জুয়েল রানা লিটন, নোয়াখালী

  ২০ জুলাই, ২০১৮

মেঘনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে হাতিয়ার বয়ার চর

পর্যটন, কৃষি ও অর্থনৈতিক অনেক সম্ভাবনা থাকলেও ভাঙনের কবলে পরে বিছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। উত্তাল মেঘনার খরস্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে উপজেলার মূল ভূখ- থেকে হারিয়ে গেছে কমপক্ষে ৫০০ একর আবাদি জমি। এ সময় গৃহ হারা হয়েছে শতাধিক পরিবার। বয়ারচরের দক্ষিণপ্রান্তে মেঘনা ঘেঁষে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্মিত বেড়িবাঁধের একেবারে দ্বারপ্রান্তে মেঘনার ঢেউয়ের আঘাতে তছনছ হয়ে চলছে অনেকেরই সাজানো ঘর-বাড়ি।

স্থানীয়রা বলছেন, ব্লকবাঁধই ভূখ- রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। কিন্তু পাউবো প্রকৌশলী বলছেন, ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষায় সময় ও প্রচুর অর্থ দরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিন দিন ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। মাত্র কয়েক বছর আগে মেঘনার বুকে থেকে জেগে ওঠা বয়ার চরের একাংশ বর্তমানে আবারও মেঘনার বুকে হারিয়ে চলছে। স্থানীয় হরণী ইউনিয়নের প্রশাসক মোরশেদ আলম ও শাহরাজ নেতা বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা মেঘনার পুনঃভাঙনের কবলে পড়েছে।

জেলা বাতায়ন সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর থেকে হাতিয়া উপজেলায় যেতে সড়ক পথে ৫০ কিলোমিটার ও নদীপথে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ৪ লাখ ৫২ হাজার ৪৬৩ জনসংখ্যার এই জনপদের আয়তন ২১০০ বর্গ কিলোমিটার। উপজেলার মোট ৯৭ হাজার ৮১৮ হেক্টর জমির মধ্যে সাড়ে ৬০ হাজার হেক্টর মোট ফসলি জমি। তবে ভাঙনে মুখে পরে ক্রমেরই কমছে এই পরিসংখ্যান।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া তথ্য সূত্রে জানা যায়, ১৯৬০ সাল থেকে ব্যাপকভাবে নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে এই উপকূলীয় উপজেলাটি। তথ্যমতে, ১৯৬৮ সালে হাতিয়ার নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ১৯৬৮ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত হাতিয়ায় প্রায় ২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা মেঘনায় বিলীন হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক ভাঙনের শিকার হয় হরণী-চানন্দী, সুখচর, নলচিরা, চর ঈশ্বর, সোনাদিয়া ইউনিয়ন। পরবর্তী ১০ বছরে বিলিন হয়েছে আরো ২৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ১৯৬০ সালে হাতিয়ায় ১১টি ইউনিয়ন থাকলেও, ৪০ বছরে নীললক্ষ্মী ও হরণী ইউনিয়ন ২টি সম্পূর্ণভাবে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীকালে নদী ভাঙনের কারণে হাতিয়া উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন অফিস ওছখালীতে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সম্প্রতি বয়ার চর, নলের চর, কেরিং চর নিয়ে হরণী ইউনিয়ন এবং দ্বীপ হাতিয়ার সুখ চর, চর কিং, চর ঈশ্বর, চর চেঙ্গা এবং জাহাজ মারা নিয়ে ৬টি ইউনিয়ন এলাকায় ক্রমাগতভাবে নদী ভাঙন চলছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে মেঘনার প্রবল ঢেউয়ের তীব্র রাক্ষুসেতেজে আঘাত হানতে পারে বাঁধে। এতে বয়ারচরের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল বিলীন হতে পারে অতি নিকটে। ইতোমধ্যে, ভাঙনের কবলে অনেকটা বিলীন হয়ে হয়ে গেছে টাংকির বাজার। হুমকির মুখে রয়েছে এখানকার মসজিদ ও হাফেজি মাদ্রাসা। এখানকার স্থানীয় দোকানি ও জেলেরাসহ গ্রামবাসী চেষ্টা করছেন কোনো রকম ঝাউ গাছপালার প্রাচীর দিয়ে জোয়ারের তীব্রতা ব্যাহত করতে। কিন্তু কোনো কিছুই টিকছে না। মেঘনার ঢেউয়ে এ বাজারের পল্লী বিদ্যুতের বেশ কয়েকটি পিলারও নদীতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এলাকাবাসী বলেছেন, একমাত্র ব্লক বাঁধই এ অঞ্চলের মূল ভূখ- তথা জনবসতিকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে। নচেৎ প্রবল স্রোতের মুখে খড়কুটো দিয়ে কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়। স্থানীয় মফিজুল হক মাঝি বলেন, এ পর্যন্ত তিনবার মেঘনার কবলে পড়েছেন। মেঘনার বুকেই ছিল তার ঘর-বাড়ি ও জায়গা-সম্পত্তি। সবই বিলীন হয়ে আজ তিনি বেড়ির কুলে কোনো রকম মাথা গুঁজে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন পার করছেন। মাঝি আরো বলেন, নদীতে আগের মতো দস্যুদের কোনো ছোবল নেই। জাহাজ্যার চরে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প হওয়ার পরেই মোটামুটি নদীতে তারা অনেকটা নিরাপদে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া, সরকারি সাহায্য সহযোগিতাও অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেন মফিজ।

একাধিক স্থানীয় বলেন, বছরে একবার কিছু দেওয়া হয়। এরপর আর খবর থাকে না। বর্তমানে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে উপকূলে কয়েক সহস্রাাধিক জেলে মেঘনায় আসছে ইলিশের প্রহর গুনছেন। তারা আশা রাখছেন, আসছে ইলিশের ভরা মৌসুমে চাহিদা মাফিক ইলিশ পেলে হয় তো মহাজনের দায় দেনা পরিশোধ করে কোনো রকম ঢাল-ভাত খেয়ে জীবন চালাতে পারবেন।

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন কবলিত এলাকার রোধকল্পে বিকল্প চিন্তা করছে। তবে সেসব করতে সময় ও প্রচুর অর্থ দরকার।

হাতিয়া আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা আলী জানান, তিনি পুরো হাতিয়া এবং জেড়ে ওঠা চরাঞ্চল মেঘনার ভাঙনের ছোবল হতে রক্ষাকল্পে সরকারের কাছে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন। এটি বাস্তবায়িত হতে সময় লাগবে। তিনি আশা করেন, এটি বাস্তবায়িত হলে হাতিয়ার ভাঙন অচিরেই থেমে যাবে বলে মনে করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist