অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ২০ অক্টোবর, ২০১৭

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন স্কুলে স্লিপের টাকা খরচে অনিয়ম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও পৌরসভাসহ সব উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ ও প্রাক-প্রাথমিকের উপকরণ কেনায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ (পিইডিপি-৩) প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা উপকরণ কেনার নির্দেশ ছিল। অভিযোগ আছে, উপজেলা শিক্ষা অফিসের কতিপয় অসাধু সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিদের যোগসাজশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে এ অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ২১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সব বিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্লিপ প্রকল্পের আওতায় ৪০ হাজার ও প্রাক-প্রাথমিকের আওতায় ৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসব টাকার সঠিক ব্যবহার হলেও অধিকাংশ বিদ্যালয়েই ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টরা টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া স্লিপের টাকা খরচের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও সদস্যরা মিলে পরিকল্পনা করার কথা থাকলেও তা অনেক বিদ্যালয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এর আলামত পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নামে-বেনামে বিল ভাউচার দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন। যা পরবর্তী সময়ে উপকরণ কেনার ক্ষেত্রেও একই ভাউচার দেখানো হয়েছে। ব্যাংক থেকে স্লিপের টাকা উত্তোলনের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে পরিকল্পনা ফরমে বিভিন্ন উপকরণ কেনার ক্ষেত্রেও একই ভুয়া-ভাউচার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাল কিনেছেন এক জায়গায় কিন্তু বিল-ভাউচার দেখানো হয়েছে জায়গার। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে উপকরণ কেনার কোনো বিল-ভাউচার বা অফিস ফাইল কিছুই নেই। ফুলের বাগান তৈরির জন্য ভাউচার দেখালেও বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই নেই ফুলের বাগানের অস্তিত্ব। আবার কে নো জায়গায় থাকলেও সেটা দেখে বোঝা গেছে, বাগানটি অনেক আগের তৈরি করা। এ ছাড়া স্লিপের উপকরণ কেনার জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি আলাদা স্লিপ কমিটি থাকলেও প্রধান শিক্ষকরা তাদের না জানিয়েই নিজের ইচ্ছামতো উপকরণ কিনেছেন। নির্দিষ্ট দোকান থেকে উপকরণ কেনা ও তৈরিতেও শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা এ টাকা ব্যয় করেন। তাদের পরামর্শে সংশ্লিষ্ট দোকান থেকে উপকরণ কেনা হয়েছে। ফলে উপকরণের পরিমাণ ও গুণগতমান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলার জন্য দোলনা স্লিপারে দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি। স্লিপ কমিটির রেজ্যুলেশন খাতায় একই ব্যক্তির একাধিক স্বাক্ষরসহ নানা অসঙ্গতিও দেখা গেছে। এভাবে উপকরণ কেনার নামে নয়-ছয় করা হয়েছে। আবার প্রাথ-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুসজ্জিতকরণ কক্ষ নির্মাণ ও সে ঘরের চারিদিকে দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন চিত্র ও ঘর সজ্জিতকরণের কথা থাকলেও তারা তা করেননি। অনেক বিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ৫ হাজার টাকা করে তুলে খরচ দেখালে তাদের বিদ্যালয়ে কোনো সুসজ্জিতকরণ কোন কক্ষ দেখতে পাওয়া যায়নি।

সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের টাকার মাধ্যমে টয়লেট, টিউবয়েল ইলেকট্রিক ও ওয়াটার স্যানিটেশন কাজ করার বিষয়ে বলা হলেও সেসব টয়লেট বা টিউবওয়েল কোনো মেরামতের ছোঁয়া লাগেনি।

সরেজমিনে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকায় পুরো তথ্য না পাওয়া যায়নি। তবে সেখানকার একজন সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্লিপের টাকার কোনো রেজ্যুলেশন লেখা হয় না। সেখানে মা সমাবেশ হওয়ার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সেখানে নতুন করে সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করতে দেখা গেছে।

এছাড়াও সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই মহেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়েও প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে স্লিপ কমিটির সদস্য নাসরিন খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি নিজে প্রায় ৭ হাজার টাকা শিক্ষার্থীদের জন্য টিফিন বক্স, জ্যামিতি বক্স কিনে বিতরণ করেছি।

মা সমাবেশ হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুলটিতে ২০১৪ সালের পর আর কোনো মা ও অবিভাবক সমাবেশ হয়নি। সদর উপজেলার ১২০ নং আতাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, সেখানে সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ আগে না থাকলেও বর্তমানে সুসজ্জিতকরণের কাজ চলছে। এছাড়া স্লিপের অন্যান্য বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করতে দেখা গেছে। এছাড়াও ৩৫ নং আমনুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপের বাৎসরিক টাকার মধ্যে তিনি স্কুলের জন্য সাউন্ড সিস্টেম, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, ফাইল কেবিনেট কেনাসহ বিভিন্ন দিবসে ছাত্রছাত্রীদের মেধা পুরস্কার কেনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist