজীব্য বিষয়ই হচ্ছে প্রেম। প্রতিটি গল্পে প্রেম ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করেছেন লেখক। নতুন কিছু পাওয়ার সুখ যেমনি আনন্দ দিয়ে থাকে, ঠিক আপনাকেও আনন্দ দেবে গল্পগুলো।

বাস্তবিক জীবনে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রেমিক অথবা প্রেমিকা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। হƒদয়ের অব্যক্ত কথা মুখ ফুটে বলতে পারে না। দেখা যায় না বলেই রয়ে যায় শেষ অব্ধি। হƒদয়ে কম্পন সৃষ্টি করবার মতো বিষয়টিই রাকিব আল হাসানের দূরত্বমার প্রথম গল্পে আমি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি। জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছি। ভাবতে চেষ্টা করেছি। মনে হয় আপনাদের জীবনের সঙ্গে মিলে যাবে। গল্পগুলো আকর্ষণ করবে।

হাসপাতালে মানুষের ব্যস্ত সময়। হুড়োহুড়ি। এরই মধ্যে কারো কারো কখনো বা জেগে উঠতে পারে পুরনো প্রেম। মনে পড়তে পারে পুরনো স্মৃতি। যে চেম্বারে বসে থাকতো লামিয়া। সময়ের ব্যবধানে সে চেম্বারটি লেখক রাকিব আল হাসানকে মোহিত করেছিল তা দূরত্বমার দ্বিতীয় গল্প থেকে বোঝা যায়।

প্রেম মানুষের হƒদয়কে কতটা ব্যগ্র করতে পারে এবং কতটা উতলা করতে পারে, এরই বাস্তব এক রূপের দেখা পেলাম দূরত্বমার তৃতীয় গল্পে। এক শ্রেণির লোককে বলা হয় প্রেমিক পুরুষ। এরা নিজেকে উজাড় করে দেন। ডুব দিতে চান প্রেমের ডুবসাগরে। প্রেমিকা হারিয়ে গেলেও, তারা অক্লান্ত মনে প্রেমিকার নাম জপতে থাকেন। এমনকি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত। এমনই এক দৃশ্যের বর্ণনা রাকিব আল হাসান আমাদেরকে অনেকবার দিয়েছেন।

প্রেম মানুষকে ভণিতার দিকে ঠেলে দিতে পিছপা হয় না। মিথ্যে করে কতকিছু বলতে শেখায়। যেমন বলতে শেখায়, শিং মাছের ঝোল হবে? এগুলো সবই প্রেমের গভীরতা থেকে। প্রেমবান মোহ থেকে। কথাটি লেখকের শিং মাছের ঝোল শিরোনামের গল্পটি থেকে বোঝা যায়।

দূরত্বমায় আছে ‘রিভিউ’ শিরোনামে একটি ঝকঝকে গল্প। রাকিব আল হাসানের বই নিয়ে আলাপের সময় অবাক হয়ে ভাবলাম, আমার মন সত্যিই খুব আনন্দ পাচ্ছে। আমি রিভিউ লিখছি। হৈম এবং শীতল রিভিউ লিখে চুটিয়ে প্রেম করছি। আহা কী সুন্দর জীবন! লেখকে মোহিত হয়ে পড়লাম। এ গল্পে হৈম এবং শীতল, দুটি নামই প্রচ- রকম ভালো লেগেছে।

ঢাকা একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতার শহর। এটা বাস্তবচিত্রে নিরেট সত্য দৃশ্যপট অবলম্বনেই লেখা এক গল্প বলে মনে হয়েছে। হঠাৎ করেই মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে সংকট। ভয়াবহ বিপর্যয়। পূর্বের গল্পগুলোতে প্রেম প্রেম আবহে হƒদয়কে ভালোলাগা দিলেও এখানে এসে আমার হƒদয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিচূর্ণন।

আননোন নম্বর থেকে আসা আজনাবীর সামান্য বাতচিত মানুষকে প্রেমের শরবত গিলতে বাধ্য করে। যেমনি বাধ্য করেছেন রাকিব আল হাসান। তার দূরত্বমার ‘জিরো ওয়ান সেভেন এবং একটি হƒদয় হারানোর মতো ঘটনা’য়। কিন্তু এখানেও আছে চরম আকর্ষণ। হƒদয় হারিয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের মনে আকর্ষিত অবগাহনে কেউ কেউ হয়তো জেগে আছেন।

দূরত্বমায় অনেকগুলো গল্প। প্রেমে জর্জর প্রতিটি গল্পেই আছে ভিন্ন ভিন্ন সুর। সবগুলোই ভালো লাগবার মতো। হƒদয়কে মোহিত করবার মতো। হাসি-কান্নার দোলাচলে লেখক রাকিব আল হাসান নির্মাণ করতে পেরেছেন এক দারুণ গ্রন্থ। বিস্ময়ের প্রাচুর্য ঠেলে আমি হয়তোবা সবগুলোর আলোচনা করতে পারবো না। কিন্তু অদ্ভুত অভিনিবেশে হƒদয়ে বাজতেই থাকবে এসব গল্প।

আর সবচেয়ে আকর্ষণ যেখানে, সেটা হলো শেষে। মূলত দূরত্বমা। যেখানে রাকিব আল হাসান নিজের এক চিত্র এঁকেছেন প্রেমকে কেন্দ্র করে। নিজের জীবনের সঙ্গেও যে প্রেম ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ‘মেঘবালিকা’র রিক্তহস্ত ধরে, তার সুন্দর বর্ণনাই দিয়েছেন সেখানে। তবে লেখক মনে করেন, ‘প্রিয়তমা’ শব্দটায় কিছু গুরুচ-ালী দোষ আছে। তার মতে, প্রিয়তমারা কাছে আসে। কিন্তু যারা ক্রমশ দূরে গিয়েও প্রিয় থেকে প্রিয়তর হয়, তাদেরকে কী বলা যায়? লেখক তাদের নাম দিয়েছেন দূরত্বময়ী প্রিয়তমা। অর্থাৎ দূরত্বমা। গল্পগুলোর প্রতিটি শব্দে লেখক তার হƒদয়ের কথাগুলো আটকে দিয়েছেন। পাঠকের সামনে হাজির হয়েছেন নতুন এক চমক নিয়ে। প্রতিটি গল্পে না পাওয়ার আকাক্সক্ষাকে লেখক বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই বলছি, পৃথিবীর প্রেমিকারা প্রেমকে হৃদয়স্থ করতে দূরত্বমায় আপনাকে ডুবতে হবে।

মো. ইমরান হোসেন

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist