নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

চোখের সমস্যায় ভুগছেন ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ গাড়িচালক

দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যায় ভুগছেন গণপরিবহনের ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ চালক। এর মধ্যে ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশ চালক উভয় চোখের সমস্যায় ভুগছেন। বাকি ১২ দশমিক ২২ শতাংশ ডান চোখ এবং ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ চালক বাম চোখের সমস্যায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন মানবিক সাহায্য সংস্থা (এমএসএস)। তবে এ পরিসংখ্যান এমএসএসের সঙ্গে চালকদের মৌখিক জরিপের ভিত্তিতে পাওয়া গেছে। আজ থেকে রাজধানীর তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে চোখের মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হবে। ফলে এ তথ্যের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রমাণ পাওয়া যাবে।

সংস্থাটি জানায়, ১ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার সাতটি বাস-ট্রাক টার্মিনালে ৫০০ জন গণপরিবহন চালকদের ওপর প্রাথমিকভাবে প্রশ্নের উত্তরের ভিত্তিতে এ জরিপটি করা হয়েছে। সেখানে ২০২ জন বাসচালক, ৪৭ মিনিবাসচালক, ১২০ লরিচালক এবং ১৩১ জন ছিলেন ট্রাকচালক। এদের মধ্যে ৪৩৭ জন আন্তঃজেলা রুটের ও ৬৩ জন মহানগর রুটের চালক। তাদের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছর। আর এসব চালকদের কাজের অভিজ্ঞতা ১০ বছরের ওপরে।

সংস্থাটি আরও জানায়, এ জরিপটি মূলত প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে করা হয়েছে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক টার্ম বা চক্ষু পরীক্ষা করে জরিপটি করা হয়নি। তবে আই কেয়ার প্রজেক্টের আওতায় চক্ষু চিকিৎসা বা পরীক্ষার মাধ্যমে জরিপের ফল কমবেশি হতে পারে। যা ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি প্রথম অবস্থায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ট্রাকস্ট্যান্ডে চালকদের কম মূল্যে চোখের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। পরে এ সেবা দেওয়া হবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। আর এ সেবা এমএসএসের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করবে আলবাসার ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (আল-নূর এবং মক্কা আই হাসপাতাল)।

গতকাল রাজধানীতে এমএসএসের কার্যালয়ে আই কেয়ার প্রজেক্টের অন্তর্গত গণপরিবহন চালকদের চোখের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে পরিচালিত জরিপের ফল প্রকাশ প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সংস্থাটি। এ সময় জরিপের ফল উপস্থাপন করেন আই কেয়ার প্রজেক্টের উপদেষ্টা তারিকুল গণি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এমএসএস চেয়ারম্যান ফিরোজ এম হাসান ও সহকারী পরিচালক স্বপ্না রেজা প্রমুখ।

জরিপের ফল উপস্থাপনকালে তারিকুল গণি বলেন, জরিপ করা ৫০০ জন চালকের চোখে সমস্যাজনিত ৩৫২ জন বা ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ চালকের মধ্যে ৬২ জন বা ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ চালক পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করেন। ২৭৭ জন বা ১২ দশমিক ২২ শতাংশ চালক কোনো ধরনের চশমা ব্যবহার করেন না। অতিরিক্ত ১৩ জন বা ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ চালক শুধু সানগ্লাস ব্যবহার করেন।

আর ১১১ জন বা ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ চালক বলছেন তাদের চোখে ব্যথা আছে। ২০৪ জন বা ৫৭ দশমিক ৯৫ জন চালক বলছেন তাদের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। ১১৭ জন বা ৩২ দশমিক ২৪ শতাংশ চালক বলছেন তাদের চোখ চুলকায় বা জ্বালাপোড়া করে। আর ৩০ জন চালক বলছেন তাদের চোখে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অধিকতর অনুসন্ধানে জরিপকারীরা বিদ্যমান কিছু সমস্যাও খুঁজে পান।

তিনি আরও বলেন, ৩৫২ জন বা ৭০ দশমিক ৪ শতাংশ চালকের মধ্যে ২৬৫ জন বা ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ চালক বলেন তারা মোবাইল ফোন ব্যবহার ও পত্রিকা পড়তে সমস্যা হয়। আর ১০৯ জন বা ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ চালক গাড়ি চালানোর সময় রোড সাইনবোর্ড ও দোকানের সাইনবোর্ড দেখে পড়তে সমস্যা হয়।

এমএসএস চেয়ারম্যান ফিরোজ এম হাসান বলেন, দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য মারা গেছেন। সড়ক দুর্ঘটনার নানাবিধ কারণ এরই মধ্যে চিহ্নিত হলেও আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস মনে করছে সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরিবহন চালকদের স্বচ্ছ দৃষ্টির জন্য সুস্থ চোখ দরকার। এ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে আই কেয়ার প্রজেক্ট-এমএসএস ঢাকার সাতটি বাস-ট্রাক টার্মিনালে ৫০০ জন পরিবহন চালকদের ওপর একটি প্রাথমিক জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপের উদ্দেশ্য হলো গণপরিবহনের চালকদের চোখের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিরূপণ করে স্বল্প খরচে তাদের চক্ষু চিকিৎসা নিশ্চিত করা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ডে চালকদের কম মূল্যে চক্ষু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। এতে চক্ষু পরীক্ষায় খরচ হবে ৫০ টাকা। ওষুধ ৪০ থেকে ১৭০ টাকা। চশমা ১০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এছাড়া কারো অপারেশনের দরকার হলে মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে। তবে ৫০০ চালকের মধ্যে ৪৩৬ জন চালক এ নামমাত্র মূল্যে চোখের চিকিৎসা গ্রহণ করতে রাজি হয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close