অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আঞ্চলিক গণপরিবহনে নৈরাজ্য

যাত্রী দুর্ভোগ চরমে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ নেই

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে চলছে আঞ্চলিক গণপরিবহন। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাস দিয়ে চলছে যাত্রী আনা-নেওয়া। এমনকি বিআরটিএ থেকে যেসব বাসের রুট পারমিট দেওয়া হয়নি, সেই বাসও চলছে দেদার। এদিকে তিন বছর ধরে আঞ্চলিক পরিবহন পরিচালনা কমিটির (আরটিসি) সভাই হয়নি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই অবস্থা চললেও এসব তদারকি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে রক্ষা হচ্ছে না যাত্রীস্বার্থ।

এদিকে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ রুট পারমিটের ক্ষেত্রেও ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করছে না বিআরটিএ। এমনকি লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা যানবাহনের প্রকৃত সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাবও নেই তাদের। এই সুযোগে আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় চলাচলের অযোগ্য গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছে একশ্রেণির অসাধু পরিবহন মালিক। সেবা তো দূরের কথা, যাত্রীরা সামান্যতম নিরাপদ নন এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটে কোনো এসি বাস সার্ভিস নেই। মিনিবাসে যাত্রী গাদাগাদি করে চলাচলেন। অনেক সময় বাসে উঠতে রীতিমতো শারীরিক যুদ্ধে নামতে হয়। তবে আগ্রহী বহু প্রতিষ্ঠান আধুনিক বাস সার্ভিস চালুর ইচ্ছা প্রকাশ করলেও মালিক সমিতির বাধায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব রুটে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। মালিক-চালকরা ইচ্ছামতো চালাচ্ছেন গণপরিবহন। বিরতিহীনের নামে চলা গেটলক ও মহানন্দা বাস সার্ভিস এখন নামেই বিরতিহীন! যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করছেন। উপজেলাগুলোয় চাহিদামতো বিআরটিসির বাস সার্ভিস নেই। সরকার নির্ধারিত ভাড়াও মানছেন না মালিকরা

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন মালিকরা বাস সার্ভিসকে জিম্মি করে রাখায় এখানে গড়ে উঠতে পারছে না আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের লক্কর-ঝক্কর গাড়িতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের অকট্রয় মোড়ের গেটলক কাউন্টারে যাত্রী ছাউনি ও টয়লেট নেই। ফলে যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে নানা ভোগান্তিতে। মহানন্দা বাসস্ট্যান্ডে রাতের বেলায় বসে গাঁজার আখড়া। টয়লেট আর যাত্রী ছাউনিতে নোংরা পরিবেশ। সেখানে মানুষ তো দূরের কথা, গরুÑছাগলেরও থাকার পরিবেশ নেই। এসব বাস সার্ভিসে যাত্রীসেবার মান তলানিতে থাকলে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ২০ পয়সা হারে ভাড়া নেওয়ার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহীর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। সেই হিসেবে ৬০ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা। সেখানে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৭০ টাকা। আবার মহানন্দা ও গেটলক সার্ভিসের নাম করে অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও অনেক বাসে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া দিলেও তাদের যেতে হচ্ছে দাঁড়িয়ে। যাত্রী ওঠানামার জন্য এসব গাড়ি প্রতিটি স্টপেজেই দাঁড়াচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় প্রতিটি রুটেই দেখা গেছে যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র।

বিআরটিএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া বন্ধ বহুদিন ধরেই। কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে পুরনো বাসগুলোকে আর ফিটনেস দেওয়া যায় না। তাই বলে ফিটনেসবিহীন বাসগুলোর চলাচল কিন্তু বন্ধ হয়নি।

বিআরটিএ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল কিবরিয়া নতুন সড়ক আইন বাস্তাবায়ন সংক্রান্ত এক সভায় বলেছেন, তিনি সাত মাস আগে এ সার্কেলে যোগদান করে এ পর্যন্ত ২৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২১০ মামলা দেওয়া হয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।

সম্প্রতি গণমাধ্যমকর্মী, শ্রমিক ও পরিবহন মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল পুলিশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিয়ন্ত্রণ, নতুন আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close