নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮

২০৩০ সালের মধ্যে কৃষিপণ্য উৎপাদন দ্বিগুণের পরিকল্পনা

বর্তমান সরকারের ১০ বছরের শাসনামলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তথা টেকসই, নিরাপদ, লাভজনক কৃষিব্যবস্থা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কৃষি উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষির উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক পণ্যের রফতানি আয় ছিল প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আয় হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি ডলার। কৃষি খাতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আগের বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। কৃষি খাতের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে।

এদিকে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভূ-উপরিস্থ সেচ সুবিধার প্রসার, কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, কৃষি খাতে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খামার যান্ত্রিকীকরণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিভিন্ন ফসলের উন্নত, অধিক ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ জাত এবং কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকার পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষিজমির আওতা সম্প্রসারণ ও একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তা দেওয়ার জন্য নিয়মিতভাবে কৃষি পুনর্বাসন-প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কৃষিক্ষেত্রে ন্যানো প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রতিকূল পরিবেশ অঞ্চলের জন্য কৃষি কর্মসূচি গ্রহণ, সংকটাপন্ন অঞ্চলের পানি উত্তোলনে সতর্কতার বিষয় যুক্ত করে ২০১৩ সালের কৃষি নীতিমালাকে পরিবর্তন করে নতুন ‘জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮’-এর খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। কোনো বস্তুকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে রূপান্তরের পর তা নিয়ন্ত্রণের কৌশল হলো ন্যানো প্রযুক্তি। কৃষিপ্রযুক্তি হস্তান্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষি উপকরণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষির পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিশেষ আঞ্চলিক কৃষি, বিশেষায়িত কৃষি, মেধাস্বত্ব, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি এই নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে ফসলের রোগ, কৃষিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ, ফসলের জাতভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা নির্ণয় ও পুষ্টি আহরণ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ন্যানো সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভূমির গুণাগুণ পর্যবেক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে।

‘কৃষিতে ক্রপ জোনিং ম্যাপ’ ভিশন ডকুমেন্ট ২০৩০ প্রণয়ন, ১৭টি ফসলের হাইব্রিডসহ ২৮টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ২১টি ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ৫টি ধানের জাত উদ্ভাবন, জলমগ্নতা ও লবণাক্ততা সহিঞ্চু সাতটি উফশী জাত ও পাটপণ্য প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং প্রচলিত পাট পণ্যের মানোন্নয়ন করা হয়েছে।

পাটের সুতা ব্যবহার করে জুট-কটন ফেব্রিকস তৈরি করে তা দিয়ে পণ্য প্রস্তু করা হচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার বিপরীতে আবাদযোগ্য কৃষিজমি সর্বোচ্চ ব্যবহার করা নিশ্চিত করা হয়েছে।

কৃষি খাতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে চতুর্থ এবং সবজি উৎপাদনে তৃতীয় দেশ। বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে পৃথিবীর ২৮তম দেশ। এর মধ্যে আম উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাল ৩৩৮ দশমিক ১৩ লাখ টন, আলু ১১৩ দশমিক ৩২ টন, ডালজাতীয় ফসল ১০ দশমিক ২৬ লাখ টন, তেলজাতীয় ফসল ১০ দশমিক ৫৮ লাখ টন এবং মসলাজাতীয় ফসল ৩৫ দশমিক ৬০ লাখ টন উৎপাদিত হয়েছে। এ ছাড়া ফসলের ১ দশমিক ৩৭ লাখ টন বীজ উৎপাদন এবং ১ দশমিক ২৬ লাখ টন বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। বিদেশে তাজা শাকসবজি ও ফল-মূল রফতানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। একই সময়ে ১৩ মিলিয়ন ডলারের আলু রফতানি করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close