ক্রীড়া প্রতিবেদক, দুবাই থেকে

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ব্যর্থতা ঘুচল লিটনের ব্যাটে

সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ধুঁকতে হয়েছে বাংলাদেশ ওপেনারদের। প্রথম পাঁচ ম্যাচের একটিতেও উদ্বোধনী জুটিতে ১৬ রান করতে পারেননি ওপেনাররা। প্রতিটি ম্যাচেই টাইগারদের ২০ রানের মধ্যে হারাতে হয়েছে প্রথম দুই ম্যাচে। কাল দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে চিত্রটা বদলে যায়।

ওপেনারদের ব্যর্থতা ঘুচেছে বড়সড় একটা চমক দিয়ে। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটনের সঙ্গে হাজির হলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নামা এই অলরাউন্ডার রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। জাম্প্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমারের মতো বিশ্বমানের পেসারদের সামলেছেন কী দারুণভাবেই।

তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ঘুরে দাঁড়ানোর আসল নায়ক লিটন। ঠিক সময়েই কাল জ্বলে উঠেছেন টাইগার ওপেনার। ভারতীয় বোলারদের বিপরীতে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন এই ডান-হাতি। ভারতীয়দের বেধরক পিটিয়ে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটা। ৩৩ বলে ছুঁয়েছেন অর্ধশতক।

৫২ রানেই তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কেদার যাদবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে শূন্যে বল তুলে দিয়েছিলেন লিটন। বাংলাদেশ ওপেনারের ক্যাচটা নিতে পারেননি যুজভেন্দ্র চাহাল। তার হাতের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় বলটা। জীবন পেয়ে তা ধারুণভাবেই কাজে লাগিয়েছেন লিটন। হাফ সেঞ্চুরিটিকে রূপ দিয়েছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির জন্য এরচেয়ে সেরা মঞ্চ পেতে পারতেন না লিটন।

ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং লাইন সাজিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট চমক উপহার দিয়েছেন। এরচেয়েও বড় বিস্ময় জাগিয়েছে দুই ওপেনার লিটন ও মিরাজের উদ্বোধনী জুটি। আগের পাঁচ ম্যাচে শুরুতেই ধস নামা বাংলাদেশের চেহারাটাই এদিন পাল্টে দিলেন দুজন। তামিম ইকবালের শূন্যতাটাও দারুণভাবে পুষিয়ে দিয়েছেন তারা।

১২০ রানে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। দুবাইর ২২ গজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ওপর যতটা আগ্রাসী ছিলেন লিটন, মিরাজ ব্যাট চালিয়েছেন ততটাই রয়েসয়ে। ওপেনারদের ব্যর্থতার টুর্নামেন্টে লিটনকে কী সঙ্গটাই না দিয়েছেন মিরাজ! এদিন ধৈর্যশক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন হঠাৎ ওপেনার হয়ে ওঠা এই অলরাউন্ডার।

২১তম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন মিরাজ। ওপেনাররা যেখানে উইকেট দাঁড়িয়েই থাকতে পারেন না, সেখানে থিতু হয়ে দেখিয়েছেন তিনি। ৫৯ বলে ৩২ রানে ফিরেছেন তিনি। কেদার যাদবের বলে কভার পয়েন্টে আম্বাতি রাইডুর হাতে ক্যাচ তুলে দেন মিরাজ।

অবশ্য মিরাজ ফিরে গেলেও ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাই খেলেছেন লিটন। ২৭তম ওয়ানডে ম্যাচে এসে তুলে নিয়েছেন স্বপ্নের প্রথম সেঞ্চুরি। মিরাজের আউটের পর দল যখন হঠাৎ ছন্দ হারিয়েছে তখন দলকে আশার আলো দেখিয়েছেন ডান-হাতি এই ব্যাটসম্যান।

এমন উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার নায়ক লিটনও পথ হারিয়েছেন বাংলাদেশের ইনিংসের প্রায় মাঝপথে। ১২১ রানে জাদবের ঘূর্ণির শিকার হন টাইগার ওপেনার। তাকে স্টাম্পিং করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। বিদায় নেওয়ার আগে ১১৭ বলের ইনিংসে ১২টি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন লিটন।

এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই মিডল অর্ডার বাংলাদেশ দলের ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হয়েছিল। ফাইনালের আগে ওপেনারদের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বোগ প্রকাশ করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও। তবে আস্থা রেখেছিলেন সতীর্থদের ওপর। মিরাজকে উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে রীতিমতো বাজি ধরেছিলেন টাইগার দলপতি। বাজিটা কাজে লেগেছে। আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন লিটন, মিরাজ দুজনই। মিরাজকে জায়গা দিতে গিয়ে ওপেনার সৌম্য সরকারের পজিশন হলো সাত নাম্বারে। নতুন পজিশনে অবশ্য ভালোই করেছেন সৌম্য। লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশ দল যখন ভুগছিল তখন ৩৩ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে ত্রাতার ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন।

ওপেনার এবং নতুনদের জেগে ওঠার ম্যাচে ছন্দ হারিয়েছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, ইমরুল কায়েস, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞরা। লিটনের সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে শেষ অবধি দলীয় সংগ্রহ ২০০ ছাড়িয়েছে টাইগাররা। অথচ বাংলাদেশ ৩০০ ছোঁবে এমনটাই আশা ছিল সমর্থকদের। সেখানে ভারতীয়দের বিপক্ষে ২২২ রানে গুটিয়ে গিয়েছেন মাশরাফি। দুবাইর এই উইকেটে এই রান আগলে রাখাটা অবশ্য কঠিন। শিরোপার জন্য তাই ভারতের গভীর ব্যাটিং লাইনের বিরুদ্ধে অগ্নিপরীক্ষাই দেওয়ার কথা মুস্তাফিজ-মাশরাফিদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close