লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

  ২৬ জুলাই, ২০১৭

ফের ধসের শঙ্কায় কমলনগর মেঘনার তীররক্ষা বাঁধ

নিম্নমানের বালু দিয়ে জিও ব্যাগ

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর মেঘনার ভাঙন রোধে উপজেলার মাতাব্বরনগরে নদী তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ চলছে। নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের ইতোমধ্যে ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নদীতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করায় সম্প্রতি ওই বাঁধের ২০০মিটার ধসে গেছে। ফের সংস্কার শুরু হলেও নি¤œমানের বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ভরে ডাম্পিং করার অভিযোগ উঠেছে। কাজে যথাযথ বালু ব্যবহার না করায় ফের ওই বাঁধে ধসের আংশকা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা মনে করছেন, একই সঙ্গে বরাদ্দকৃত টাকায় পাশ্ববর্তী রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডারে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সাড়ে তিন কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। সেনাবাহিনী যথাযথভাবে কাজ করায় রামগতি উপজেলা সদর ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু জনগণের দাবি থাকলেও কমলনগরের বাঁধের কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করানো হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হচ্ছে; যে কারণে যত অনিময়ম।

নদী ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজনের অভিযোগ, শুরু থেকে নির্মাণ কাজে বিলম্ব করা হয়েছে। এতে বহু পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভেঙে গেছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, হাটবাজার ও ফসলি জমি। বিলম্বে কাজ শুরু করা হলেও কারণে-অকারণে দফায়-দফায় কাজ বন্ধ রাখা হয়। বার বার নি¤œমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা; তারপরেও যথাযথভাবে কাজ হচ্ছে না।

জানা গেছে, তীর রক্ষা বাঁধের ব্লক প্লেসিংয়ের আগে নদীতে জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীতে নিক্ষেপ (ডাম্পিং) করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং না করেই বাঁধ নির্মাণ করে। এতে করে বাঁধ নির্মাণের তিন সপ্তাহের মাথায় ধস নামে। ফের সংস্কার শুরু করলেও তা হচ্ছে নি¤œমানের বালু দিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত ১০০ থেকে ১২০ এফএম বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা থাকলেও কম মূল্যের ৫০ থেকে ৬০ এফএম বালু দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে বাঁধ রক্ষা হলে ঢেউ ও জোয়ারের আঘাতে ওই চিকন বালু ব্যাগ থেকে দ্রুত বেরিয়ে যাবে। তখন ফের বাঁধে ধস নেমে আসবে।

সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, কমলনগরে এক কিলোমিটার বাঁধের জন্য ২৫০ কেজি বালু ভর্তি ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৭ টি জিও ব্যাগ এবং ১৭৫ কেজির ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। একই বাঁধে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৬১ টি ব্লক ডাম্পিং এবং প্লেসিং করা হবে। তীর রক্ষা বাঁধ থেকে নদীর ভেতরে সাড়ে ৪ মিটার ব্লক ডাম্পিং এরপর ৪৫ মিটার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, তীর রক্ষা বাঁধের প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বালু প্রাপ্তিতে সমস্যা হচ্ছে। তাবুও যথাযথ বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী ইয়ার আলী বলেন, একাধিকবার নি¤œমানের বালু ও জিও ব্যাগ ফেরত পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ডাম্পিংয়ে ৯০ এফএম এর বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে আশা করি বাঁধের কোন সমস্যা হবে না।

২০১৪ সালে মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দকৃত টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার, রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার ও রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ হওয়ার কথা। ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারি কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে সাড়ে তিন কিলোমিটার সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। এদিকে ওই বরাদ্দ থেকে ৪৮ কোটি টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটার কাজ পায় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি.। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর ২০১৬ সালের শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist