ক্রীড়া প্রতিবেদক
বোলিংয়ে মাশরাফি-অনিক ব্যাটিংয়ে অশোক-মজিদ-নাঈম
শেষ হয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের রবিন লিগ রাউন্ড। ১২ দলের টুর্নামেন্ট থেকে এরই মধ্যেই বিদায় নিয়েছে ছয়টি দল। সেরা ছয়টি দল টিকিট পেয়েছে সুপার সিক্সের। দলীয় লড়াইয়ের মধ্যে ব্যক্তিগত কিছু নৈপুণ্য বারবার চলে আসছে। বরিন রাউন্ডের ম্যাচগুলো শেষে বোলিংয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে ব্যাট হাতে একক আধিপত্য নেই। পাঁচশোর্ধ্ব রান আছে তিনজনের।
লিগের সর্বোচ্চ পাঁচ উইকেট সংগ্রাহকের চারজনই পেসার। মাশরাফির পরেই আছেন বাঁ-হাতি পেসার কাজী অনিক। তিনে বাঁ-হাতি স্পিনার আসিফ হাসান। চার নম্বরে আছে শফিউল ইসলাম। তার পেছনে আরেক ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ শহীদ।
দল গঠনের সময়ে মাশরাফিকে নিয়েছিল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। লিগ শুরুর আগে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ককে দলে নেয় আবাহনী। প্রাথমিক পর্বে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে দলটির শীর্ষে থাকায় সবচেয়ে বড় অবদান ১৩.২৬ গড়ে ৩০ উইকেট নেওয়া মাশরাফির।
লিগে সবচেয়ে বেশি চারবার ৪ বা তার বেশি উইকেট নেন মাশরাফি। তার সেরা ৬/৪৪। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে টানা চার বলে নেন চার উইকেট। মোহামেডানের ১৯ বছর বয়সী পেসার অনিক ১৯.১০ গড়ে নেন ২৮ উইকেট। তার সেরা ৪৪ রানে ৬ উইকেট। প্রাথমিক পর্বেই শেষ হয়ে গেছে মোহামেডানের লিগ। অনিককে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ অন্যদের সামনে।
লিগের প্রথম হ্যাটট্রিক এসেছিল আসিফের হাত ধরে। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বাঁ-হাতি এই স্পিনার ১৮.২৬ গড়ে নেন ২৩ উইকেট। তার সেরা ৪.২৩। জাতীয় দলে জায়গা হারানো শফিউল লিগে আছেন চেনা ছন্দে। অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের এই পেসার ২৩.৩৬ গড়ে নেন ২২ উইকেট। তার সেরা ৪/৪৮। রূপগঞ্জের পেসার শহীদ ২১ উইকেট নিয়েছেন ২৪.৪৭ গড়ে। তার সেরা ৪/৪১।
প্রাথমিক পর্বে সেরা বোলিংয়ের কৃতিত্ব ইয়াসিন আরাফাতের। এই তরুণ আবাহনীর বিপক্ষে ৪০ রান দিয়ে নেন ৮ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে এটাই বাংলাদেশের কোনো বোলারের সেরা বোলিং। চলতি লিগে দ্বিতীয় সেরা বোলিং মোহাম্মদ শরীফের। ৩৩ রানে ৬ উইকেট নেন রূপগঞ্জের এই পেসার। এবারের লিগে দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক উপহার দেন তিনি।
ঢাকা লিগের এবারের আসরের সবচেয়ে বড় চমক ছিল খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি। এই দলকে প্রথমবারের মতো সুপার সিক্সে নিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় অবদান অশোক মেনারিয়ার। ভারতীয় এই অলরাউন্ডার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। মেনারিয়ার পরে আছেন আবদুল মজিদ, নাঈম ইসলাম, আল আমিন জুনিয়র ও এনামুল হক। মেনারিয়ার ব্যাট থেকে এসেছে সবচেয়ে বেশিÑ সাতটি পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান ৮১.৪২ গড়ে করেন ৫৭০ রান। তার সর্বোচ্চ অপরাজিত ১১৩।
লিগের একাদশ রাউন্ডে মজিদের সামনে সুযোগ ছিল মেনারিয়াকে পেছনে ফেলার। কিন্তু ছন্দে থাকা এই ওপেনার পান গোল্ডেন ডাকের স্বাদ। লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের মজিদ ৫৩.৬০ গড়ে করেন ৫৩৬ রান। তার সেরা ১১০।
রূপগঞ্জের অধিনায়ক নাঈম দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকে। অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ৫৮.৭৭ গড়ে করেছেন ৫২৯ রান। তার সেরা অপরাজিত ১১৬।
মাত্র ৫ রানের জন্য প্রাথমিক পর্বে পাঁচশ রানে যেতে পারেননি আল আমিন জুনিয়র। প্রথম পর্বেই থেমে গেছে তার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। তাই ৪৫ গড়ে ৪৯৫ রানেই থেমে যেতে হল আল আমিন জুনিয়রকে। তার সেরা ১১০।
দল বদলে এনামুলকে নিয়েছিল খেলাঘর। পেসার হাসান মাহমুদকে দিয়ে তাকে দলে নিয়ে আসে আবাহনী। দলকে শীর্ষে নিয়ে যেতে এনামুলের রয়েছে বড় অবদান। ৪৯ গড়ে ৪৯০ রান করেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। তার সেরা ১১৬।
লিগে সবচেয়ে বেশি তিনটি সেঞ্চুরি এসেছে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাট থেকে। কলাবাগান ক্রিকেট ক্লাবের এই ব্যাটসম্যান ৪৬ গড়ে করেন ৪৬০ রান। তার চেয়ে মাত্র ২ রান কম দুটি সেঞ্চুরি করা আবাহনীর নাজমুল ইসলাম শান্তর। চলতি আসরের সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস (১৫০*) খেলেন বাঁ-হাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। মাত্র ৫ ইনিংস খেলেই লিটন দাস করেন ৩৮৬ রান। প্রাইম দোলেশ্বরের এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে দুটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি। লিটনের গড় ৯৬.৫০, সেরা ১৪৩*।
রবিন রাউন্ডে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক
নাম দল ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় সেঞ্চুরি
অশোক খেলাঘর ১১ ৫৭০ ১১৩* ৮১.৪ ১/৬
আব্দুল মজিদ রূপগঞ্জ ১১ ৫৩৬ ১১০ ৫৩.৬০ ১/৬
নাঈম ইসলাম রূপগঞ্জ ১১ ৫২৯ ১১৬* ৫৮.৭৭ ১/৪
আল আমিন প্রাইম ব্যাংক ১১ ৪৯৫ ১১০ ৪৫.০০ ১/৩
এলামুল হক আবাহনী ১১ ৪৯০ ১১৬ ৪৯.০০ ১/৩
রবিন রাউন্ডে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি
নাম দল ম্যাচ উইকেট সেরা গড় ইকো.
মাশরাফি আবাহনী ১১ ৩০ ৬/৪৪ ১৩.২৬ ৪.৩৮
কাজী অনিক মোহামেডান ১১ ২৮ ৬/৪৯ ১৯.১০ ৫.৪১
আফিস হাসান রূপগঞ্জ ১১ ২৩ ৪/২৩ ১৮.২৬ ৪.১১
শফিউল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংক ১১ ২২ ৪/৪৮ ২৩.৩৬ ৪.৯২
মোহাম্মদ শহীদ রূপগঞ্জ ১১ ২১ ৪/৪১ ২৪.৪৭ ৫.০৮
"