সজল আহমেদ, সখীপুর (টাঙ্গাইল)

  ২১ মার্চ, ২০১৮

বিশ্ব বন দিবস আজ

সখীপুর বনের ভেতর প্রায় অর্ধশত অবৈধ করাতকল

বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের বিধান না থাকলেও টাঙ্গাইলের সখীপুরের সংরক্ষিত শাল-গজারি ও সামাজিক বনায়নের বনে গড়ে উঠেছে ৪৮টি করাতকল। অভিযোগ আছে, স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজসে এই করাতকল গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ওইসব করাতকলে দিনরাত চেরান হচ্ছে শাল-গজারিসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চুরি হওয়া গাছ। এতে বন উজাড়ের পাশাপাশি বিলুপ্ত হচ্ছে বন্যপ্রাণী।

এদিকে, অবৈধ করাতকল দ্রুত উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সখীপুর পৌরসভার অনুমোদিত করাতকলের মালিক সমিতি।

টাঙ্গাইল বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (দক্ষিণ) সাজ্জাদুজ্জামান জানান, ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত করাতকলের মালিকদের হয়রানি না করার আদেশ দেয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ওই আদেশ প্রত্যাহার করে আদালত। ফলে অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে আর কোনো বাঁধা নেই। তবে এখনও অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে স্থানীয় বনবিভাগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বন বিভাগের তালিকা ও করাতমালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৪৮টি লাইসেন্সবিহীনের (অবৈধ) মধ্যে বহেড়াতৈল রেঞ্জে ২১টি, হাতিয়ায় ১৫টি বাঁশতৈল রেঞ্জে ৬টি ও পৌরসভায় ৬টি করাতকল রয়েছে। এরমধ্যে বহেড়াতৈল রেঞ্জের কাঁকড়াজান বিটের আওতায়, বিট কার্যালয়ের ৫০ গজের কাছে নয়টি, কচুয়া বিটের আওয়ায় সাতটি এবং হাতিয়া রেঞ্জের কালিদাস বিট কার্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যে বাকি তিনটি অবৈধ করাত কল রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন বহেড়াতৈল রেঞ্জের কাঁকড়াজান বিট কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ওই বিটের খুবই কাছে জয়নাল অবেদিনের ও নূর জামাল করাতকল স্থাপন করেছেন। ওই দুই করাতকলেই গজারি ও সামাজিক বনায়নের আকাশমণি গাছের ছড়াছড়ি দেখা যায়। এসময় নূর জামাল বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা এসব কল চালান বলে দাবি করেন।

আর সখীপুর পৌরসভা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খোরশেদ আলম, আবদুস সামাদ, উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর জুলফিকার শামীম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মীর শামসুল আলম, হাফিজ উদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জামাল হোসেন লাইসেন্সবিহীন করাতকল চালাচ্ছেন। তবে ওই ছয়জন দাবি, পৌরসভার ভেতরে করাতকল স্থাপনের আইন রয়েছে। হাতিবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতিউর রহমান বলেন, ১০ বছর আগেও কত গজারি গাছ ছিল। সন্ধ্যা হলেই শেয়ালের হাঁক-ডাক, অনেক পশু-পাখি দেখা যেত। এখন বনের ভেতর অবৈধ করাতকল গড়ে উঠায় শাল-গজারি বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

করাতকল মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বহেড়াতৈল রেঞ্জের কর্মকর্তা আতাউল মজিদ বলেন, টাঙ্গাইল ডিএফও কার্যালয়ের মাসিক সভায় অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সখীপুর পৌরসভার বৈধ করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি জিন্নত আলী বলেন ‘অবৈধ করাতকলগুলো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় করাতকলে দিনরাত শাল-গজারি আর সামাজিক বনায়নের কাঠ চেরান হচ্ছে। ফলে সখীপুরের শালগজারি এখন প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।’

এদিকে খোঁজ নিয়ে অবৈধ প্রতিটি করাতকল মালিকের নাম জানা গেছে। তবে মালিকরা তাদের মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করেনি। তাছাড়া তাদের কাছেও নেই বৈধ কাগজপত্র ও লাইসেন্স।

এদিকে খোঁজ করে অবৈধ করাতকল মালিকদের নিয়ে উপজেলায় একটি সমিতিও রয়েছে বলে জানা যায়। উপজেলার গড়বাড়ি গ্রামে সামাজিক বনের পাশে স্থাপিত কল মালিক আবুল কাশেম সভাপতি পদে ও উপজেলার সাপিয়াচালা গ্রামে স্থাপিত করাতকলের মালিক কামরুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তবে ওই দুইজন দাবি করেন, তাদের করাতকল এখন বন্ধ। আগে তারা সভাপতি-সম্পাদক ছিলেন, তবে এখন একবছর ধরে সমিতির কার্যক্রম নেই।

সখীপুর উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন ‘বনের কাছে ও ঘেঁষে অবৈধ এসব করাতকলে অবাধে বনাঞ্চলের গাছ চেরানো হলে বন ধ্বংস হতে বেশি সময় লাগবে না। এভাবে চলতে থাকলে প্রকৃতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে আর বিলুপ্ত হবে বন্য প্রাণী।’

এ ব্যাপারে সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, ‘সংশোধিত বন আইনেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সর্বশেষ অভিযানে সাতটি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছিল। শিগগিরই আবার অবৈধ করাতকলগুলো উচ্ছেদে ট্রাস্কফোর্স গঠন করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist