ক্রীড়া ডেস্ক

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

রোনালদোর দুঃস্বপ্নের প্রত্যাবর্তন

রিয়ালের হার ‘রিয়ালে’র জয়

রিয়াল মাদ্রিদ ০ : ১ রিয়াল বেটিস

নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন ৫ ম্যাচের। স্প্যানিশ ফুটবলের ওই নিষেধাজ্ঞার প্রথমটা কাটিয়েছেন সুপার কাপে। বাকিগুলো লা লিগায়। ৪ ম্যাচ অপেক্ষার পর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে লিগে ফিরতে দেখার আনন্দে ভাসছিল রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তরা। সমর্থকদের সেই আনন্দটাই ম্যাচ শেষে রূপ নিল বিষাদে। প্রাণভোমরা প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদ হেরে গেছে। জিনেদিন জিদানের দলকে হারিয়েছে আরেক রিয়াল, রিয়াল বেটিস; ১-০ গোলে।

নিজ দুর্গ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না রিয়ালের। লিগ ম্যাচের দুটি ম্যাচেই পয়েন্ট খুইয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা। দলের সেরা তারকা রোনালদোর হাত ধরেই দুঃম্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার মিশনে নেমেছিল মাদ্রিদ জায়ান্টরা। কিন্তু স্বস্তি তো দূরের কথা ঘরের মাঠে রিয়ালের দুঃস্বপ্নের মালাটা আরো দীর্ঘায়িত হলো জিদানের দলের। পুড়তে হলো হতাশার আগুনে। যাকে ঘিরে এত উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল সেই রোনালদোই এদিন নিষ্প্রভ, খেললেন নিজের ছায়া হয়ে। পর্তুগিজ উইঙ্গারের ব্যর্থতা পুরো ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিকী চিহ্নও বলা যেতে পারে। অপ্রত্যাশিত এই হারে বার্নাব্যুতে লিগের তিন ম্যাচে রিয়ালের পয়েন্ট দাঁড়াল শূন্য, সব মিলিয়ে ৮। যা জিদানের দলকে পয়েন্ট তালিকার সাতে ঠেলে দিয়েছে। রোনালদোর প্রত্যাবর্তনের রাতটা শেষ পর্যন্ত কান্না হয়ে ঝরেছে মাদ্রিদিস্তাদের।

মাদ্রিদ জায়ান্টদের আক্রমণভাগের অন্য সারথি গ্যারেথ বেল, মার্কো আসেনসিও, ইসকোরাও নিজেদের হারিয়ে খুঁজলেন। ম্যাচজুড়ে ২৭টি সুযোগ নষ্ট করার খেসারত দিতে হয়েছে পয়েন্টবঞ্চিত হয়ে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে গোল করে ইউরোপ সেরা দলটিকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ উপহার দিয়েছে ‘ভের্দেরোনেরা’।

গত বুধবার রাতে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল বেটিস। পাল্টা আক্রমণে রিয়াল রক্ষণপ্রহরীদের কাটিয়ে গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকেও পরাস্ত করেছিলেন অ্যান্তনিও সানাব্রিয়া। কিন্তু দানি কারভাহালের দৃঢ়তায় গোলবঞ্চিত হতে হলো তাকে। তবে আক্রমণে ধার বেশি ছিল রিয়াল মাদ্রিদেরই। বেটিসের বিপৎসীমায় মুহুর্মুহু আক্রমণের পসরা সাজালেও কাজের কাজ গোলটাই করতে পারেনি জিদানের দল। শুধু গোলের সুযোগই নয়, বল দখলের লড়াইয়েও রিয়ালের কাছে পাত্তা পায়নি বেটিস। ম্যাচে ৭০ শতাংশ বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন রোনালদো-বেল-মডরিচরা। কিন্তু তাতে কীই-বা লাভ, সিংহভাগ সময় বল নিয়ন্ত্রণে রেখেও যদি সেটা দলের জয়ের রূপরেখা এঁকে দিতে না পারে!

১৬ মিনিটে দারুণ একটা সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার মডরিচ। ২৭ মিনিটে রোনালদোর শট রুখে দেন বেটিস গোলরক্ষক অ্যান্তনিও আদান। মিনিট তিনেক পর ক্যাসেমিরোর হেড ক্রস বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। ৪২ মিনিটে অতিথি গোলপোস্টের অতন্দ্রপ্রহরীর বীরত্বে ফেরবঞ্চিত রিয়াল। গোল মিসের মহড়ায় শেষ হয় প্রথমার্ধ। ‘আদান দেয়াল’ বিরতির পরও ভাঙতে পারেননি জিদানের শিষ্যরা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ‘সিআর সেভেনে’র ব্যাক হিল ফিরে আসে গোল লাইন থেকে। খানিকবাদে তার নেওয়া আরেকটি দূরপাল্লার শট সেভ করেন বেটিসের শেষ প্রহরী। ৬২ মিনিটে রোনালদো বেটিসের ডি-বক্সে পড়ে গেলে পেনাল্টির আবেদন জানায় রিয়াল। কিন্তু লস ব্ল্যাঙ্কোসদের আবেদনে সাড়া দেননি রেফারি। হতাশার রাতে বেলের পাস থেকে পাওয়া সহজতম সুযোগটিও পোস্টের ওপর দিয়ে পাঠিয়েছেন পর্তুগাল অধিনায়ক। রোনালদো গোল করতে পারেননি এ জন্য নয়, ওয়েলশ উইঙ্গারের হতাশাটা অন্য জায়গায়। ৭৫ মিনিটে যে বেরসিক হয়ে উঠেছিল পরিচিত ক্রসবারটা! বেলের দুর্দান্ত ব্যাক হিল বারে লেগে ফিরে এলে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূরণ হয় রিয়ালের আক্রমণভাগের।

ব্যর্থতার শেষ সিঁড়িটা পেরিয়ে এলেও জিজুর শিষ্যদের ব্যর্থতার জ্বালা বাড়িয়েছেন বেটিসের কুড়ি পাড় হওয়া তরুণ সানাব্রিয়া। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে রিয়ালের জাল কাঁপিয়ে প্যারাগুয়েন স্ট্রাইকার স্তব্ধ করে দেন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুকে। বাকরুদ্ধ ষাট হাজারেরও বেশি দর্শক।

ম্যাচের শেষ বাশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে রিয়াল মাদ্রিদ ৩ পয়েন্টই হারায়নি, বিরল এক অর্জনও হাতছাড়া করেছে। কিকে সেতিয়েনের দলের বিপক্ষে ন্যূনতম পরাজয় ছাপিয়ে আলোচনায় থাকল বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৭৩ ম্যাচ পর গোলবঞ্চিত হওয়াটা। একটা গোল করলেই যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল করা ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্তোসকে ছাড়িয়ে যেতে পারত মাদ্রিদ জায়ান্টরা। তাই আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেটের টানা ৯৬ ম্যাচে গোল করার বিশ্ব রেকর্ডটা নিজেদের করে নিতে নতুন শুরু করতে হবে রিয়াল মাদ্রিদকে।

গত ১৭ মাসে জয়-পরাজয়-ড্র সব অভিজ্ঞতাই ছিল রিয়ালের। কিন্তু এই ম্যাচের আগে এই প্রথম গোল করতে না পারার যন্ত্রণা সইতে হলো রিয়ালকে। নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ার সুযোগ হারানো রিয়ালকে ৫১২ দিন পর গোল না পাওয়ার আক্ষেপ করতে হলো জিদানের দলকে। তবে অপেক্ষা ফুরিয়েছে রিয়াল বেটিসের। ১৯ বছর পর সান্তিয়াগো বার্নাব্যু থেকে জয় নিয়ে ফিরতে পেরেছে তারা। গত ছয় বছরে যে কাজটা বার্সেলোনা এবং অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছাড়া কোনো ক্লাবই করতে পারেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist