প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

অনিয়ম ও শর্তে আটকে আছে খাদ্য গুদামে ধান সংগ্রহ

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই ধান সংগ্রহ করছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ।

এদিকে মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ধান কেনা শুরুর ৩৫ দিনে মাত্র ২৩০ টন ধান কিনতে পেরেছে খাদ্যগুদাম কর্তপক্ষ। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে কৃষিবিভাগের গাফলতি, অকৃষকদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, আদ্রতার সমস্যাকে অন্যতম মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। লালমনিরহাট থেকে জিন্নাতুল ইসলাম জিন্নাহ ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে সালাহ্উদ্দিন শুভ্রর পাঠান খবর :

লালমনিরহাট : আদিতমারী উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলার ২ হাজার ৪৭৪ কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ১ হাজার ৪৮৩ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে। ২৬ টাকা কেজি দরে একজন কৃষক সর্বোচ্চ ১৫ মন ধান বিক্রি করতে পারবেন। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে এ ধান কেনার নির্দেশ আছে। এজন্য লটারির মাধ্যমে কৃষকও নির্বাচন করা হয়।

শর্তানুযায়ি, কেনার সময় ধানের আদ্রতা ১৪ ভাগ থাকার কথা। কিন্তু ১৮ থেকে ২০ ভাগ আদ্রতার ধান ক্রয় করা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টন প্রতি ১ হাজার টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এদিকে ধান ক্রয়ে কোন কৃষকের কাছ কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও বস্তা সেলাই, ওজন, স্টেনসিল বাবাদ প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা নিচ্ছেন গুদাম শ্রমিকরা। অথচ নিয়মানুযায়ি লেবারের বিল হ্যান্ডলিং ঠিকাদার পরিশোধ করবেন। এছাড়া কৃষক ভ্যানে ১৫ মন ধান নিয়ে গোডাউনে এলেও ব্যবসায়ীরা ধান নিয়ে আসছেন ট্রাক ও ট্রলি ভরে। সরেজমিনে গুদাম পরিদর্শন করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগি কৃষকের অভিযোগ করেন, ‘ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোডাউনে ধান দিলে এসব কোন কিছুই গুদাম কর্মকর্তা দেখেন না। টাকা দিলে অনায়াসে এসব ধান গোডাউন বিক্রি করা যায়।’

তবে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ওসিএলএসডি আ.জ.ম হাবিবুল হক। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদার বিল পরিশোধ না করায় গোডাউনের শ্রমিকরা টাকা নিচ্ছেন।’ ট্রাক্টরে ধান নিয়ে আনা প্রসঙ্গে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েকজন কৃষক মিলে একসঙ্গে ছোট ছোট ট্রলিতে করে ধান নিয়ে আসতে পারবেন।’ এ বিষয় কথা বলতে উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু হেনা মোস্তফা কামালের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : উপজেলার তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৪০০ কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া ২৬ টাকা দরে এ ধান সংগ্রহ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। কিন্তু গত ৩৫ দিনে মাত্র ২৩০ টন ধান কিনেছে খাদ্য বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি বিভাগের তালিকা প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে ঢুকে পড়েছে ব্যবসায়ি, ফরিয়াসহ বিদেশে অবস্থান করা ব্যক্তির নাম।

তালিকাভূক্ত কৃষক উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেক গ্রামের আব্দুল মালিক বলেন, ‘আমি জানতামই না আমার নাম তালিকায় আছে, কেউ জানায়নি। তাই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।’ একই গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া বিদেশ থাকেন। অথচ তার নাম কৃষকের তালিকায়। একই ভাবে কমলগঞ্জ পৌরসভা, ইসলামপুর, শমসেরনগর, আলীনগরসহ অন্য ইউনিয়নে তালিকায়নে অনিয়ম পাওয়া গেছে।

সোমবার পর্যন্ত শমসেরনগর খাদ্য গুদামের ১৩০ টন ধান কেনা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকির আহমেদ। একইভাবে ভানুগাছ খাদ্য গুদামে ধান কেনা হয়েছে ১০০ টন। সত্যতা নিশ্চিত করে এই গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সবিদা দেবী জানান, অনেক কৃষক নিদিষ্ট সমপরিমান ধান দিতে পারচ্ছেন না। আদ্রতা বজায় রাখতে গিয়ে কিছু কিছু কৃষক ধান দিতে চাননি।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, আমি যোগদানের পর ইউনিয়ন ওয়ারী দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বলেছি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।’ তালিকায় অনিয়মের বিষয়টি সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবো।’ ঠা-ার করাণে কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন কমলগঞ্জ ইউএনও এবং উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি আশেকুল হক। অনিয়মের বিষয়টি ‘দেখা’র আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের অভিযান সফল হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close