মো. রাজু খান, ঝালকাঠি

  ২৬ মে, ২০১৮

দুই বছরেও হয়নি বেড়িবাঁধ

জোয়ারেই তলিয়ে যায় বিষখালী তীরের ৪ গ্রাম

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী নদীতীরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ না থাকায় দক্ষিণ আউড়া বাজার থেকে চিংরাখালী পর্যন্ত স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় চারটি গ্রাম। প্রায় দুই বছর আগে বাঁধসহ নদীর পাড় বিলীন হয়ে যাওয়ার পর এখনো নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। প্রশাসনের উদ্যোগ দেখতে না পেয়ে ভুক্তভোগী কৃষক ও জেলেরা বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে এক কিলোমিটার বাঁধ দিয়ে ছিলেন। তাতেও রক্ষা হয়নি তাদের। ফলে আসন্ন বর্ষায় ভুক্তভোগী হবে শ্রমজীবী প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ। আর ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বরাদ্দ পাওয়ার কথা, বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।

বাঁধ না থাকায় উপজেলার আউড়া, জয়খালি, চিংড়াখালি ও মশাবুনিয়া গ্রামের প্রায় অর্ধ লাখ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। যাদের অধিকাংশের পেশা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ। প্রায় দুই বছর আগেই নদীর পাড় বিলীন হয়ে যাওয়ার পর জোয়ারের পানিতে জমি তলিয়ে থাকায় ১২ মাস কৃষিকাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। পানি ঠেকাতে একাধিকবার কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে সাময়িক বাঁধ দিলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বিশেষ করে এই বর্ষা মৌসুমের পূর্ণিমার জোয়ারে কৃষিজমির পাশাপাশি নদীর পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করে তলিয়ে যায় রান্নার চুলাও।

বর্তমান সরকারের এমপি ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে এই বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কোনো কাজে আসেনি। এ বিষয়ে কথা হয় জয়খালির জেলে মোফাচ্ছের, মিরন জমাদ্দার, মশাবুনিয়া গ্রামের সুমন দাস, চিংড়াখালির শাহজাহান, রহমানসহ আরো অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, আমরা বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে এক কিলোমিটার বাঁধ দিয়েছি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। পূর্ণিমার জোয়ারে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি উপচে গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামের কৃষকরা কৃষিকাজ করতে না পারায় বেকার হয়ে পড়ছেন। এলাকাবাসী জানান, পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে চুলা তলিয়ে থাকায় রান্না বন্ধ থাকায় প্রায় সময়ই না খেয়ে থাকতে হয় আমাদের। তারা আরো বলেন, ‘আমাদের এলাকার এই বাঁধ নির্মাণ ছিল বর্তমান সরকারের এমপি বজলুল হক হারুনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন আজ পর্যন্ত আমরা দেখছি না।’

দক্ষিণ আউড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. মনির জোমাদ্দার জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে এ বাজারটি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি বাজার। এখানে নদীপথে নৌকায় ধান, চাল, কাপড়সহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে এসে বেচা-কেনা করতেন বিক্রেতারা। বিশেষ করে গরুর হাট ছিল অন্যতম। বরগুনার দেউলী, কাজিরহাট, সুবিদখালী, ঝুপখালী, আমুয়া, ভান্ডারিয়া, কৈখালী, নিয়ামতিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসে এই হাট থেকে গরু কিনে নিতেন। আজ বিষখালী নদীর ভাঙনে সেই বাজার বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও কাঁঠালিয়ার বাইপাস সড়ক হতে দক্ষিণ আউড়া বাজার পর্যন্ত সড়কটিও দীর্ঘদিনে নির্মাণ করা হয়নি। তাই বিষখালী নদীর পানি এই এলাকায় প্রবেশ করে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রোমান হাসান জানান, কাঁঠালিয়ার দক্ষিণ আউড়া বাজার থেকে চিংরাখালী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া আছে, বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে। ইতিপূর্বে নদীভাঙনে আগের বাঁধ বিলীন হয়ে যাওয়ায় এই বাঁধটি নির্মাণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে শুধু এই বাঁধটি নয়, রাজাপুরের বড়ইয়া গ্রাম থেকে শুরু করে কাঁঠালিয়া আমুয়া পর্যন্ত বিষখালী নদীর মোট ৩০ কিলোমিটার বাঁধের একটি প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও আমুয়া বন্দররক্ষা প্রকল্পের জন্য ডিজাইন ও প্রাক্কলন তৈরির কাজ চলছে।

এ বিষয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের এমপি বজলুল হক হারুন জানান, কাঁঠালিয়া থেকে রাজাপুরের মঠবাড়ি নাপিতের হাট পর্যন্ত বিষখালী নদীতীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রকল্পটি আগামী বাজেটে অনুমোদন দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের মধ্যেই দক্ষিণ আউড়া বাজার থেকে চিংরাখালী পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist