টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

  ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

রোহিঙ্গা স্থানান্তর

ভাসানচরকে ‘মরার চর’ বলে ‘আতঙ্ক’ ছড়ানোর অভিযোগ

কক্সবাজারের টেকনাফের শরণার্থী শিবির থেকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপপ্রচার ও আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাসানচরকে ‘মরার চর’ বলে অভিহিত করে একটি চক্র আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তারা বলছে, ভাসানচরে গেলে সবাই মারা পড়বে। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার পেছনে চীন ও মিয়ানমারের ষড়যন্ত্র রয়েছে। টেকনাফের শালবাগান, লেদা ও জাদিমুড়া রোহিঙ্গা শিবিরের ভাসানচরে যেতে রাজি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যেতে রাজিদের তালিকা নেওয়া হচ্ছে। ভাসানচর নিয়ে একটি চক্র ক্যাম্পে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, এমন খবর আমিও শুনেছি। এই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফের জাদিমুড়া এবং শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা খালিদ হোসেন বলেন, আমার নিয়ন্ত্রিত দুটি শিবির থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি রোহিঙ্গাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিদিন এই তালিকা বড় হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে সেখানে না যায়, এ জন্য একটি গ্রুপ অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। এই বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শরণার্থী শিবিরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পের মাঝি (নেতা) ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতিদিন ভাসানচরের বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভিডিওর মাধ্যমে তাদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে। অনেকেই সেখানে যেতে আগ্রহী। ভাসানচরে যেতে রাজি রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

লেদা ক্যাম্পের আনোয়ারা বেগম উন্নত জীবনের আশায় তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তান নিয়ে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি লেদা ক্যাম্পের আনোয়ারা বেগম (৩২)। তিনি বলেন, ঠেঙ্গারচর মারার চর, তুয়ারা হেরে যাইলে মরি যাইবাগই (ভাসানচর মৃত্যুর চর। তোমরা সেখানে গেলে মারা যাবেই)। ভাসানচরে গেলে আত্মীয়-স্বজন দেখতে আসতে পারবে না। সেখানে ভালো খাবারও মিলবে না। এ ছাড়া শিবিরে ত্রাণসহ অন্য কার্ড রয়েছে, সেগুলো নিয়ে নেবে। এসব কথাবার্তা শিবিরের লোকজনের কাছে শুনে, এখন ভাসানচরে যেতে ভয় পাচ্ছি। আনোয়ারা বেগম আরো বলেন, এসব কথা মনে আর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অশান্তির জ্বালায় মিয়ানমার থেকে এখানে এসেছি, আবার এখন থেকে সেখানেও যদি অশান্তি হয়, তা কি ভালো হবে? এমনকি ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাওয়ার পেছনে চীন ও মিয়ানমারের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে শিবিরে প্রচার রয়েছে। ফলে ভাসানচরে যাওয়ার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি। স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নূর বানু বলেন, অন্যদের মতো আমিও ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন শিবিরে লোকজন বলাবলি করছেন বড় বড় ঘর দেখিয়ে সেখানে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে আসলে সুযোগ-সুবিধা কম। তা ছাড়া বর্ষার সময় সেখানে পানি উঠে ডুবে যায়। সে রকম হলে কী করে সেখানে যাব?

কয়েক দিন আগেও ভাসানচরে যেতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন নূর হোসেন। তিনি লেদা শরণার্থী শিবিরের ডি-বল্কের মাঝি। তিনি বলেন, লোকজন কী বলাবলি করছে, তাতে কিছু যায়-আসে না। তবে সেখানে যাওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যেতে হবে। এর আগে সেখানে যাব না। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভাসানচরের বিষয়ে ভুল ব্যাখা প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। তবে কত রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে, তা বলেননি তিনি। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রথম ভাসানচরে শরণার্থীদের বসবাসের জন্য আবাসন গড়ার পরিকল্পনা করা হয়। সে সময় চরটিতে কোনো জনবসতি ছিল না। কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে উন্নত সুবিধাসহ নোয়াখালীর ভাসানচরে ৪৫০ একর জমির ওপর শিবির নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে নৌবাহিনী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close